আত্মতুষ্টির অবকাশ নেই |
(কিষেণজি-র) এই মৃত্যু মাওবাদীদের সশস্ত্র কার্যকলাপে সাময়িক ধাক্কা দেবে। তবে ওদের সেকেন্ড, থার্ড-গ্রেড বাহিনী তৈরি থাকে। তাই আত্মতুষ্টি ঠিক নয়। প্রশাসনিক উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। কার সাফল্য, কার অসাফল্য--বড় কথা নয়। ২০১০ সাল জুড়ে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন মানুষ। এ ঘটনা তারই অনিবার্য পরিণতি। আমরা আশা রাখি, ওরা (মাওবাদীরা) বুঝতে পারবে, ভারতে পরিবর্তন ঘটাতে গেলে, গরিব-মেহনতি মানুষের পাশে দাঁড়াতে গেলে---গণতান্ত্রিক আন্দোলনই পথ। সন্ত্রাসের পথ নয়। ওদের নেতা আজাদের মৃত্যু গুলির লড়াইয়ে হয়েছে বলে সরকারি ভাবে যখন জানানো হয়েছিল, তৃণমূল তখন তদন্ত দাবি করেছিল। আর এখন? যতদূর জানি, এক হাজার জওয়ান জঙ্গল ঘিরে রেখেছিল। গুলির লড়াই হয়েছে। ঠান্ডা মাথায় খুন কি না, তৃণমূলই বলতে পারবে! ওরাই অস্থিরতা তৈরি করেছিল। এখন ওদের সরকার। জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরানোর দায়িত্বও তৃণমূলের। সব রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিও জরুরি। |
দীপক সরকার। সম্পাদক, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম। |
|
তৃণমূলই এনেছিল ওদের |
আমার মনে হয় গুলি-যুদ্ধ হয়নি। তা হলে কিষেণজি একা মারা যেত না। ওর সহকারীও তো কেউ মারা যায়নি। জীবিত গ্রেফতার হলে তৃণমূলের সঙ্গে মাওবাদীদের ঘনিষ্ঠতা, নন্দীগ্রামে তৃণমূল-মাওবাদী আঁতাত ফাঁস হয়ে যেত! তৃণমূল ভবনে গিয়েও তো মাওবাদী নেতারা বৈঠক করত। কাঁথি, তমলুকের যারা এখন তৃণমূল সাংসদ তারা ওদের এই জেলায় নিয়ে এসেছিল। দু’পক্ষ মিলে ষড়যন্ত্র করেছিল। সন্ত্রাস করেছিল। জঙ্গলমহলে আমাদের কয়েকশো কর্মী খুন হয়েছেন। তখন তৃণমূলই যৌথ বাহিনী প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিল। আর এখন ওরাই যৌথ বাহিনীকে ব্যবহার করছে! ওখানেও তৃণমূল-মাওবাদী মিলে বামপন্থী কর্মীদের ঘর ছাড়া করেছে। তৃণমূল নেতারা তো এখন নিজেরাই বিচারকের আসনে বসে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে। কারা জেলে যাবে, কারা গ্রেফতার হবেতাও বলে দিচ্ছে! |
লক্ষ্মণ শেঠ। প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, তমলুক। |
|
|
|
ভুল পথে সরকার |
দু’-এক জন খুন হলেই জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরবে না। ঠান্ডা মাথায় খুন, না কি লড়াইয়ে মৃত্যু--জানি না। তবে গুলি করে মারা হলে সেটা তো খুনই। এ বার সরকার বলতে পারে, ওরা আগে গুলি চালিয়েছে বলেই যৌথ বাহিনীকে গুলি ছুড়তে হয়েছে। রাজ্য সরকার যে পথে যাচ্ছে, সেটা ভুল। এ পথ কংগ্রেস-সিপিএমের। এখন সে পথেই তৃণমূল এগোচ্ছে। মাওবাদীদের পথও যে ঠিক নয়, সেটাও আমরা বলেছি। এ ভাবে শ্রেণি-সংগ্রাম হতে পারে না। আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সু্ষ্ঠু সমাধান সম্ভব। জনগণের কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতো এখনও জেলে রয়েছেন। মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া কাউকেই মুক্তি দেওয়া হয়নি। সরকারের উচিত, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে উদ্যোগী হওয়া। মিথ্যা মামলায় যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের মুক্তি দেওয়া। |
অমল মাইতি। সম্পাদক, পঃ মেদিনীপুর জেলা এসইউসি। |
|
স্থানীয় মানুষের কৃতিত্ব |
|
এই মৃত্যু জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি বদলাতে পারবে কি না, তা ভবিষ্যতই বলবে। তবে, রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে যে ভাবে সশস্ত্র হামলা হচ্ছিল, তা ক্ষণিকের জন্য হলেও স্তব্ধ হল। এটা সরকারের বড় সাফল্য। স্থানীয় মানুষের কৃতিত্ব রয়েছে। গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলে, যৌথ বাহিনীর সঙ্গে ছিলেন বলেই এই সাফল্য এসেছে। |
স্বপন দুবে। সভাপতি, পঃ মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেস। |
|
ভয় কাটছে মানুষের |
জঙ্গলমহলের মানুষ শান্তি ও উন্নয়নের পক্ষে। এই এলাকায় শান্তি ফিরবেই। যাঁদের ভুল বুঝিয়ে ওরা নিয়ে গিয়েছিল, তাঁরা সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসছেন। কিষেণজি বহু নাশকতায় যুক্ত। পুলিশ পুলিশের কাজ করবে। রাজ্য সরকারও এই এলাকায় শান্তি ফেরাতে উদ্যোগী। সরকারের আবেদনে মানুষ সাড়া দিচ্ছেন। আমরাও রাজনৈতিক কর্মসূচি সংগঠিত করছি। জঙ্গলমহলের মানুষ আর ওদের পাশে নেই। ইতিমধ্যেই তা প্রমাণিত। ভয়ভীতি ঝেড়ে ফেলে আমাদের দলের মিটিং-মিছিলে বহু মানুষ অংশ নিচ্ছেন। |
দীনেন রায়। সভাপতি, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল। |
|
|
|
বিচারবিভাগীয় তদন্ত চাই |
|
সম্ভবত ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে মাওবাদী নেতাকে। আমরা বিচারবিভাগীয় তদন্ত চাই। এর ফলে জঙ্গলমহলের শান্তি প্রক্রিয়া অবশ্যই ধাক্কা খেল। |
অশোকজীবন ঘোষ। সম্পাদক, সন্ত্রাস ও আগ্রাসন-বিরোধী মঞ্চ। |