মেট্রোয় ঝাঁপ নয়। পাঁচ বা দশতলা বাড়ির ছাদ থেকেও ঝাঁপ নয়। একেবারে মাঝ-আকাশে বিমানের দরজা খুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন এক ব্যক্তি।
শিলচর থেকে কলকাতামুখী বিমানটি তখন মাটি থেকে ১০ হাজার ফুট উপরে। বিজয় কুমার নামে ওই মধ্যবয়স্ক যাত্রী বিমানের আসন থেকে উঠে সোজা পিছনে গিয়ে দরজার হাতল ধরে টানাটানি শুরু করে দেন। ছুটে আসেন বিমানকর্মীরা। কোনও রকমে দরজার পাশ থেকে সরানো হয় তাঁকে। কিন্তু তিনি উড়ন্ত বিমানের দরজা খুলতে চাইছিলেন কেন?
জবাবে ওই যাত্রী যা বললেন, তা শুনে বিমানকর্মীদের চক্ষু চড়কগাছ! বিজয় কুমার বিমানকর্মীদের জানান, বিমানের দরজা খুলে লাফ মেরে আত্মহত্যা করতে চান তিনি।
শুক্রবার বেলা ২টো নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে জেট এয়ারওয়েজের বিমানে। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বছর সাতচল্লিশের বিজয় বসে ছিলেন ১৫সি নম্বর আসনে। পাশে ছিলেন তাঁর বন্ধু। বিমানটি তখন কলকাতা বিমানবন্দর থেকে ৩৫ মিনিট দূরে। হঠাৎই শৌচাগারে যাওয়ার নাম করে উঠে বিজয় সটান পৌঁছে যান বিমানের পিছনের দরজার কাছে।
তার পরেই দরজার হাতল ধরে টানাটানি করতে থাকেন। বিমানকর্মীরা কোনও রকমে তাঁকে ধরে নিরস্ত করেন। কিন্তু বিজয় নাছোড়বান্দা। সমানে বলতে থাকেন, বিমানের দরজা খুলে ঝাঁপ মেরে আত্মহত্যা করতে চান তিনি। কোনও রকমে সামলেসুমলে তাঁকে ফের তাঁর আসনে বসিয়ে দেওয়া হয়। বিমানটি নিরাপদেই নামে কলকাতায়।
শিলচর থেকে আসা জেটের ওই ছোট বিমানে যাত্রী ছিলেন ৫৭ জন। এ ছাড়া ছিলেন পাইলট ও বিমানকর্মীরা। কোনও ভাবে যদি দরজাটা খুলে যেত, তা হলে কী হত?
বিমানবন্দরের আধিকারিকেরা জানান, সে-ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ত পুরো বিমানটিই। প্রাণসংশয় ঘটতে পারত বিমানকর্মী ও পাইলট এবং বিমানের সব যাত্রীর। অর্থাৎ বিজয় কুমারকে নিরস্ত করে বিমানকর্মীরা তাঁকে তো বাঁচিয়েছেন বটেই। রক্ষা করেছেন নিজেদের এবং সব যাত্রীকেও।
প্রশ্ন উঠেছে, বিমানের দরজা কি মাঝ-আকাশে খোলা যায়? যায়। বিমানের দরজা খোলার পদ্ধতি জানা থাকলে যে-কোনও সময়েই তা খুলে ফেলা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিমানকর্মীরা। আর বিমানবন্দরের আধিকারিকেরা জানান, বিমানের দরজা স্বয়ংক্রিয় ভাবে বন্ধ করার পদ্ধতি জানা থাকলে আলাদা ভাবে যে-কোনও একটা দরজা নিজের হাতেও খোলা যেতে পারে।
কিন্তু বিজয় কুমার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন কেন? তা-ও এমন অভিনব পন্থায়?
কলকাতা বিমানবন্দর ও পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজয়ের বাড়ি কেরলের এরুমাক্কাডু নামে একটি গ্রামে। কর্মসূত্রে তিনি শিলচরে থাকেন। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন বা সীমান্ত সড়ক সংস্থায় রাস্তা নির্মাণের জন্য মাটি কাটার গাড়ি চালানোর কাজ করেন। বিজয়ের কথাবার্তায় অসংলগ্নতার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই ব্যক্তি বেশ কয়েক মাস ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। তিনি মানসিক ভাবে এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন যে, কাজ করতে পারছিলেন না। বিজয়ের স্ত্রী তাঁর স্বামীর অফিসের কর্মকর্তাদের চিঠি লিখে ছুটির আবেদন করেন। ছুটি মঞ্জুরও হয়। বিজয় এ দিন শিলচর থেকে বিমানে ওঠেন। সঙ্গে ছিলেন এস বাবু নামে তাঁর এক সহকর্মী। কলকাতা থেকে এ দিনই কেরল যাওয়ার কথা ছিল বিজয়ের। কিন্তু ওই ঘটনার পরে পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। চিকিৎসকেরাও তাঁকে পরীক্ষা করছেন। রাত পর্যন্ত ওই বিমান সংস্থার তরফে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। |