|
|
|
|
যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সমস্যা, ক্রমে বেড়ে চলেছে দুর্ঘটনা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
দুর্ঘটনা বেড়ে চলেছে। এ দিকে, যান নিয়ন্ত্রণ করার নিয়মিত ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেই আরামবাগ শহরে।
শহরের ভিতর দিয়ে যাওয়ায় চার কিলোমিটার লিঙ্ক রোডটি পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, দুই মেদিনীপুর ও বর্ধমান ও হুগলি জেলার কিছু অংশের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগের মাধ্যম। অসংখ্য রুটের বাস চলাচল করে এই রাস্তা দিয়ে। অন্য গাড়ি তো আছেই, তা ছাড়া দ্বারকেশ্বরের পাড়ের বালি নিয়ে প্রচুর লরি যাতায়াত করে। খান পঞ্চাশ চালকল ও হিমঘরে পৌঁছতেও ব্যবহার হয় এই রাস্তা। দুর্ঘটনা রোখার জন্য অতীতে নানা পদক্ষেপ করেছে পুলিশ-প্রশাসন। কিন্তু কিছুতেই আটকানো যায়নি দুর্ঘটনা। বছর দু’য়েক আগে আরামবাগ পুরসভার পক্ষে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। বামফ্রন্টের স্বেচ্ছাসেবকেরা নেমেছিলেন রাস্তায়। তাতে কিছুটা ‘সাফল্য’ মিলেছিল। মাঝে একবার ব্যবসায়ীরা উদ্যোগী হন। ট্র্যাফিক আইন ভঙ্গকারীদের রাস্তায় কান ধরে ওঠবোস করাচ্ছিলেন তাঁরা। নাকে খত দেওয়ানো হয় কাউকে কাউকে দিয়ে। তাতে পরিস্থিতি কিছুটা শুধরেছিল। কিন্তু ইদানীং অবস্থা ফের যে কে সেই। পথচারী কিংবা সাইকেল আরোহীদের ক্ষেত্রে রাস্তাটি দিন দিন মারাত্মক ঝুঁকিবহুল হয়ে উঠছে। দিন চারেক আগে বসন্তপুর মোড়ে বাস চাপা পড়ে মৃত্যু হয় বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির এক কর্মীর। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বাসটি সিগন্যাল মানেনি। বাসে ভাঙচুরও চালায় উত্তেজিত জনতা। গত এক বছরের মধ্যে এই চার কিলোমিটার রাস্তায় বাসুদেবপুর মোড়, পারুল, গৌড়হাটি মোড়, ব্যাঙ্ক ও পেট্রোল পাম্প-সংলগ্ন রাস্তা, বসন্তপুর মোড়, হাসপাতাল মোড়, পল্লিশ্রী প্রভৃতি এলাকায় শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাণ গিয়েছে ৯ জনের। কলকাতা বা বর্ধমানের হাসপাতালে মারা গিয়েছেন আরও কিছু মানুষ। বহু ক্ষেত্রে আহত ব্যক্তিদের অঙ্গহানি ঘটেছে।
শুক্রবার সকাল ১১টা নাগাদ কোর্ট রোডের মুখ এবং গৌরহাটি মোড়ে ট্র্যাফিক পুলিশের দেখা মিললেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হোমগার্ডরাই এই দায়িত্ব নিয়ে থাকেন। হোমগার্ডদের সঙ্গে বাস, লরি চালকদের মারপিট কিংবা ট্র্যাফিক আইন ভঙ্গকারীরা হোমগার্ডের হাতে টাকা গুঁজে দিচ্ছেন, এমন দৃশ্য হামেশাই দেখা যায়। তা নিয়ে কারও কোনও হেলদোল নেই। সকাল ১১টার পর বিকেল ৪টে পর্যন্ত কোথাও কোনও ট্র্যাফিক ব্যবস্থা দেখা যায় না। সে সময়ে গাড়ি চলে যেমন খুশি। শহরের তিনটি জায়গায়, হাসপাতাল মোড়, বসন্তপুর মোড় এবং গৌড়হাটি মোড়ে সিগন্যালের ব্যবস্থা থাকলেও গাড়ি চালকদের তা মানতে বিশেষ দেখা যায় না। দিন কুড়ি আগে এই সিগন্যাল না মানার কারণেই গৌড়হাটি মোড়ে প্রাক্তন এক সেনাকর্মীর সঙ্গে চুঁচুড়ার বিধায়ক তপন মজুমদারের বচসা বাধে। এ ধরনের ঘটনা ইদানীং আর ‘বিচ্ছিন্ন’ বলার উপায় নেই। স্থানীয় মানুষ জানালেন, গাড়ি চলাচল নিয়ে ছোটখাট ঝগড়া-বিবাদ দৈনন্দিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ট্র্যাফিক পুলিশ থাকলে অবশ্য সমস্যা কিছুটা কমে। শুক্রবার বিকেলে গৌড়হাটি মোড়ে দেখা গেল, সিগন্যাল ভঙ্গ করার জন্য এক মোটর বাইক আরোহী যুবককে পাঁচ বার কান ধরে ওঠবোস করালেন কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশ। পরে তিনি বললেন, “কেস দেওয়া যেতেই পারত। কিন্তু এত লোকের সামনে কান ধরে ওঠবোস করালে বোধহয় আরও ভাল কাজ দেবে। যদি এতে অন্তত শিক্ষা হয়!” পাশে দাঁড়ানো তাঁরই এক সহকর্মী বললেন, “এঁদের শোধরানো মুশকিল। মামলাও প্রতি দিন কিছু না কিছু হচ্ছে। কিন্তু কড়া সাজার ব্যবস্থা না থাকাতেই রাস্তায় এত উপদ্রব।” ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, অনুশাসনহীন হয়ে পড়েছে গোটা শহরের ট্র্যাফিক ব্যবস্থা।
বামফ্রন্ট পরিচালিত পুরসভা যে এখন নতুন করে কোনও দায়িত্ব নেবে না, তা বোঝা গেল পুরপ্রধান গোপাল কচের কথায়। তিনি বলেন, “লোকজন আইন না মানলে পুলিশ ব্যবস্থা নিক।” আরামবাগের বিধায়ক তৃণমূলের কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরার কথায়, “বিষয়টি প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।” এসডিপিও আকাশ মাগারিয়া বলেন, “ট্র্যাফিক ব্যবস্থা জোরদার করার চেষ্টা চলছে।” প্রশাসন-পুলিশের এই গা ছাড়া মনোভাবের ফল আখেরে ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকেই। |
|
|
|
|
|