বদলাচ্ছে নবদ্বীপ। শহরের প্রধান রাস্তা কিংবা অলি-গলি, চেনা ছবিটা একটু একটু করে পাল্টাচ্ছে। ইদিলপুর থেকে পিরতলার কয়েক কিমি লম্বা রাস্তার পাশে হকারদের রমরমা কারবার চোখ এড়াত না। তবে এখন পুরসভার নির্দেশে তাঁরা একে একে পাততাড়ি গোটাচ্ছেন। রাস্তা হকারমুক্ত করতে পথে নেমেছিলেন পুরপ্রধান নিজেই। তার পর থেকেই রাস্তা থেকে সরে যাচ্ছেন অস্থায়ী দোকান বা গুমটির মালিকেরা। যেসব স্থায়ী দোকানের সিঁড়ি, রোয়াক কিংবা পণ্য ঝোলানোর স্ট্যান্ড নেমে এসেছে রাস্তায়, তাঁরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাজপথ থেকে সরে আসার।
পোড়ামা তলা, রাধাবাজার, মহাপ্রভুপাড়া মোড়ের সেই চেনা ছবিটা অনেকটাই পাল্টেছে। ইতিমধ্যেই দখলমুক্ত হয়েছে মহাপ্রভুপাড়া রোড। শহরের বেশিরভাগ মানুষই পুরসভার এই উদ্যোগকে সমর্থন জানাচ্ছেন। পাশাপাশি রাস্তা ছেড়ে চলে যাওয়া হকারদের একটা কিছু ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রসঙ্গও উঠে আসছে। নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা জানিয়েছেন, এই সমস্ত দোকানদারদের অন্যত্র পুনর্বাসনের কথা ভেবেছে পুরসভা।
তারাসুন্দরী গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা চিত্রা মুখোপাধ্যায় বলেন, “স্কুলের সময়ে শহরের প্রতিটি রাস্তায় যানজট নিত্যদিনের ঘটনা। পরীক্ষার সময়ে স্কুলে সময়ে পৌঁছনোর চিন্তা থাকে পড়ুয়ারাও। যাঁদের রাস্তা থেকে তুলে দেওয়া হচ্ছে তাঁদর জন্য বিকল্প রুটি-রুজির কথাও যেন পুরসভা ভাবে।” সনাতন সন্ত সমাজের সভাপতি অদ্বৈত দাস বাবাজি বলেন, “শুধু শহরের প্রধান রাস্তা কেন, এই শহরের প্রতিটি মঠ মন্দিরের সামনের জায়গা যেভাবে দখল করে দোকান এবং রিকশা স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে তাতে চরম অসুবধায় পড়েন পর্যটকেরা। মনে রাখতে হবে পর্যটকের কাছে প্রধান আকর্ষণ নবদ্বীপের এই মঠ মন্দিরগুলোই। সঠিক সময়ে সঠিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি শহরের রিকশা ভাড়ার একটি তালিকা দ্রুত পুরসভার তরফে তরি করে দেওয়া উচিত। না হলে রিকশার কারণে পর্যটকরা নবদ্বীপ বিমুখ হয়ে পড়বেন। পুরকর্তারা রিকশা নিয়ন্ত্রণের কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবুন।” নবদ্বীপের বাসিন্দা, সরকারি আধিকারিক বনানী দাস বলেন, “নবদ্বীপের মতন পুরনো শহরের সংকীর্ণ রাস্তা যখন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে তখন এই উদ্যোগ খুব প্রয়োজন। পাশাপাশি যাঁরা উপার্জনহীন হয়ে পড়ছেন তাঁদের জন্য পুনর্বাসনের কথা পুরসভা নিশ্চয় ভাবছেন।” নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম সাহা বলেন, “রাস্তা দখল যেই করুক--ব্যবসায়ী অথবা রিকশা চালক, তা সমর্থনযোগ্য নয়। পর্যটনের স্বার্থে রাস্তা প্রশস্ত এবং বাধামুক্ত করতেই হবে। পুরসভা পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও রাখছেন।” নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, “পুরসভার আবেদনে সাড়া দিয়ে বেশির ভাগ জায়গাতেই দোকান সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। কয়েকজন অবশ্য বিরোধিতাও করেছেন। ইতিমধ্যে যাদের উঠে যেতে হচ্ছে তাঁরা পুরসভায় এসে আলোচনাও করে গিয়েছেন। পুনর্বাসনের কথা তো আমরা আগেই ঘোষণা করেছি। আগে রাস্তা দখলমুক্ত হোক, তারপর পুরসভার তরফে রিকশার সমস্যা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা হবে।” |