মনোরঞ্জন ১...
আঁতলামির গহন সুড়ঙ্গ থেকে জনগণের মুক্ত মঞ্চে অভ্যুত্থান
লেটেস্ট খবর এল; ‘আমরা’র তথাকথিত বরেণ্য নায়ক তাঁর গল্ফ গ্রিনের বাড়ি থেকে বার হয়ে সবে লেক গার্ডেন্স। পৌঁছতে তার মানে অনেক দেরি। ‘ওরা’র সর্বশক্তিমান প্রযোজক শুনে কী সিদ্ধান্ত নেবেন? শুরু করে দেবেন সমাপ্তি অনুষ্ঠান? না। তিনি দ্রুত জানিয়ে দিলেন নায়ক পৌঁছনো পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে।
আবার দশ মিনিট বাদের আপডেট; হাজরা মোড় পেরিয়েছেন। যত দেরি হচ্ছে তত এ দিকে টেনশন বাড়ছে উদ্যোক্তাদের। সঙ্গে পাইলট কার যায়নি যে যানজটে পড়লেও গাড়ি ঠিক উদ্ধার করে নিয়ে আসবে। অথচ ইনি দুশ্চিন্তাহীন। “কত আর দেরি হবে। এখুনি এসে পড়বেন।”
যাক এখুনি ফের ফোন করা হয়েছিল; জানা গিয়েছে তিনি, ইন্ডাস্ট্রির সর্বজনশ্রদ্ধেয় দাদা, ভবানীপুর পৌঁছলেন। আশপাশের নামী মুখগুলো এ বার ঘোরতর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে। বলতে শুরু করেছে “দিদি, শুরু করে দিন। উনি না হয় পরে ঢুকবেন। আর দেরি করলে কিন্তু পুরো সিডিউল গণ্ডগোল হয়ে যাবে।” যাঁকে বলা হল তিনি পুরনো সিদ্ধান্তেই নির্বিকার। এত বড় নায়ককে বাইরে রেখে সমাপ্তি অনুষ্ঠান শুরু করে দেওয়াটা চরম অসৌজন্য হবে মনে করছেন।
নন্দন ডিরেক্টরের ঘরের বাইরের যে অপরিসর প্রবেশমুখ ক্রমশ ভিড়ে থিকথিকে হচ্ছে সেই জমায়েতের মৌখিক জ্যামিতি এতক্ষণে ‘অবাক’ থেকে ‘খুব অবাক’-এ উন্নীত। আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সমাপ্তি অনুষ্ঠান বলে কথা। ডিটেইল্ড মিনিট-টু-মিনিট ফ্লো-চার্ট। তা ছাড়া সাতটার সময় ক্লোজিং ফিল্ম শুরু হবে বলে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিবিশেষসে তিনি যত গুরুত্বপূর্ণই হোন তাঁর জন্য আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানসূচি কী করে বিঘ্নিত হতে পারে! কিন্তু সবাই ইতস্তত মোড-এ। জোর দিয়ে বলার হিম্মত দেখাতে পারছেন না। নেত্রী যে তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়।
খানিক পরে নন্দন মঞ্চ থেকে যখন ভরা প্রেক্ষাগৃহকে উদ্দেশ করে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “রঞ্জিত মল্লিক আর প্রসেনজিৎ এত আন্তরিক ভাবে আমায় ডেকেছে বলেই এসেছি।” তখন মনে হচ্ছিল খানিক আগের দৃশ্যপট যদি তাঁকে সিডি-তে দেখানোর সুযোগ থাকত যেখানে শীর্ষস্থানীয় বাম বুদ্ধিজীবী এবং বুদ্ধ ঘনিষ্ঠ হিসেবে খ্যাতনামা তাঁর নন্দন আগমনের জন্য কী ভাবে আধ ঘণ্টারও বেশি অপেক্ষা করে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী!
নতুন সরকারের অধীনে নতুন চলচ্চিত্র উৎসব নামেই। ভেতরে ভেতরে চলচ্চিত্র উৎসবের মোড়কে গভীর সম্মানযুদ্ধও ছিল। যার জয় পরাজয়ে সরকারের থাকা না থাকা কোনও ভাবে প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ নেই। সেখানে নির্বাচন কমিশন নেই। তাদের পেয়াদা, সৈন্যসামন্তও নেই। কিন্তু না থেকেও কোথাও একটা গোপন ব্যালট বাক্স রয়েছে। লোকে ঠিকই ভোট দেবে। অন্তত সাংস্কৃতিক জগতের মানুষজন দেবে। মিডিয়া দেবে। ভারতের ফিল্ম জগৎ দেবে।
হিসেব করবে একক প্রতিদ্বন্দ্বিতা যুদ্ধে কে জিতলেন? বুদ্ধদেব না মমতা?
