দক্ষিণ কলকাতা
পুর-উদ্যোগ
মিটবে তৃষ্ণা
র্যাপ্ত জল না পাওয়ার ফলে ওয়াটগঞ্জ এলাকায় পানীয় জল সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাই এলাকায় পর্যাপ্ত জলের যোগান দিতে পুর-কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি নতুন জলাধার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য কলকাতা পুরসভা বন্দর কর্তৃপক্ষেরও সাহায্য চেয়েছেন।
কলকাতা পুরসভার মেয়র তথা পুরসভার জল দফতরের মেয়র পারিষদ শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওয়াটগঞ্জ পাম্পিং স্টেশনে অপরিশোধিত পর্যাপ্ত জল তোলার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। সেই কারণে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে পরিশোধিত পানীয় জল সরবরাহে ঘাটতি থাকছে। জল তোলার ক্ষেত্রে ঘাটতি যাতে না থাকে সেই কারণে গঙ্গার ধারেই পুরসভা নতুন একটি জায়গা থেকে জল নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমতির জন্য পুরসভা তাঁদের জানিয়েছে। এই পরিকল্পনা শেষ হলে এই অঞ্চলে জলের ঘাটতি থাকবে না।” বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কলকাতা পুরসভার চিঠি পাওয়া গিয়েছে। বন্দর এবং পুরসভার আধিকারিকেরা যৌথ ভাবে জায়গা পরিদর্শন করবেন। তার পরেই পুরসভাকে জলাধার নির্মাণের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ জায়গা হস্তান্তর করবেন।
ওয়াটগঞ্জ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে পানীয় জল সরবরাহের ক্ষেত্রে সমস্যা কোথায়?
ওয়াটগঞ্জ পাম্পিং স্টেশনে গঙ্গার অপরিশোধিত জল তুলে তা পাইপলাইনের মাধ্যমে কাছেই ট্রিটমেন্ট প্লান্টে নিয়ে গিয়ে পরিশোধন করা হয়। এর পর এই পরিশোধিত জল পুরসভার ৭৫, ৭৬, ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডের পুরো অংশে এবং ৭৮ ও ৭৯ নম্বর ওয়ার্ডে আংশিক সরবরাহ করা হয়। ফলে হেস্টিংস, ওয়াটগঞ্জ ও কবিতীর্থ-সহ বন্দর এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পানীয় জলের সমস্যা অনেকটাই কমেছিল। এই ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে এলাকায় দৈনিক ৫০ লক্ষ গ্যালন পরিশোধিত জল সরবরাহ করা হয়। এই জল সরবরাহ করার জন্য অন্তত এর দ্বিগুণ অপরিশোধিত জল তুলতে হবে।
পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের এক আধিকারিক জানান, গত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে পরিশোধিত ৫০ লক্ষ গ্যালন সরবরাহ করার জন্য গঙ্গা থেকে যে পরিমাণ জল তোলা প্রয়োজন তা উঠছে না। কারণ, গঙ্গায় ভাটার সময় জলতল এত কমে যাচ্ছে যে দিনে প্রয়োজনীয় জল তোলা সম্ভব হচ্ছে না। কেবলমাত্র জোয়ারের সময় এই জল তোলা সম্ভব। সেই কারণেই পুরকর্তৃপক্ষ বিকল্প ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই মুহূর্তে ৫০ লক্ষ গ্যালনের পরিবর্তে ৩০ লক্ষ গ্যালনের মতো পানীয় জল প্রতি দিন উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে বলে এই আধিকারিক জানান।
কলকাতা পুরসভার জল দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল বিভাস মাইতি বলেন, “অপরিশোধিত জলের যোগান ঠিক রাখতে গেলে আমাদের একটি জলাধার নির্মাণের প্রয়োজন। কিন্তু তার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। জলাধার নির্মাণের জন্য জায়গা পেতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে পুরসভা। অনুমতি পেলেই কাজ শুরু হবে। জোয়ারের সময় জল তুলে এই জলাধারে রাখা থাকবে।”
৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর বিলকিস বেগম বলেন, “আমার ওয়ার্ডেই এই ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। এই প্লান্ট থেকেই আমার ওয়ার্ড-সহ আশপাশের এলাকায় জল সরবরাহ হয়। কিন্তু এখন জলের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা অসুবিধায় পড়েছেন। আমি মেয়রের কাছে এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি। এমনকী, পুরসভার অধিবেশনেও এই ব্যাপারে জানিয়েছি।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ইংরেজ আমলেই ওয়াটগঞ্জে এই পাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা হয়। এই পাম্পের মাধ্যমে গঙ্গার অপরিশোধিত জল তুলে রাস্তা ধোওয়ার কাজে ব্যবহার করা হত। সে সময় ঘোড়াকে জল খাওয়ানোর জন্যও শহরের বিভিন্ন রাস্তায় এই জল তোলা হত। পরবর্তী কালে ওয়াটগঞ্জের পাম্প কোনও কাজেই আসত না।
২০০০ সালে তৎকালীন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায় এই পাম্পিং স্টেশনের জল ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে পরিশোধিত করে এলাকায় সরবরাহের পরিকল্পনা করেন। তবে, এলাকায় ট্রিটমেন্ট প্লান্টের জন্য জায়গা পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল। এই ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ফৈয়াজ আহমেদ খানের উদ্যোগে সেই সময় ট্রিটমেন্ট প্লান্টের জন্য জায়গার ব্যবস্থা করা হয়। প্রকল্পের কাজও শুরু হয়। ২০০৫ সালে কলকাতা পুরসভা এই ট্রিটমেন্ট প্লান্ট চালু করে।

ছবি: পিন্টু মণ্ডল




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.