সংস্কার দু’বছর আগেই
জাতীয় সড়কে ফের গর্ত, প্রশ্নকাজের মানে
রাস্তা সংস্কারের দু’বছরের মধ্যেই রাস্তা ফের খন্দে ভরা। যাত্রীবাহী বাসও বেসামাল হয়ে উল্টে যাচ্ছে। এ ছবি ওন্দার কাছে ভেদুয়াশোলে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের।
স্বাভাবিক ভাবেই কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বছর দু’য়েক আগে বাঁকুড়ার ধলডাঙা থেকে ওন্দার রামসাগর পর্যন্ত জাতীয় সড়ক চওড়া করার পাশাপাশি সংস্কারের কাজ করা হয়েছিল। সেই রাস্তার নানা অংশের পিচ, পাথর উঠে গিয়েছে। বড় আকারের গর্তে রাস্তা ভরে উঠেছে। জাতীয় সড়কের বেহাল দশায় ক্ষোভ ছড়াচ্ছে যাত্রী থেকে পরিবহণ কর্মীদের মধ্যে। তাঁরা জানিয়েছেন, রামসাগর, দেশেরবাঁধ, খামারবেড়িয়া এলাকায় রাস্তা খুব খারাপ হয়ে পড়েছে। বিশেষত, ওন্দা ও ধলডাঙার মধ্যে চৌকিমুড়া, চন্দ্রকোনা এলাকায় রাস্তা ফেটে গিয়েছে। এই রাস্তার যাত্রীদের ক্ষোভ, “রাস্তাটি রীতিমতো ঢেলে সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে রাস্তার এমন হাল হবে ভাবা যায়নি।”
পূর্ত দফতরের (জাতীয় সড়ক) দুর্গাপুর বিভাগের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শান্তনু দে দাবি, “কিছু এলাকায় রাস্তার নীচে ঢালাইয়ের কাজে গোলমাল রয়েছে। সে কারণেই ওই অংশের রাস্তা মেরামত করার কয়েক বছরের মধ্যে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” বেহাল রস্তায় মাঝে মধ্যেই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। গত শনিবার সকালে কলকাতাগামী একটি বাস উল্টে জখম হন ২৩ জন যাত্রী। মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) শ্যামল মণ্ডল অবশ্য বলেন, “মেজিয়ায় জাতীয় সড়ক সংস্কারে কাজ শুরু হয়েছে। ধাপে ধাপে রাস্তাটির বাকি এলাকাতেও কাজ করা হবে।”
ওন্দার সায়েরবাকড়ার বাসিন্দা তপনকুমার চক্রবর্তী, রামসাগরের বাবলু চৈরা বলেন, “প্রায়ই বাঁকুড়ায় যেতে হয়। খানাখন্দে পড়ে বাস টাল খেতে খেতে চলে। সব সময়েই দুর্ঘটনার আতঙ্ক তাড়া করে। দুর্ঘটনা ঘটলে পথ অবরোধ বা ক্ষোভ বিক্ষোভ হলে রাস্তার খানাখন্দে বড়জোর তাপ্পি দেওয়া হয়। পুরোমাত্রায় সংস্কার কখনও করা হয় না।” অথচ এই রাস্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাঁকুড়া থেকে বিষ্ণুপুর, জয়রামবাটি, কামারপুকুর, আরামবাগ, কলকাতা রুটে বহু বাস চলাচল করে। এই জাতীয় সড়ক বিষ্ণুপুর হয়ে মেদিনীপুরের দিকে গিয়েছে। ফলে মেদিনীপুর, খড়গপুরের গাড়িও এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে।
অন্য দিকে, বাঁকুড়া থেকে মেজিয়া পর্যন্ত এই ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের অবস্থাও ভাল নয়। এই রাস্তা যাঁরা নিয়মিত ব্যবহার করেন তাঁরা জানিয়েছেন, গঙ্গাজলঘাটির দুর্লভপুর এলাকা থেকে মেজিয়া পর্যন্ত রাস্তার বেশ কিছু অংশের মান বেশ খারাপ হয়ে গিয়েছে। বিশেষত, হাঁসপাহাড়ি, দুর্লভপুর, নন্দনপুর, তেওয়ারিডাঙা, তারাপুর এলাকায় রাস্তা গত কয়েক মাস ধরে ভেঙে রয়েছে। মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র লাগোয়া একটি সিমেন্ট কারখানার পাশে রাস্তার অবস্থা খুবই শোচনীয়।