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মহাকরণ থেকে অপসৃত হওয়ার পরে শহরে ওয়ান-ডে হয়েছে। শিল্পমেলা হয়েছে। মেসি এসেছেন যুবভারতীতে। কেউ মাপতেও যায়নি কী ছিল? এ বার কী হল? কিন্তু নন্দনস্থিত চলচ্চিত্র উৎসব অন্য ব্যাপার। সবাই এত বছরে জেনে গিয়েছেন এটা বুদ্ধবাবুর বাড়ির দালানে অনুষ্ঠিত হওয়া একটা গভীর ব্যক্তিগত ব্যাপার। হৃদয়ের খুব কাছাকাছি থাকা উৎসব।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর মতো দুঃস্বপ্নেও সিগারেটে অনুরাগ নেই। যেমন অনুরাগ নেই লাতিন আমেরিকান সাহিত্য, সেই সাহিত্য-নির্ভর ছবি আর শিল্পকলা নিয়ে নিবিড় আলোচনাতে। আর কে না জানে, নন্দনের চলচ্চিত্র যুদ্ধে বুদ্ধবাবুর বড় হাতিয়ার বরাবরই থেকেছে লাতিন আমেরিকান ছবি। বকলমে প্রাদেশিকতা আর স্থানীয় সংস্কৃতিকে তুচ্ছ করে তাঁর ব্যক্তিগত আন্তর্জাতিক সিনেমাবোধ।
‘রং রসিয়া’ দেখতে নন্দনে ভিড়। ছবি: ইন্দ্রনীল রায়।
অভিনেতা কাম প্রখর ফুটবল অনুরাগী চলচ্চিত্র উৎসবকে আগাম ব্যাখ্যা করেছিলেন: “এটা বুদ্ধবাবুর পাড়ায় খেলা। তাঁর হোম ম্যাচ। দিদির অ্যাওয়ে ম্যাচ। তাই ঝুঁকি নেওয়ার দরকার নেই। ড্র করলেই যথেষ্ট।”
ফেস্টিভ্যালের কার্যকরী কমিটির সদস্যেরা অবশ্য শুরুতে কোনও সংকেতই পাননি যে উৎসবের ভেতরে অলক্ষ্যে এমন সুপার হেভিওয়েট ম্যাচের আতসবাজি গচ্ছিত আছে! এ-ও বোঝেননি যে মমতা এ সব ড্র-ফয়ে বিশ্বাসী নন। তিনি উদ্দাম জয়ের খেলাই খেলবেন।

***

একাধিক অভিনেতায় গড়া ঢেলে সাজানো নতুন কমিটির লক্ষ্য ছিল ত্রিমুখী।
ফেস্টিভ্যাল সংক্রান্ত হাইপ নন্দন চত্বর থেকে বার করে শহরে ছড়াতে হবে। হোর্ডিং করতে হবে এয়ারপোর্ট থেকে রেলওয়ে স্টেশন সর্বত্র।
আমরা-ওরা ব্যবধান ঘুচিয়ে উৎসবে সবাইকে সমান ভাবে সামিল করতে হবে।
টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিকে গত কয়েক বছরের মতো ব্রাত্য করে রাখলে চলবে না।
মমতা যে সেই গতিপথকে আরও দ্রুতগামী, আরও প্রসারিত করে দেবেন কেউ ভাবেননি। এর আগে ১৬ বছরের ট্রেন্ড দিঙনির্দেশ করে, নন্দন-উৎসব মূলত এক ধরনের চলচ্চিত্র মনস্কদের পৃষ্ঠপোষকতা নির্ভর উৎসব। ফিল্ম-নেশাড়ু একদল মানুষ, কিছু মন্ত্রী-আমলা। কিছু বিদেশি ডেলিগেট। সংখ্যালঘিষ্ঠ থাকাই যে উৎসবের ইউএসপি হিসেবে গণ্য করা হত।
কুক্ষিগত চেতনা সমন্বিত সেই উৎসবকে প্রথম বছরেই এত গণমুখী করে ফেলা সম্ভব কেউ ভাবতেই পারেননি। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র সমালোচক সমাপ্তি দিনও গভীর অভিমানে বলছিলেন, “কী তুলনা করব দু’টো জমানার? ছিল ফিল্ম উৎসব। হয়ে গেল মেলা।”

***

তাঁদেরও অবশ্য মেনে নিতে হচ্ছে শহরে ফিল্মোৎসব বস্তুটা যে একক ঔদ্ধত্যের গজদন্তমিনার মার্কা অবস্থান থেকে প্রোলেতারিয়েতের কোলে গিয়ে পড়তে পারে তাঁরা কল্পনাও করতে পারেননি। ভাবেননি যে আপাত আঁতলামির কেন্দ্রীয় বিষয় ঘিরে একই শহরে জনমানস এমন বাড়তি উদ্দীপনা উৎপন্ন করবে। সৌমিত্রবাবু তাঁর ভাষণে বললেন, “প্রতি বছরের মতো এ বারও উৎসব সাধারণের আনুকূল্য পেয়েছে।” তথ্য এবং ডিটেলের প্রতি অভিনয় থেকে জীবন সমান নিষ্ঠাবান সৌমিত্রকে বোঝাই গেল এ ক্ষেত্রে কেউ খবরে বিপথগামী করেছে!
