মহারাষ্ট্রের গড়ছিরৌলি, ছত্তীসগঢ়ের দন্তেওয়াড়া বা পশ্চিমবঙ্গে ঝাড়গ্রাম, লালগড়ের জঙ্গলে গিয়ে পথ চিনতে না পেরে এতদিন মাওবাদীদের ফাঁদে পড়ছিল নিরাপত্তা বাহিনী। তাতে নিরাপত্তারক্ষীদের অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে। জঙ্গল বা পাহাড়ি পথে জওয়ানদের পথ চেনাতে এবার মহাকাশ প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে এসেছে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক এবং ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)। পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদী নেতা কিষেণজির বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযান সফল হলেও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তারা মনে করছেন, ইসরোর প্রযুক্তি হাতে থাকলে অভিযান সহজতর হত।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রক সিআরপিএফ বাহিনীকে ৮৬টি ভৌগোলিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থা বা জিওগ্রাফিক ইনফর্মেশন সিস্টেম (জিআইএস) সফ্টওয়্যার সম্বলিত কম্পিউটার দিয়েছে। ইসরোর উপগ্রহ মারফত পাওয়া উপদ্রুত অঞ্চলের চিত্র নিয়ে তার উপর জিআইএস সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে পুঙ্খানুপুঙ্খ মানচিত্র (ম্যাপিং) তৈরি করছে সিআরপি। “এর ফলে জঙ্গল, টিলা-পাহাড়ে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে আর পথ হারাতে হবে না” বলে দাবি করেছেন সিআরপি-র ডিরেক্টর জেনারেল কে বিজয় কুমার।
জিআইএস সফ্টওয়্যারটি তৈরি করেছে ইসরোর শাখা সংস্থা স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার। ইসরোর দাবি, ওই সফ্টওয়্যারটির মাধ্যমে জিআইএস-এর সহায়তায় একটি তথ্যবহুল মানচিত্র তৈরি করা সম্ভব। তাতে কোনও নির্দিষ্ট এলাকার নদীনালা, গাছপালা, জঙ্গল, টিলা, পায়ে চলা পথ, বাড়িঘরের অবস্থান, এমনকী কুয়ো, নলকূপ ইত্যাদি সবই এই মানচিত্রে থাকছে। প্রতিটি গাছ, বাড়ি, পুকুর বা নলকূপকে এই ব্যবস্থায় পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে বলে সিআরপি-র ডিরেক্টর জেনারেল জানিয়েছেন।
ইসরোর এক মহাকাশ বিজ্ঞানী বলেন, “উপগ্রহ চিত্রে কোনও অঞ্চল বা এলাকাতে নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করা যায় না। জিআইএস সেই অভাব পূরণ করে। ব্যবহারকারী সংস্থা নিজেদের তথ্য দিয়ে জিআইএস প্রযুক্তির সাহায্যে নিজেদের প্রয়োজন মতো মানচিত্র তৈরি করে নিতে পারে।” অর্থাৎ সিআরপি-র ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এলাকার তথ্য জোগান দিতে হবে নিরাপত্তা বাহিনীকেই। কে বিজয় কুমার জানিয়েছেন, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশার উপদ্রুত এলাকার মানচিত্র তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া, মধ্যপ্রদেশের ৭, বিহারের ১৪ এবং অন্ধ্রের ৯টি জেলার বিস্তারিত মানচিত্র তৈরি সম্পূর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন, মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ অঞ্চলের তিন জেলা গড়ছিরৌলি, ভান্ডারা এবং গোন্ডিয়ার মানচিত্র তৈরির কাজও চলছে।
পশ্চিমবঙ্গে এ পর্যন্ত শুধু পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মানচিত্রই তৈরি করতে পেরেছে সিআরপি। মাওবাদী অধ্যুষিত জঙ্গলমহলের কোনও জেলারই মানচিত্র তৈরি করা যায়নি এখনও। তা কিছুদিনের মধ্যেই তৈরি হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ডিজি। তবে এ রাজ্যে শুধু জঙ্গলমহল নয়, গোটা রাজ্যেরই উপগ্রহ চিত্র নিয়ে বিস্তারিত মানচিত্র তৈরির কাজ হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। কারণ, এই রাজ্যের সর্বত্রই মাওবাদীদের ছড়িয়ে পড়ার খবর তাঁদের কাছে রয়েছে বলে বাহিনীর এক মুখপাত্র জানান।
কলকাতায় সিআরপি-র এক মুখপাত্র বলেন, “অন্য রাজ্যে এই সব বিশেষ সফ্টওয়্যার সম্বলিত ল্যাপটপ কম্পিউটার নিয়ে আমরা কাজ করে দেখছি নদী-পাহাড়-টিলা এবং বিশেষ করে জঙ্গল ভরা গিরিখাত সবই ছবির মতো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ফলে আমাদের টহলদারি জওয়ানদের পথ হারিয়ে ফেলার আর কোনও সম্ভাবনা থাকছে না।”
তিনি আরও জানান, যে সব জায়গার মানচিত্র তৈরি হয়ে গিয়েছে, সেখানে কোম্পানি-কমান্ডারদের হাতে ওই সব বিশেষ ল্যাপটপ তুলে দেওয়া হয়েছে। |