|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসাত |
সুরাহা কবে |
উধাও চিকিৎসা |
প্রসেনজিৎ পাঠক |
উন্নতির সরকারি ঘোষণা সত্ত্বেও পরিকাঠামো ও পরিষেবার নিরিখে পিছিয়ে রয়েছে রাজারহাট ব্লকের রেকজোয়ানি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে রাজারহাট-বিষ্ণুপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত এলাকার এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিই সরকারি চিকিৎসার একমাত্র কেন্দ্র। কয়েক বছর আগে এটিকে গ্রামীণ হাসপাতাল স্তরে উন্নীত করার কথা ঘোষণা হলেও বাস্তবে এর বিশেষ উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর মতে, এর ফলে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবায় সরকারি উদ্যোগ রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই।
রেকজোয়ানি বা রাজারহাট ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি রাজারহাটের অসংখ্য গ্রামবাসীর কাছে বিনামূল্যের একমাত্র সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র। দৈনিক গড়ে তিনশো থেকে চারশো রোগী এর বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য আসেন। দৈনিক গড়ে দু’জন প্রসূতির সন্তান প্রসব হয় এখানে। রোজ ভর্তি থাকেন দশ থেকে বারো জন রোগী। দুপুরে বহির্বিভাগের সময় ছাড়াও সারা দিন, এমনকী, রাতেও কোনও কোনও সময় রোগীরা জরুরি বিভাগে আসেন। দীর্ঘ দিন বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকার পরে কয়েক বছর আগে প্রায় ৪৩ লক্ষ টাকা খরচ করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির সংস্কার করা হয়। তার পরে পরিষেবা চালু করার সময় সরকারি ভাবে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে ৩০ শয্যাবিশিষ্ট একটি গ্রামীণ হাসপাতালের স্তরে উন্নীত করার কথা ঘোষণা করা হয়। তবে এর কয়েক বছর পরেই এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেন, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গ্রামীণ হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না। বহু লক্ষ টাকা ব্যয় করে সংস্কারের পরে ৩০ শয্যার ব্যবস্থা করা হলেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বর্তমান যা অবস্থা তাতে পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং পরিষেবার ক্ষেত্রে এখনও বিশেষ উন্নতি হয়নি বলেই অভিযোগ। |
|
সম্প্রতি এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য একটি নতুন অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া গেলেও এক জন চালককেই ২৪ ঘণ্টা তার পরিষেবার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে, রাতবিরেতে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের অন্যত্র নিয়ে যেতে অসুবিধা হতে পারে বলে আশঙ্কা রোগীর পরিজনদের। ১১ বিঘা জমির উপর তৈরি ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কোনও সীমানা পাঁচিল নেই। নেই কোনও নিরাপত্তারক্ষীও। ফলে রাতে ওই চত্বরে নানা রকম অসামাজিক কাজকর্ম হয় বলেও অভিযোগ। এ ছাড়া, জেনারেটর না থাকায় দীর্ঘ ক্ষণ লোডশেডিং হলে ইনভার্টার অকেজো হয়ে হাসপাতাল অন্ধকার হয়ে যায়। ব্যবস্থা নেই এক্স-রে, ইসিজি-র। অবশ্য ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি, এই ধরনের হাসপাতালে এক্স-রে এবং ইসিজি-র কোনও ব্যবস্থা থাকে না।
সংস্কারের পরেই এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রজেক্ট’-এর অধীন রোগীদের জন্য স্বল্প ব্যয়ে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। তবে দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে তা-ও। ফলে গ্রামীণ দুঃস্থ রোগীদের সমস্যার সম্মুখীনহতে হচ্ছে। সাধারণত বহির্বিভাগে দৈনিক তিনশো-চারশো রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন মাত্র এক জন চিকিৎসকই। তা-ও অন্তর্বিভাগের রোগীদের দেখার পরে। সেই কারণে বহির্বিভাগের সব রোগীর স্বাস্থ্যপরীক্ষা ভাল ভাবে হয় না বলেই অভিযোগ।
রাজারহাট পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি গৌরপদ দাসের অভিযোগ, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক শ্রেণির চিকিৎসক রোগীদের প্রতি আন্তরিক নন। তাঁরা রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অধিকাংশ দিনই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকেন না। এ নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরে জানিয়েছি।” এই অভিযোগ প্রসঙ্গে রাজারহাট ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবরাজ সরকার বলেন, “চিকিৎসকেরা সবাই নতুন। তাই হয়তো রোগীদের সঙ্গে আন্তরিকতার সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ঠিক নয়। আমাকে স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন বৈঠকে যেতে হয়। তাই অনেক সময় হাসপাতালে হাজির থাকতে পারি না।” |
|
রেকজোয়ানি স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি থেকে প্রায় ঢিল ছোড়া দূরত্বে রয়েছে নির্মীয়মাণ রাজারহাট উপনগরী। রাজারহাট ব্লকের হাজার হাজার মানুষের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী হাড়োয়া, ভাঙড় ব্লকের বিভিন্ন এলাকা থেকে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী আসেন। এলাকাবাসীর বক্তব্য, এই কারণেই সার্বিক ভাবে এর পরিকাঠামো উন্নয়নের যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। রাজারহাট নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক অসিত চট্টোপাধ্যায়ের কথায়: “নির্মীয়মাণ আন্তর্জাতিক মানের শহরের কাছাকাছি এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে সরকারি ভাবে ৩০ শয্যাবিশিষ্ট একটি গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি ছিল। উন্নয়নের কিছু কাজ হলেও পরিকাঠামোর সার্বিক কোনও উন্নতি হয়নি। এ নিয়ে জেলা ও রাজ্য স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিয়ে জানানো হলেও বিশেষ ফল হয়নি।”
উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকান্ত শীল বলেন, “হাসপাতালের পরিকাঠামোয় বেশ কিছু উন্নতি হয়েছে। তবে নতুন করে নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ না হওয়ায় বেশ কিছু পদ ফাঁকা রয়েছে। এক জন চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। শীঘ্রই তিনি কাজে যোগ দেবেন। তবে এখনও আদর্শ পরিবেশ গড়ে তোলা যায়নি।”
|
ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ |
|
|
|
|
|