বঙ্গীয় রাজনৈতিক-চলচ্চিত্র ইতিহাসে কন্ট্রাডিকশনের অবিশ্বাস্য এই স্মারক উঠেই থাকল যে বামপন্থী শাসক আমলে যে ফেস্টিভ্যাল পরিচালনার স্টাইলে উগ্র ক্যাপিটালিজ্ম কাজ করত, ডানপন্থী শাসক আমলে সেটাতেই যেন কমিউনিজ্মের অদৃশ্য ছায়াপাত।
বিশেষ কিছু নয়। অনেকে। আমি একা এবং আমার বিদেশি সাহিত্য বোঝা সঙ্গীরা নই। সবাই। যারা অত বুঝি না তারাও।
এহেন জনমুখী মডেলে নির্বাচিত ছবির গুণমান বিপন্ন হওয়ার অনিবার্য ভাইরাস থাকে। কারণ ঝোঁকটা যত না উৎকর্ষে, তার চেয়ে বেশি সবাইকে খুশি করায়। অথচ এ বারে ছবি বাছাই ঘিরে সমালোচনা প্রকাশ্য হয়নি। জাঁ লুক গদার, নুরি বিল্জ সিয়েলান বা বেলা টার-এর সাম্প্রতিক ছবি দেখা গিয়েছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ছবি বাছাইয়ে অনেক সময় ব্যক্তিগত পরামর্শ দিতেন। তা অনুপস্থিত থাকায় গুরুতর সমস্যা হয়েছে বলে শোনা যায়নি।
বরঞ্চ এ বারেই প্রথম স্ক্রিনিং কমিটির সঙ্গে একটা টেকনিক্যাল কমিটি ছিল। তারা শুধু ইন্ডোর স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী ছবি দেখানোর প্রযুক্তি আছে কি না পরীক্ষা করা নয়। ছবির প্রোজেকশন, সাউন্ড সিস্টেম বারবার খতিয়ে দেখেছে। গদার-সকুরভের ছবি ছিল এ বার প্রযুক্তিগত ভাবে ভিন্নডিসিপি ফর্ম্যাটে। সেটা দেখানোর জন্য নতুন প্রোজেক্টর আনা হয়েছিল। ভবিষ্যতের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালগুলোয় এই প্রোজেক্টর ছাড়া এক পা-ও চলা যাবে না। প্রযুক্তির এত রূপাম্তর ঘটছে বিদেশি ছবিতে।

***

কিন্তু প্রযুক্তিগত বদল আবাহনে মোটেও সীমাবদ্ধ থাকবে না ২০১১ ফিল্ম উৎসব। বরঞ্চ স্বীকৃত হবে যে সব কারণের জন্য, তার অগ্রগণ্যনন্দনে টালিগঞ্জের প্রত্যাবর্তন।
বুদ্ধবাবু নির্দেশিত উৎসবে বাণিজ্যিক টালিগঞ্জের কোনও স্থান ছিল না। স্থান ছিল একমাত্র অন্য ধারার ছবির। তাদের পরিচালক। শিল্পী। কলাকুশলীদের। প্রভাত রায় নন। রাজা সেন। হরনাথ চক্রবর্তী নন। শেখর দাশ। নির্দিষ্ট কিছু চেনা মুখকেই ঘুরেফিরে নন্দন চত্বরে দেখা যেত। মাঝে টেলি-ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল চালু করেও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় ইন্ডাস্ট্রিকে উৎসবে সামিল করার উদ্যোগ পরিত্যক্ত, পোড়ো বাড়ির মতো দেখাত।
