চোরাপথে বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতীরা ঢুকে কখনও বোমা মেরে, গুলি চালিয়ে খুন, ডাকাতি করে ফের বাংলদেশে পালিয়ে যাচ্ছে। কখনও শহরের মধ্যে দুষ্কৃতীরা পুলিশ কর্মীকে গুলি করে খুন করছে। পাশপাশি একের পর এক চুরি-ডাকাতি লেগেই রয়েছে। কখনও সোনার দোকানে, কখনও মন্দিরের তালা ভেঙে চলছে লুঠপাট। খোদ পুরপ্রধানের বাড়ির মধ্যে মন্দিরে ঢুকে বিগ্রহের সোনার অলঙ্কার চুরির ঘটনা ঘটেছে। ভীষণভাবে বেড়ে গিয়েছে মোটরবাইক চুরি। পর পর কয়েকটি ঘটনা ঘটায় কেপমারদের আতঙ্কে অনেকে ব্যাঙ্ক থেকে বেশি টাকা তুলতে ভয় পাচ্ছেন। সব মিলিয়ে গত মাস ছয়েকের মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ মহকুমায় এমন সব ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে জনমানসে। স্বাভাবিক ভাবেই আইনশৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ তুলে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার দিকে আঙ্ুল তুলেছেন সীমান্তবর্তী এই শহরের বাসিন্দারা।
দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে আতঙ্কিত মহকুমার ব্যবসায়ীরা কিছুদিন আগে এ নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। কিন্তু অবস্থার যে হেরফের হয়নি, তা গত রবিবার বনগাঁ ১ নম্বর রেলগেটের কাছে দুষ্কৃতীদের গুলিতে পুলিশকর্মী তপন ওরফে খোকা ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় দেখা গিয়েছে। বনগাঁর মানুষের দাবি, আইন শৃঙ্খলার এমন অবনতি বহুদিন দেখা যায়নি।
এ ব্যাপারে কি বলছে পুলিশ?
বনগাঁর এসডিপিও জয়ন্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “চুরি ও কেপমারির ঘটনায় খোয়া যাওয়া জিনিস এবং টাকা উদ্ধার করতে পুলিশের একটি বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের ধরতে জোর তল্লাশি অভিযান চলছে।” ক’জনকে এ পর্যন্ত ধরা গিয়েছে জানতে চাওয়া হলে জয়ন্তবাবু বলেন, “এ সব এলাকায় যে সব অপরাধীরা অপরাধ করছে তাদের বেশিরভাগের সঙ্গেই বাংলাদেশের যোগাযোগ রয়েছে। অপরাধ করে অনায়াসে সীমান্ত পেরিয়ে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে যাচ্ছে।” বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “বনগাঁর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ডিজি-র সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করা যায় এ বার পরিস্থিতির উন্নতি হবে।” |
সোনার দোকানে পর পর চুরির ঘটনায় সম্প্রতি বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির তরফে বনগাঁর মহকুমাশাসকের কাছে চুরি, কেপমারি, ইভটিজিং, মাদর বিক্রি বন্ধ করা সহ ১০ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সমিতির পক্ষ থেকে এ সবের বিরুদ্ধে একদিন বন্ধও পালন করা হয়। হীরামহল গলি, বাটার মোড় ও মতিগঞ্জ এলাকায় পর পর সোনার দোকানে চুরির ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকেই ধরতে পারেনি পুলিশ। উদ্ধার হয়নি চুরি যাওয়া অলঙ্কারও। সমিতির সহ-সম্পাদক দিলীপ মজুমদারের অভিযোগ, “পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার জন্যই একের পর এক চুরি, কেপমারির ঘটনা ঘটছে। ব্যবসায়ীরা ব্যাঙ্ক থেকে বেশি টাকা তুলতে সাহস পাচ্ছেন না।”
স্থানীয় গাঁড়াপোতায় একটি কালীমন্দিরে গ্রিলের তালা ভেঙে বিগ্রহের সোনার অলঙ্কার চুরি করে দুষ্কৃতীরা। এর পর বনগাঁর শিমুলতলায় পুরসভার চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না আঢ্যের বাড়ির মন্দির ও ওই এলাকারই বাসিন্দা বনগাঁ শহর যুব তৃণমূল সভাপতি প্রসেনজিত ঘোষের বাড়িতে বড় ধরনের চুরির ঘটনা ঘটে। বলাবাহুল্য কোনওটিরই আজ পর্যন্ত কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। কেপমারির ঘটনাও ঘটছে অহরহ। গত কয়েক মাসের মধ্যে পুরাতন বনগাঁ, আমলাপাড়া, এক নম্বর রেলগেটের কাছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে কেপমারির ঘটনা ঘটেছে। থেমে নেই খুন-জখমও।
বনগাঁর পশ্চিমপাড়া এলাকায় বোমাবাজির পাশাপাশি জয়ন্তীপুরের বাসিন্দা মুদ্রা বিনিময় কারবারি মজনু মণ্ডলকে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা বাড়ির সামনে বোমা মেরে, গুলি করে খুন করে। বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার সময় ওই দুষ্কৃতীরা বিএসএফের উপরেও চড়াও হয়। কিছুদিন আগে সুটিয়ায় বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা এসে বহু দোকান, বাড়িঘরে ভাঙচুর চালায়। এর পাশাপাশি সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে পাচারকারীদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বাসিন্দারা।
ছয়ঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তৃণমূলের সন্তোষ দাস বলেন, “বাড়ির উঠোন দিয়ে পাচারকারীরা যাতায়াত করছে। খেতের ফসল নষ্ট করছে।” পেট্রাপোল সেন্ট্রাল ওয়্যার হাউস কর্পোরেশনের গুদামে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা ঢুকে চুরির করার ঘটনাও প্রায়ই ঘটছে। হঠাৎই দুষ্কৃতীদের এমন বাড়বাড়ন্তে স্থানীয় মানুষের অভিযোগের আঙুল উঠছে পুলিশের দিকেই। বনগাঁ থানার আইসি এবং এসডিপিও পদে সম্প্রতি ঘন ঘন বদলির ফলে পুলিশ প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে বলে তাঁদের ধারণা। |