দক্ষিণ কলকাতা: গড়িয়া, সোনারপুর
বাইপাস
বিস্তারে বাধা
ড়িয়া থেকে বারুইপুর যাবেন দুই মোটরবাইক আরোহী।
মেন রোডের তীব্র যানজট এড়াতে তাঁরা নতুন বাইপাস ধরে এগোচ্ছেন বারুইপুরের দিকে। কিন্তু কিছু দূর এগিয়েই থমকে যেতে হল তাঁদের। বাইপাস যে আর এগোয়নি তা তাঁরা জানতেন না। দখলদারির জন্য অবশেষে ঘুরে ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছতে হল তাঁদের। বস্তুত, বিভিন্ন জটে কাজ আটকে থাকার জন্য কামালগাজি থেকে বারুইপুর পদ্মপুকুর পর্যন্ত বিস্তৃত বাইপাসে এই ভাবেই দিনের পর দিন নাজেহাল হচ্ছেন পথচারীরা।
প্রকল্পের প্রস্তাব অনুযায়ী, কামালগাজি থেকে বারুইপুর পদ্মপুকুর পর্যন্ত নির্মীয়মাণ এই রাস্তা কলকাতার ইএম বাইপাসের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা। এলাকার বাসিন্দারা মনে করেন, এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে গড়িয়া, সোনারপুর, বারুইপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার পরিবহণ মানচিত্রটাই বদলে যাবে। এলাকার স্নেহাশিস রায়ের কথায়: “নতুন রাস্তার সঙ্গে বাইপাসের সংযুক্তির কথা অনেক দিন ধরেই শুনে আসছি। কিন্তু কবে তা হবে জানি না।”
কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) সূত্রে জানা গিয়েছে, কামালগাজি থেকে বারুইপুর পদ্মপুকুর পর্যন্ত নির্মীয়ামাণ বাইপাসের সিংহভাগ কাজই হয়ে গিয়েছে। আর যে যে সমস্যার জন্য বাইপাসটি আটকে আছে তার সুরাহার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি এবং পুর প্রতিনিধিদের সঙ্গে এরই মধ্যে বৈঠক করেছেন কেএমডিএ-র আধিকারিকেরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত তিনটি জটে আটকে রয়েছে কামালগাজি থেকে পদ্মপুকুর পর্যন্ত নির্মীয়মাণ বাইপাসটি। দখলদারি ছাড়াও প্রস্তাবিত বাইপাসের ধারে ধর্মীয় স্থান এবং অভয়ারণ্যের একটি অংশ পড়েছে। কেএমডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে ধর্মীয়স্থান সংক্রান্ত সমস্যার অনেকটাই সুরাহা হয়ে গিয়েছে। অভয়ারণ্যের অংশ নিয়েও খুব একটা সমস্যা হবে না বলে কেএমডিএ-র আধিকারিকরা মনে করছেন। কিন্তু দখলদারির সমস্যার সুরাহা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তাঁরা।স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নরেন্দ্রপুর, জগদ্দল এবং চাঁদপুরের কাছে দখলদারির সমস্যা দীর্ঘ দিন ধরে রয়েছে। রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের অমিতাভ চৌধুরী বলেন, “আমাদের পুর এলাকায় যে সব জায়গায় দখলদারির জন্য বাইপাস আটকে আছে আমরা তা চিহ্নিত করেছি। দখল করে থাকা ১৫২টি পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।”
তবে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সমস্যার সমাধান নিয়ে কয়েকটি স্তরে বৈঠক হওয়ার পরেও কাজের অগ্রগতি সে ভাবে হয়নি। দুই বাইপাসের সংযুক্তির জন্য বৃজির কাছেও কেএমডিএ-র তৈরি সেতু দীর্ঘ দিন ধরে পড়ে রয়েছে বলে এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ। কেএমডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সেতু চালু করার ক্ষেত্রেও দখলদারির সমস্যা রয়েছে।
রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং জেলা পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য সিপিআইয়ের তড়িৎ চক্রবর্তী বলেন, “বাইপাস সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কেএমডিএ-র প্রতিনিধিরা আলোচনা করেছেন। বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে সবিস্তার কথা হয়েছে। কিন্তু ওই কথার পরে আর তেমন কাজ এগোয়নি। বছর দু’য়েক আগে যা কাজ হয়েছিল তাই হয়ে আছে। নতুন করে বাইপাসের কোনও কাজ হয়নি।” বারুইপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের শক্তি রায়চৌধুরী বলেন, “এই প্রকল্প নিয়েছিল আগের সরকার। তার মধ্যে অনেক ভুল ছিল। আমরা সেই ভুল শুধরে দ্রুত সমস্যার সমধান করব।” পাশাপাশি, কেএমডিএ-র জনসংযোগ আধিকারিক সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রকল্পটি যখন শুরু হয়েছিল তখনই অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কিছু সমস্যা ছিল। সেই সমস্যাগুলি কাটিয়ে এখন দ্রুত কাজ হচ্ছে।”

ছবি: পিন্টু মণ্ডল




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.