ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গপথ তৈরি করতে আনা হচ্ছে অত্যাধুনিক ‘টানেল বোরিং মেশিন’ (টিবিএম)। কর্তৃপক্ষের দাবি, পূর্ব ভারতে এমন যন্ত্র এই প্রথম। তাঁরা জানান, এ মাসেই শুরু হচ্ছে খননকার্য। ভূগর্ভে এই কাজ চলবে বলে যান চলাচল বিঘ্নিত হবে না। বাড়িঘর ভাঙারও তেমন প্রয়োজন নেই। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ১৪ কিলোমিটার পথের প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশ তৈরি হবে সুড়ঙ্গে।
কী ভাবে কাজ করবে টিবিএম? প্রকল্পের তদারকি সংস্থা ‘কলকাতা মেট্রো রেল নিগম’-এর এক পদস্থ অফিসার বলেন, “মাটির উপরের অংশে রেলপথ স্থাপন নিয়ে জটিলতা নেই। তবে, সুড়ঙ্গ কাটতে ওই যন্ত্র লাগবে। এ মাসেই শুরু হবে কাজ। ওই যন্ত্র আনা ও পরিচালনার দায়িত্ব বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদারি সংস্থারই।” টিবিএম আদতে স্বয়ংক্রিয় একগুচ্ছ যন্ত্র। এর একটি অংশ সুড়ঙ্গের মাটি কাটবে। সেই সুড়ঙ্গের ব্যাসার্ধ হবে সাড়ে পাঁচ মিটার। আর একটি যন্ত্র ওই গর্তে একের পর এক আগাম ঢালাই করা (‘প্রিকাস্ট’) গোলাকার ধারক বসাবে। ফলে, উপরের মাটিতে ধস নামবে না। অন্য একটি যন্ত্র সুড়ঙ্গের কাটা মাটি তুলে আনবে।
টিবিএম প্রথমে নামছে বেলেঘাটায়, সুভাষ সরোবরের পাশে। সেখানে বিশাল বাঁধানো গর্তে নামানো হবে এই যন্ত্রগুচ্ছ। সেখান থেকে দু’টি সুড়ঙ্গ যাবে হাওড়ায় প্রান্তিক স্টেশন পর্যন্ত। একটি দিয়ে ট্রেন যাবে, অপরটি দিয়ে আসবে। এর জন্য পাশাপাশি খোঁড়া হবে দু’টি সুড়ঙ্গ। দ্বিতীয় সুড়ঙ্গের কাজ শুরু হলে তাতে নামানো হবে আরও একটি টিবিএম। হাওড়ার দিক থেকে একই ভাবে দু’টি সুড়ঙ্গের জন্য নামানো হবে আরও দু’টি টিবিএম।
মাটির কতটা নীচে কাজ করবে এই টিবিএম? গঙ্গার নীচে মেট্রোপথ স্থাপনের পরিকল্পনার দায়িত্বে যে সংস্থা, সেই ‘রাইট্স’-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার দুলালচন্দ্র মিত্র বলেন, “বেলেঘাটায় এর গভীরতা যদি ৩০ মিটার, অর্থাৎ ১০০ ফুট হয়, হাওড়ায় তা হবে ৪০ মিটার, প্রায় তেরোতলা বাড়ির উচ্চতা। নদীগর্ভে যান চলাচলের জন্য এটাই হবে এশিয়ার প্রথম সুড়ঙ্গ।” এর আগে দিল্লি এবং বেঙ্গালুরুতে ভূগর্ভে মেট্রো রেলের সুড়ঙ্গ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়েছে টিবিএম।
তবে, ইস্ট-ওয়েস্ট কাজ যতটা হওয়া উচিত ছিল, বিভিন্ন কারণে তা হয়ে ওঠেনি। ২০০৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বলা হয়েছিল, ২০১২-র মধ্যে সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ এবং ২০১৪-র মধ্যে বাকি অংশের (হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত) কাজ শেষ হবে। সেই লক্ষ্যমাত্রা থেকে মেট্রো অবশ্য এখনও দূরে।
|