ফিরে আসছে সেই ‘ভয়ঙ্কর’ দিনের স্মৃতি। তিন বছর পার হয়ে গিয়েছে। তবু ওই দিনটা এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর। আজমল আমির কাসভ আর তার দলবল তছনছ করে দিয়েছিল বাণিজ্যনগরীকে। ২৬/১১-র সেই সন্ত্রাস থেকে কোনওমতে রক্ষা পাওয়া মানুষগুলোর মনে এখনও ধ্বংসের ছবিটা টাটকা।
যে কারণে তিন বছরের মেয়েটার জন্মদিন পর্যন্ত পালন করেন না তাঁর বাবা-মা। মেয়েটার নাম তেজস্বিনী চহ্বাণ। এ বার তিনে পা দেবে সে। ২৬/১১-য় জন্ম হয়েছিল বলে ওর ডাকনাম ‘গোলি’। ওর বাবা বললেন, “গোলির জন্মদিন পালন করা হয় না। কষ্টের স্মৃতি ফিরে আসে, কত লোক মারা গিয়েছেন সে দিন। কী করে আনন্দ করি বলুন?”
বছর তেরোর কিশোরী দেবিকা রোটওয়ানের গলাতেও ক্ষোভের সুর। “কাসভকে এখনও ফাঁসি দেওয়া হল না কেন? ২৬/১১-র মতো আরও ভয়ঙ্কর হামলার জন্য কি অপেক্ষা করছি আমরা? |
কাসভ, ওর সঙ্গীরা যে আঘাত দিয়েছে, তাতে আমরা কেঁপে উঠেছি। সরকার কিছু করছে না কেন? কাসভকে নিয়ে কোনও লেখা পড়লেই আমার প্রচণ্ড রাগ হয়।” সেই ‘অভিশপ্ত’ রাতে দেবিকার বাবা নটবরলাল ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাসে ছেলেমেয়েকে নিয়ে ট্রেন ধরবেন বলে দাঁড়িয়েছিলেন। তখনই দুই জঙ্গির এলোপাথাড়ি গুলি। একটা এসে লাগে দেবিকার ডান পায়ে। তার পর থেকে বহু দিন ক্রাচে ভর দিয়েই হাঁটতে হয়েছিল দেবিকাকে। আদালতে প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে দেবিকাই ছিল সর্বকনিষ্ঠ। এখন কী মনে হয় সাহসী ছোট্ট মেয়েটার? “আমি এখন সুস্থ ঠিকই, তবু হাঁটতে অসুবিধা হয়। পড়াশোনা ভালই চলছে। কিন্তু গত তিন বছরে অনেক কিছু পাল্টে গিয়েছে। অন্তত চার বার বাড়ি পাল্টাতে হয়েছে আমাদের। প্রতিবেশীরা ভয় পায়, যেখানেই থাকতে যাই, সবার মনে হয় আবার যদি কেউ হামলা করে!” কল্পনা শাহের গল্পটা আরও করুণ। ওবেরয় হোটেলে স্বামী পঙ্কজ কাজ করতেন। ওই রাতে জঙ্গিদের গুলি কেড়ে নিয়েছিল পঙ্কজকেও। কল্পনা বললেন, “প্রতিদিনই মিস করি ওঁকে। সারা জীবনই করব। তিন বছর হয়ে গেল। বিচার হল না। কাসভ এখনও বেঁচে। বিচারের নামে কত টাকা খরচ করা হচ্ছে ওর জন্য।” |