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাস্তা গিয়ে প্রতিদিন বাস ছাড়াও মেজিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের মালবাহী প্রচুর ট্রাক, লরি যাতায়াত করে। তাই দিন দিন রাস্তা ভাঙছে। দুর্ঘটনাও বাড়ছে। তাঁদের অভিযোগ, রাস্তায় পাথর, নুড়ি পড়ে থাকছে। গাড়ির চাকায় লেগে পাথর, নুড়ি ছিটকে এসে পথচারী ও রাস্তার পাশের বাসিন্দারা আহত হচ্ছেন। গঙ্গাজলঘাটি বাজার এলাকায় আবার নিকাশি ব্যবস্থা না থাকার জন্য রাস্তার উপরে সারা বছর ধরে জল জমে থাকে।
এই জাতীয় সড়কের উপরে গঙ্গাজলঘাটি ও মেজিয়ার মধ্যে তিনটি জরাজীর্ণ সেতু রয়েছে। অমরকাননে শালি নদীর উপরে, তারাপুরে ও নাগরডাঙায় ওই তিনটি সেতু রয়েছে। ফি বছর একাধিকবার সেতুগুলির কোনও অংশ ভেঙে যায়। তখন কয়েক দিন ধরে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যান চলাচলের মতো সাময়িকভাবে মেরামত করা হয়। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, “ওই সেতুগুলি বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। তা সত্বেও নতুন সেতু তৈরি করা হচ্ছে না। ভারী গাড়ি উঠলেই সেতুগুলি দুলতে থাকে। যে কোনও দিন সেতু ভেঙে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। রানিগঞ্জ থেকে বাঁকুড়ায় বাসে প্রায় দিন যাতায়াত করেন অমল নাগ। তাঁর কথায়, “রাস্তার যা ভয়াবহ অবস্থা, তাতে সব সময় উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকি।” ওই পথের যাত্রী বিকাশ দত্ত, বাসুদেব গরাইরা বলেন, “রাস্তার জন্য বাসে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি হয়। হাত-পা ব্যাথা হয়ে যায়। প্রশাসনের কর্তা থেকে জনপ্রতিনিধিরা এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। তাঁরা রাস্তা সংস্কারে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন?”
বাস চালক জগন্নাথ পাল, বাসের কন্ডাক্টর শ্যামাপদ সিংহেরা বলেন, “রাস্তা খারাপ হওয়ার জন্য ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে হয়। গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হয়ে গেলে যাত্রীরা ঝামেলা করেন। আবার বেশি গতিতে গাড়ি চালালে দুর্ঘটনারও আশঙ্কা থাকে। আমরা কী করব?” জাতীয় সড়কের এই দশা নিয়ে তিতিবিরক্ত শালতোড়ার তৃণমূল বিধায়ক স্বপন বাউরি। তিনি বলেন, “রাস্তার অবস্থা সত্যিই খুব খারাপ হয়ে পড়েছে। ওই তিনটি সেতুও বিপজ্জনক। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাজ মোটেই সন্তোষজনক নয়।” তিনি জানান, বিধানসভার আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে রাস্তাটির সামগ্রিক সংস্কারের দাবি জানাবেন।
পূর্ত দফতরের (জাতীয় সড়ক) দুর্গাপুর বিভাগের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “সাত বছর আগে ওই রাস্তাটি রাজ্য সড়ক থেকে জাতীয় সড়ক হয়। রাস্তাটির অবস্থা এখন খুবই খারাপ। তবে রাস্তাটি সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হয়েছে।” তাঁর আশ্বাস, আগামী মার্চ মাসের মধ্যে রাস্তাটি সংস্কারের কাজ শেষ করা যাবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.