সম্মেলন ছেড়ে যাওয়ার নজিরও এ বার সিপিএমে
চসা, তর্ক, পার্টি নেতৃত্বকে দোষারোপ, দাবি, পাল্টা দাবি, শেষ বেলায় আলোচনা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া— নজিরবিহীন এ সবই ঘটে চলেছে সিপিএমের মেদিনীপুর শহর লোকাল কমিটিগুলির সম্মেলনে। কয়েকটি ক্ষেত্রে দলীয় নেতৃত্বকে এমনও বলতে হয়েছে, ‘আপনারা শান্ত হোন। এ ভাবে সম্মেলন চলতে পারে না’। সিপিএমের সম্মেলনে যা অভূতপূর্ব।
নতুন কমিটিতে কে থাকবেন, কে থাকবেন না— সে নিয়েও বচসা চরমে উঠছে। শহরের সিপিএম নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। কিছু কথা কাটাকাটি হয়ে থাকতে পারে। দলের শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক কীর্তি দে বক্সীর বক্তব্য, “গোলমালের খবর ঠিক নয়। সম্মেলনে প্রত্যেকেই নিজেদের মতপ্রকাশ করতে পারেন। তাই করেছেন।” সম্মেলনগুলিতে পার্টি-সদস্যদের একাংশের গরহাজিরাও দলীয় নেতৃত্বের বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে। লোকাল কমিটির এক নেতার কথায়, “১৫ থেকে ২০ শতাংশ পার্টি-সদস্য সম্মেলনে গরহাজির ছিলেন।” জোনাল নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, কেউ কেউ জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেননি।
মেদিনীপুর শহর জোনালের অন্তর্গত ৬টি লোকাল কমিটির সম্মেলন-পর্ব শুক্রবারই শেষ হয়েছে। শহরের বক্সীবাজারে এ দিন ৫ নম্বর লোকাল কমিটির সম্মলেন ছিল। সন্ধে পর্যন্ত আলোচনা চলে। আগেই অন্য ৫টি লোকাল কমিটির সম্মেলন হয়ে গিয়েছে। এই পাঁচটির দু’টিতে সম্পাদক পরিবর্তন হয়েছে। ২ নম্বর কমিটির সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অমল মুখোপাধ্যায়কে। নতুন সম্পাদক হয়েছেন সুকুমার আচার্য। সুকুমারবাবু পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী। অন্য দিকে, ৩ নম্বর কমিটির সম্পাদকের পদ থেকে সরতে হয়েছে কমল ঘোষকে। তাঁর জায়গায় এসেছেন কিরণ প্রামাণিক। কিরণবাবু প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। অমলবাবু ও কমলবাবু দীর্ঘ দিন ধরে সম্পাদক ছিলেন। প্রথম জনের বিরুদ্ধে ‘অনুচিত কাজকর্ম’ এবং সাধারণ কর্মীদের মতকে গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ অনেক দিন ধরেই উঠেছে। কমলবাবুকে মূলত সরতে হয়েছে দীর্ঘ দিন একই পদে থেকে যাওয়ার কারণেই। নতুন মুখ আনার দাবি অনেক দিন ধরেই উঠছিল।
দলীয় সূত্রে খবর, ১ও ৬ নম্বর লোকাল কমিটির সম্মেলনেই সবথেকে বেশি বচসা হয়েছে। ১ নম্বর কমিটির সম্পাদক পদে বহাল রয়েছেন ধনেশ্বর মঙ্গল। গত বার সারদা চক্রবর্তীকে সরিয়ে সম্পাদক করা হয়েছিল কালাচাঁদ বোসকে। অভিযোগ, জেলার ক্ষমতাসীন-শিবিরের লোক নন বলেই সারদাবাবুকে সরানো হয়েছিল। এ বার তাঁকে লোকাল কমিটির সদস্যও করা হয়নি। কালাচাঁদবাবুও আগেই সম্পাদকের পদ থেকে সরে যান। তাঁর জায়গায় ধনেশ্বরবাবুকে মনোনীত করা হয়। তার পরেও এলাকায় পার্টির কাজকর্ম নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তাও, নতুন কাউকে সম্পাদক না-করায় দলের অন্দরে সমালোচনা শুরু হয়েছে। একই ভাবে ৬ নম্বর লোকাল কমিটির সম্পাদক পদে পুনর্বহাল রয়েছেন নন্দ সাঁতরা। এখানে প্রভাত অধিকারীকে লোকাল কমিটির সদস্য না-করায় ক্ষোভ দেখা দেয়। একাংশ কর্মী শেষবেলায় আলোচনা ছেড়ে বেরিয়ে যান বলেও দলীয় সূত্রে খবর। প্রভাতবাবু মেদিনীপুর পুরসভার কাউন্সিলর ছিলেন। দলবিরোধী কাজের অভিযোগে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। একাংশ কর্মী অভিযোগ করেন, নেতৃত্ব এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্থানীয়স্তরে আলোচনাও করেননি। ৪ নম্বর লোকাল কমিটির পদে পুনর্বহাল রয়েছেন গোপাল ভট্টাচার্য। গোপালবাবু মেদিনীপুর পুরসভার বিরোধী দলনেতা।
লোকাল কমিটির সম্মেলনগুলিতে নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দেগে সাধারণ সদস্যরা অভিযোগ করেন, একাংশ কর্মী নিষ্ক্রিয় হয়েও নেতাদের ধরে থেকে যাচ্ছেন। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে পার্টি-নেতৃত্বের সম্পর্ক থাকছে না। পার্টির মুখপত্রের গ্রাহক-সংখ্যা কমছে। নেতৃত্বের কোনও পদক্ষেপ নেই। এ বারের সম্মেলনে বিগত সম্মেলনগুলির তুলনায় আড়ম্বর কমেছে লক্ষণীয় ভাবে। গতবারও সম্মেলনের আগে এলাকায় সাজো সাজো রব পড়ে যেত। চার দিকে ব্যানার, ফেস্টুন, পতাকা টাঙানো হত। দেওয়াল লেখা হত। সম্মেলন শেষে বড় মিষ্টির প্যাকেট দেওয়া হত। এ বার এতকিছু ছিল না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.