অপহৃত কলেজ ছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পর করিমগঞ্জ আজ উত্তাল হয়ে ওঠে। ক্ষুব্ধ জনতা করিমগঞ্জ-শিলচর সড়কের পাশে, অন্তত ১৭টি হোটেল জ্বালিয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ভস্মীভূত হয়েছে অভিযুক্ত দুষ্কৃতীদের কয়েকটি বাড়িও। অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ এ পর্যন্ত ৯ জনকে আটক করেছে। তাদের মধ্যে ছ’জনই মহিলা।
পুলিশ জানায়, শনিবার রাতে অপহৃত হয় করিমগঞ্জ জেলার ভাঙ্গা এলাকার এক ব্যবসায়ীর ছেলেআহরার আহমদ নাজ। করিমগঞ্জ কলেজের বিএসসি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র নাজ। আজ করিমগঞ্জ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে, বউরবন্দ-কেউটকোনার পাহাড়ি এলাকায় তার মৃতদেহটি পাওয়া যায়। দুষ্কৃতীরা গলায় দড়ি পেঁচিয়ে, গুলি করে মারে তাকে। পরে মাটিতে পুঁতে রাখে। আজ মাটি খুঁড়েই মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও স্থানীয় জনতা।
নাজের পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে একটি ফোন পেয়ে বাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে নাজ। আর বাড়ি ফেরেনি। পর দিন বাইকটিকে রাস্তায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পুলিশ তদন্তে নেমে এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রজনী তালুকদার নামে নাজের ঘনিষ্ঠ এক মোটর-সাইকেল মেকানিককে গ্রেফতার করে। |
জেরায় সে স্বীকার করেছে, জেলারই সেলিমউদ্দিন তাকে দু’লক্ষ টাকার লোভ দেখালে সে নাজকে বাড়ি থেকে ডেকে আনে ও এক হোটেলে বসিয়ে নেশার ওষুধ খাওয়ায়। পরে নাজ যখন বাড়ি ফিরছিল, তখন তাকে তুলে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। তবে কোথায় নিয়ে গিয়েছে তা সে জানে না বলে পুলিশকে জানায়। এরপর ধরা হয় নোমানউদ্দিন ও ফুজাইল আহমদ নামে আরও দু’জনকে। গত কাল আর এক অভিযুক্ত ফয়জুর রহমানের বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তার স্ত্রী নাজমা বেগম চাপের মুখে স্বীকার করে, নাজকে দুষ্কৃতীরা রবিবার রাতেই গুলি করে মেরে ফেলেছে। তার স্বামীও এতে জড়িত। তবে তার সাফাই, এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য আবদুল কায়ুমের বাড়িতে বিনাভাড়ায় তারা বসবাস করে বলে বাড়িমালিকের নির্দেশেই ফয়জুরকে তাদের সঙ্গে থাকতে হয়েছে। কিন্তু এরা এখন কোথায় বা নাজের মৃতদেহের কী হয়েছে, সে সব জানাতে পারেনি নাজমা। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। সঙ্গে আটক করা হয়েছে কায়ুমের বাড়ির আরও পাঁচ মহিলাকে। পরে স্থানীয় জনতার সাহায্যে পুলিশ বিস্তীর্ণ এলাকায় মৃতদেহের সন্ধানে তল্লাশি চালায়। আজ সকালে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয় নাজের লাশ। নাজমার মুখে নাজের মৃত্যুর খবর পেয়ে কালই জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। কনককলস, মনসাঙ্গন, বসন্তপুর প্রভৃতি এলাকায় হানা দিয়ে অভিযুক্তদের ১২টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় তারা। জাতীয় সড়কের পাশে থাকা হোটেলগুলিতে মদ বিক্রি-সহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে বলে অভিযোগ করে ১৭টি হোটেলেও আগুন দেয় উন্মত্ত জনতা। আজ সকালে ভাঙ্গায় জাতীয় সড়কে অবরোধ করা হয়। ভয়ে জেলার অধিকাংশ এলাকাতেই দোকানপাট খোলেননি ব্যবসায়ীরা। ডিআইজি (দক্ষিণাঞ্চল) বিনোদ কুমার কাল থেকে ভাঙ্গায় অস্থায়ী শিবির গড়ে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, উত্তেজনা থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। তবে কলেজ ছাত্র নাজকে অপহরণ ও হত্যার কারণ সম্পর্কে পুলিশ এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। ডিআইজি জানান, দুষ্কৃতীরা মুক্তিপণ চেয়ে নাজের বাড়িতে যোগাযোগ করেছিল বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। পুরনো কোনও পারিবারিক বিবাদও ওই মৃত্যুর কারণ হতে পারে বলে তাঁর অনুমান। ডিআইজি বলেন, সম্ভাব্য সব দিক মাথায় রেখেই পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। |