এ নিয়ে প্রখর অভিমানও লক্ষ করা যেত যে মূল ধারার টালিগঞ্জে যারা ঘানি টানছে। তাকে রুটি-রুজি দিচ্ছে, আজ তারাই কিনা নিজ ভূমের আন্তর্জাতিক মঞ্চে চির অবহেলিত। দেব বা জিৎকে অতীতে নন্দনে দেখতে পাওয়ার প্রশ্নই ছিল না। প্রসেনজিৎকেও বোধহয় হাতে গুনে দেখা গিয়েছে। শেষ ক’বছর টালিগঞ্জ আরওই মুখ ফিরিয়ে নেয় উৎসব থেকে আমরা-ওরা তত্ত্ব চালু হয়ে যাওয়ায়। নন্দীগ্রাম পরবর্তী অপর্ণা সেন, গৌতম ঘোষরাও মুখ ফিরিয়ে নেন নন্দন থেকে। অবশ্য একটা ধারণা তার আগেও হয়ে গিয়েছিল যে তুমি যদি আঁতেল বাম-বুদ্ধিজীবী না হও। যদি দস্তয়েভস্কি না জানো। যদি চমস্কি না পড়ে থাকো। যদি লাতিন আমেরিকান ছবি নিয়মিত না দেখে থাকো। আর যদি না কখনও লাল-এর মিছিলে হেঁটে থাকো, খবরদার নন্দন চত্বরে ঢুকো না। তোমায় মোটেও কেউ স্বাগত জানাবে না।
শাহরুখ থেকে সৌমিত্র, সবাই সামিল হলেন ফিল্মোৎসবে। ছবি: অশোক মজুমদার।
টালিগঞ্জে সর্বজনপ্রিয় মানুষেরা ছিলেন পুরনো জমানার কমিটি- টমিটিতে। সৌমিত্র নিজে, তরুণ মজুমদার, মৃণাল সেন। কিন্তু শিল্পী মানেই তুমি একমাত্র শিল্পী। তোমার রংয়ের দরকার নেই। তকমার দরকার নেই। শিল্পী মাত্রেই এই উৎসবে অবাধ আমন্ত্রণ এই বাতাবরণ যে তাঁদের উপস্থিতিতেও বিন্দুমাত্র সৃষ্টি হয়নি তার ঐতিহাসিক সত্যতা থেকেই গেল।
চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে টালিগঞ্জের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে সংগঠিত আর্টিস্ট ফোরাম অনুষ্ঠান করেছে এটা অতীতের দিবাস্বপ্নও ছিল না। অথচ এ বার সম্ভব হল। স্টেজে ওঠার ওই ব্যস্ততার ফাঁকে অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, “দারুণ লাগছে। এখন থেকে ক্যালেন্ডারে প্রতি বছর আমাদের টালিগঞ্জের শিল্পীদের জন্যও একটা সময় নির্দিষ্ট থাকল। এই ফেস্টিভ্যালের সময়টা। যেটা শুধুই আমাদের। আর কোনও পেশার মানুষদের নয়।” লকেট ডান নন, বাম-ও না। টালিগঞ্জের মাস-মার্কেটের প্রতিনিধিত্ব করা এক শিল্পী। কিন্তু তাঁর বলা কথাই যেন এই মুহূর্তে অনেকের ভাষা।
ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একই কথা তো শাহরুখ খানের মুখেও। পূর্বতন সরকার বছর দুই আগে তাঁকে ফেস্টিভ্যালে আমন্ত্রণ জানিয়েও আচমকা নিজেরাই আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করে নেয়। শাহরুখের এমন অভিজ্ঞতা জীবনে হয়নি। লোকে তাঁকে পেতে উন্মুখ থাকে। পেয়ে হারানোর আত্মঘাতী বাসনা কখনও দেখায় না। আসলে শাহরুখ যে ধরনের ছবির প্রতিনিধিত্ব করেন তাতে বুদ্ধবাবুর কোনও শৈল্পিক অনুমোদন নেই। বরঞ্চ বুদ্ধ-নির্দেশিত উৎসবে নাসির বা শাবানা সব সময় স্বাগত ছিলেন। শাহরুখ-আমিররা নন।
অনেকেরই যদিও মনে হত যে বাজারে রাজ্য সরকার লক্ষ্মী টানতে পারছে না। টাটা ফিরে যাচ্ছে সিঙ্গুর থেকে। সেখানে মুম্বইয়ের বাণিজ্যিক নায়কও যদি একশো কোটি টাকা কলকাতার একটা টিমের পিছনে খরচা করেন, তাঁকে তো শুধু শিল্পোদ্যোগী হিসেবেই লাল-কার্পেট বিছিয়ে দেওয়া উচিত।
