|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা |
মেলার জটে |
শুধু খেলা নয় |
কাজল গুপ্ত |
শীত এলেই বেশ কয়েকটি মেলাকে কেন্দ্র করে রীতিমতো উৎসবের চেহারা নেয় বিধাননগর। এ বার অবশ্য ব্যতিক্রম। সেন্ট্রাল পার্কের পাশে স্থায়ী মেলা প্রাঙ্গণে আপাতত কোনও মেলা হচ্ছে না। বদলে ব্লকের পার্কের মাঠে চলছে মেলা ও অন্যান্য অনুষ্ঠান। এই নিয়ে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা কেউ মেলার বিরোধী নন। কিন্তু স্থায়ী মেলাপ্রাঙ্গণ থাকা সত্ত্বেও কেন খেলার মাঠে মেলা হচ্ছে? পাশাপাশি, সবুজ ধ্বংস হবে জেনেও কেন মেলার অনুমতি দিল প্রশাসন? জবাবে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর জানিয়েছে, স্থায়ী মেলা প্রাঙ্গণে মেলা হবে। তবে যে কাউকে অনুমতি দেওয়া হবে না। শুধুমাত্র সরকারি উদ্যোগে ও পরিচিত সংস্থাকে মেলার অনুমতি দেওয়া হবে। যদিও বিধাননগর পুরকর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে ব্লকের খেলার মাঠে কোনও মেলার অনুমতি দেওয়া হবে না।
এক দিকে বিএ-সিএ ব্লকের পার্ক-খেলার মাঠে যখন মেলা চলছে তখন ইসি ব্লকের পার্কের মাঠ ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়েছে আরও একটি অনুষ্ঠান। এই নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, যে মাঠে খেলা হয়, তা ব্লকের মধ্যে একমাত্র সবুজ অংশ। বিশেষত, বিএ-সিএ ব্লকের মাঠে নিয়মিত ক্রীড়াচর্চা হয়। সেখানে কী করে পুরকর্তৃপক্ষ মাঠে দশ দিনের জন্য এই ধরনের অনুষ্ঠানের অনুমতি দেন? |
|
বিএ-সিএ ব্লকের মাঠটি বিধাননগরের পুরনো খেলার মাঠ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই মাঠে হাঁটাচলার জন্য বাঁধানো রাস্তা করা হয়েছিল। প্রবীণ নাগরিক থেকে শুরু করে অন্য বাসিন্দারাও এই মাঠে রোজ সকাল-সন্ধ্যায় হাঁটাচলা করেন। সেই রাস্তার অংশটুকু মেলার প্রস্তুতির জন্য নষ্ট হয়েছে। মাঠের বিভিন্ন অংশে লাগানো গাছ নষ্ট হয়েছে। মাঠ জুড়ে স্টল, বিদ্যুতের খুঁটি পোতা হয়েছে।
এই মাঠের পাশেই দু’টি স্কুল আছে। যেখানে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত স্কুল চলে। কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী পড়ে সেখানে। ফলে বহু গাড়িও যাতায়াত করে। ব্লকের মধ্যে তীব্র যানজট হয়। এর আগেও বাসিন্দারা এই সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন প্রশাসনকে। পরে প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়। মেলা চলায় গাড়ির সংখ্যা আরও বেড়েছে। পরিস্থিতি আরও সঙ্গীন হয়েছে মেলার লোকেদের প্রাকৃতিক কাজকর্মে। মেলার মাইকের আওয়াজে শব্দদূষণও হচ্ছে বলে তাঁদের অভিযোগ। স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানান, স্কুল সংলগ্ন মাঠের অংশে মেলা হচ্ছে না। উল্টো দিকে হচ্ছে। তবে মাইক বাজলে সমস্যা হয়।
বিএ ব্লক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য প্রসেনজিৎ সাহা বলেন, “বিধাননগরের সবচেয়ে পুরনো এই খেলার মাঠে বিভিন্ন স্কুলের বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে জেলার বিভিন্ন খেলাও নিয়মিত হয়। মাঠের অন্য অংশেও খেলা হয়। মাঠের খুব ক্ষতি হল। কে দায় নেবে?” স্থানীয় ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের স্নিগ্ধা মজুমদার বলেন, “এই বিষয়ে চেয়ারপার্সনই বলতে পারবেন।” যদিও ওই মেলার উদ্বোধন করতে এসে সাংসদ থেকে মন্ত্রীরা এই মাঠের সংস্কারে আর্থিক সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। |
|
অনুরূপ অভিজ্ঞতা ইসি ব্লকের পার্কের মাঠেও। এখানেও মাঠের পাশে আছে স্কুল। পুরো মাঠটি ঘিরেই হয়েছে একটি অনুষ্ঠান। কয়েক জন পুরকর্মীর বক্তব্য, যেহেতু সম্পত্তি কর আদায় বন্ধ হয়ে আছে, তাই মাঠ ভাড়া দিয়ে পুরসভা আয় বাড়াচ্ছে। পুরকর্তাদের একাংশের মতে, স্থায়ী মেলাপ্রাঙ্গণে মেলার অনুমতি দেয়নি নগরোন্নয়ন দফতর। এই অবস্থায় বিধাননগরের মধ্যেই কোথাও মেলার অনুমতি দিতে হবে। তা ছাড়া, পুরসভার আয়বৃদ্ধিরও বিষয় আছে। যদিও বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিভাবান ও দুঃস্থ শিল্পীদের কাজ নিয়ে মেলা। এমন মহৎ কাজ বন্ধ করা যায় না। ফলে এ বারের মতো অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে খেলার মাঠে মেলা হলে বাসিন্দাদের সমস্যা হয়, মাঠও নষ্ট হয়। তাই ভবিষ্যতে খেলার মাঠে মেলার অনুমতি দেওয়া হবে না।” রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “স্থায়ী মেলাপ্রাঙ্গণে মেলা হবে। তবে যে কাউকে মেলার অনুমতি দেওয়া হবে না। শুধুমাত্র সরকারি উদ্যোগে ও পরিচিত সংস্থাকে মেলার অনুমতি দেওয়া হবে।”
|
ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ |
|
|
|
|
|