|
|
|
|
ইয়েচুরি-গুরুদাসে ‘বিরোধ’ বাধালেন নিহত কিষেণজি |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
মাওবাদী নেতা কিষেণজির মৃত্যু দুই মেরুতে এনে ফেলল দুই বাম শরিক সিপিএম এবং সিপিআইকে!
সিপিআইয়ের লোকসভার নেতা এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে নির্বাচিত সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত দাবি তুলেছেন, কিষেণজি’কে ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যা করা হয়েছে কি না, তার তদন্ত হোক। গুরুদাসবাবুর দাবি, তাঁর কাছে মেদিনীপুর থেকে স্থানীয় সূত্রে খবর এসেছে, বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় কিষেণজি’কে গ্রেফতার করা হয়। তার পরে ঠান্ডা মাথায় তাঁকে ‘খুন’ করা হয়। পুরো ঘটনার তদন্ত চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে চিঠি দিয়েছেন সিপিআই সাংসদ।
পক্ষান্তরে, সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা রাজ্যসভার সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরির বক্তব্য, কিষেণজি’কে পুলিশ ঠান্ডা মাথায় ‘খুন’ করেছে বলে তাঁর কাছে কোনও খবর নেই। উল্টে মাওবাদী দমন এক কদম এগিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন!
বাম সূত্রের ব্যাখ্যায়, কিষেণজি’র মৃত্যু ভুয়ো সংঘর্ষে হয়েছে, সরাসরি এমন দাবি করা সিপিএমের পক্ষে কিঞ্চিৎ ‘অস্বস্তিকর’। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে যৌথ বাহিনীর হাতে নিহত জনগণের কমিটির নেতা সিদো সোরেন, লালমোহন টুডু এবং মাওবাদী নেতা শশধর মাহাতোর ক্ষেত্রেও একই রকমের অভিযোগ উঠেছিল। এখন কিষেণজি’কে নিয়ে ভুয়ো সংঘর্ষের কথা বলতে গেলে পুরনো ঘটনাগুলির কঙ্কালও টেনে বার করা হতে পারে! তা ছাড়া, বাম জমানায় যৌথ বাহিনীর গুলিতে কিষেণজি আহত হয়েছিলেন বলেও প্রশাসনিক সূত্রের খবর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় সেই যৌথ বাহিনীর গুলিতেই ওই মাওবাদী নেতা নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি ভাল ভাবে না-বুঝে এই নিয়ে তাই আগ বাড়িয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব। ব্যতিক্রম, সিপিএম রাজ্য কমিটির সদস্য ও প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ!
অন্য দিকে, সিপিএমের উপরে
যেমন অতীতের ‘বোঝা’ আছে, সিপিআইয়ের ক্ষেত্রে সরাসরি তা নেই। তাই তারা তুলনায় খোলাখুলি ভাবে মন্তব্য করতে পারছে।
মাওবাদী ‘ঘনিষ্ঠ’ তেলুগু কবি ভারভারা রাও এবং কিষেণজি’র পরিবারের তরফে ইতিমধ্যেই ভুয়ো সংঘর্ষের অভিযোগ উঠেছে। একই দাবি তুলেছে দেশের ২৭টি মানবাধিকার সংগঠনের যৌথ সমন্বয় কমিটি। গুলি বিনিময় হয়েছে কি না, স্থানীয় গ্রামবাসীদের বয়ানের ভিত্তিতে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে বলে জানিয়ে ওই কমিটির দাবি, গোটা ঘটনার স্বাধীন তদন্ত হোক। কার্যত তাঁদের বক্তব্যকেই সমর্থন জানিয়ে সিপিআই নেতা গুরুদাসবাবু শুক্রবার বলেন, “আমি মাওবাদীদের সমর্থন করি না। কিন্তু রাষ্ট্র কখনওই খুনির বিচার না-করে তাকে খুন করতে পারে না। আমি মেদিনীপুরের সাংসদ। সেখান থেকেই খবর পেয়েছি। আমি বলছি না আমার খবর সত্যি। কিন্তু এই ঘটনার স্বাধীন তদন্ত হোক।” এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদম্বরমের সঙ্গে কথা বলেন গুরুদাসবাবু। তার পরে তাঁকে চিঠি পাঠান।
এই বিষয়ে ইয়েচুরিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, অন্য কারও কাছে ‘খবর’ থাকলেও থাকতে পারে। তাঁর কাছে কোনও ‘খবর’ নেই। ইয়েচুরির কথায়, “মাওবাদী দমনে এখন এটাই যদি রাজ্য সরকারের নীতি হয়, তা হলে সে দিকে অগ্রগতি হচ্ছে। এটা খুবই ভাল কথা যে, বর্তমান রাজ্য সরকার আগের সরকারের নীতিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।”
বস্তুত, কিষেণজি’র মৃত্যু নিয়ে দাবি-পাল্টা দাবির ঢেউ উঠেছে রাজনৈতিক দলগুলির তরফে। বামফ্রন্টের বাইরে থাকা বামপন্থী দলগুলি ওই ঘটনা নিয়ে সরব। সিপিআই (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী)-র কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে পটনায় এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কিষেণজি’কে গ্রেফতার করার পরে পুলিশ গুলি করে তাঁকে ‘খুন’ করেছে। এটা রাজ্য সরকারের ‘সংবিধান বহির্ভূত’ কাজ। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, মমতা বিরোধী দলনেত্রী থাকার সময় লালগড়ে গিয়ে কিষেণজি’র সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু এখন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদম্বরম এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতাএই তিন ‘ফ্যাসিস্ত’ শক্তি একজোট হয়ে কিষেণজি’কে হত্যা করেছে।
এসইউসি, সিপিআই (এমএল) লিবারেশন এবং সিপিআই (এমএল) নিউ ডেমোক্র্যাসি দাবি করেছে, কিষেণজি যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মারা গিয়েছেন, না তাঁকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে, তা জানতে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে হবে। এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসু বলেন, “পাঁচ-ছ’ মাস সরকার শান্তি আলোচনা চালিয়েছে ওটাই যথেষ্ট বলে মনে করি না। শান্তি আলোচনা জারি রাখা উচিত এবং ছত্রধর মাহাতোর সঙ্গে সরকারের কথা বলা উচিত।” রাজ্য বিজেপি আবার তদন্তের বিরোধিতা করে যৌথ বাহিনীর কাজের পক্ষেই সওয়াল করেছে। প্রসঙ্গত, সিপিআই (মাওবাদী) আজ, শনি ও কাল, রবিবার রাজ্যে যে বন্ধ ডেকেছে, তাতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখার আর্জি জানিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। |
|
|
 |
|
|