শাহরুখ ঘনিষ্ঠ ভিন্ রাজ্যের এক ব্যক্তি বলছিলেন, “এস আর কে বলছিল, এত বছর পর কলকাতায় ওর প্রথম মনে হল, সত্যি এখানেও সরকারের কাছে ও স্বাগত। দিদি এতই আন্তরিক ভাবে ওর সঙ্গে কথা বলেছেন। এর আগে বুদ্ধবাবু এস আর কে-র সঙ্গে ভাল ব্যবহারই করেছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা দূরত্ব বজায় থেকেই যেত। তা ছাড়া তখনকার সি এম বারবার নির্দেশ দিতেন, যা করবেন সৌরভকে সঙ্গে নিয়ে করবেন।” ফলে সম্পর্কটাই তৈরি হয়নি।
ব্যতিক্রমী উৎসবে ব্যতিক্রমী কলকাতার শাহরুখের হাত উষ্ণ ভাবে ধরতে যাওয়া যদি অনিবার্য চৌম্বকক্ষেত্র হয়, উদ্বোধন মঞ্চের ভ্রাম্যমাণ আভিজাত্য ছিলেন শর্মিলা ঠাকুর। রক্ষণশীল পটৌডি পরিবারের বেগমসাহেবা স্বামীহারা হওয়ার দেড় মাসের মধ্যে পাবলিক অনুষ্ঠানে ওঠার সম্মতি দিয়েছেন এটা ছিল অতি আশ্চর্য। চমকে তার সঙ্গে পাল্লা দিল প্রথম সারিতে বসে পাশাপাশি অনুষ্ঠান দেখা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় আর শঙ্খ ঘোষের পাশাপাশি বসে অনুষ্ঠান দেখা। শর্মিলা যখন বলছেন, “এই শহরই স্বামীর সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ করিয়েছিল,” তখন ওই ভিজে মুহূর্তটায় সুনীল-শীর্ষেন্দু-শঙ্খকেও দেখাচ্ছিল একই রকম ভাবাতুর। তখন কোথায় ‘আমরা’। কোথায় ‘ওরা’।
এ রকম আরও কত মুহূর্ত। ১৫০ ছবি, ১১ ভেন্যু, ২৬০০ ডেলিগেট দিয়ে আদৌ মনে রাখা হবে না ২০১১-র উৎসবকে। বহু বছর বাদে আন্তর্জাতিক ফিল্ম উৎসবে ‘সপ্তপদী’ দেখানো হল। নিজের শহরে সসম্মানে ফেরত এল ‘৩৬ চৌরঙ্গী লেন’। কেতন মেটার ‘রং রসিয়া’ দেখার উদগ্র ইচ্ছে ছাপিয়ে গেল ইডেনে সচিন দর্শনকে। এগুলোও থাকবে নেপথ্যচারিণী হয়ে।
বরং লিপিবদ্ধ থাকবে চলচ্চিত্র উৎসবের বিবর্তন হতে হতে শিল্পীদের সঙ্গে সরকারের পারস্পরিক সৌজন্যের এই দিন প্রত্যাবর্তন। ঘোষিত বাম সমর্থক এবং বিগত সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সব্যসাচী চক্রবর্তীকে যখন মমতা দেখামাত্র বললেন, “আপনার দুই ছেলে তো দারুণ কাজ করছে। আমি খুব খুশি,” তখন মনে হল কলকাতার শিল্প পরিমণ্ডল তো এককালে এমনই ছিল। যেখানে রং জানতে চাওয়া হত না। কৃষ্টিই ছিল একমাত্র সভ্যতা।
আর শিল্পীর একমাত্র পরিচয় বহন করত শিল্প।
অদৃশ্য ব্যালট বাক্সের কথা বলেছিলাম। সেটা খুলে আর ব্যালট গোনার দরকার পড়েনি। ভিড়ের উত্তেজিত, খুশি মুখগুলোই তো প্রকাশ্য নির্বাচনী ফল!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.