একশো দিনের প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে হিঙ্গলগঞ্জের যোগেশগঞ্জ পঞ্চায়েতের গ্রাম রোজগার সেবকের বিরুদ্ধে। তরুণ দাস নামে ওই ব্যক্তিকে বৃহস্পতিবার সাসপেন্ড করেছেন বিডিও ইন্দ্রকুমার নস্কর। তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হেমনগর উপকূলবর্তী থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন বিডিও। তিনি বলেন, “পুকুর না কেটে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ আসায় তদন্ত শুরু হয়েছিল। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে।” ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, এই পঞ্চায়েতে আরও কিছু আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। সেগুলি নিয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রের খবর, সুন্দরবন-লাগোয়া এই পঞ্চায়েতটি সিপিএম পরিচালিত। ১৫টি আসনের মধ্যে সিপিএম একক ভাবে জয়ী হয়েছিল ১১টিতে। আয়লার সময়ে এলাকার রাস্তাঘাট, নদীবাঁধের প্রচুর ক্ষতি হয়েছিল। মাছ চাষের জন্য মিষ্টি জলের প্রয়োজনে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে পুকুর কাটার সিদ্ধান্ত হয়। সেই কাজ শুরুও হয়েছিল। কিন্তু পুরো কাজ না করেই লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। বাঁধ ও রাস্তার কাজ না করেও টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগও করেন কেউ কেউ। শ্রমিকদের জবকার্ড হাতিয়ে নিয়ে অবৈধ ভাবে টাকা তোলা হয়েছে বলে গত ২০ অক্টোবর থেকে পঞ্চায়েতের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করে তৃণমূল। তাঁদের অভিযোগ, পশ্চিম যোগেশগঞ্জ এলাকার একটি রাস্তার কাজ না করে লক্ষাধিক টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এ দিকে, রাস্তা ও বাঁধ মেরামতির কাজ করেও টাকা পাচ্ছেন না শ্রমিকেরা।
তৃণমূল নেতা গোবিন্দ অধিকারীর বক্তব্য, গরিব খেতমজুরদের ভুল বুঝিয়ে তাঁদের কাঝ থেকে জবকার্ড হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। সই নকল করে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ভুয়ো মাস্টার রোল বানিয়েও লক্ষ লক্ষ টাকা গায়েব করা হয়েছে। বাঁধ সারাইয়ের ক্ষেত্রে আরও বড় বড় দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। বাঁশ, বস্তা না ফেলেই টাকা তোলা হয়েছে। দুর্নীতির পরিমাণ প্রায় ২০ লক্ষ টাকা বলে দাবি করেন তিনি।
অভিযোগ পেয়ে ব্লক প্রশাসন তদন্তে নামে। দেখা যায়, অনেক জায়গায় পুকুর কাটা হয়েছে বলে একশো দিনের প্রকল্পের টাকা তুলে নেওয়া হলেও আদৌ কোনও কাজই হয়নি। আবার কম মাটি ফেলে বেশি বেশি করে দেখানো হয়েছে। এই সব কাজে তরুণবাবু জড়িত বলেও প্রমাণ পায় প্রশাসন।
কী বলছেন অভিযুক্ত?
তরুণবাবুর কথায়, “ভুলবশত একটি পুকুর কাটা হয়নি। অথচ, ওই কাজ বাবদ ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। সে জন্যই বিডিও আমাকে সাসপেন্ড করেছেন। ভুল স্বীকার করেছি। এখন দেখা যাক, বিডিও কী করেন।”
অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে প্রধান মুরারীমোহন মণ্ডল বলেন, “কোনও কোনও সদস্য স্কিম বহির্ভূত ভাবে কাজ করায় কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর ফলে কেউ কাজ করেও টাকা পাচ্ছেন না। কিন্তু এ নিয়ে আমার কিছু করার নেই।” একশো দিনের কাজ বাবদ শ্রমিকেরা প্রায় ৪ লক্ষ টাকা পান বলে জানিয়েছেন প্রধান। সেই টাকা প্রশাসনকে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। |