রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতবর্ষ উদ্যাপনে সরকারি আর্ট ও ক্রাফ্ট কলেজে রবীন্দ্রচিত্র প্রদর্শনীতে যে ২০টি ছবি প্রদর্শিত হয়েছিল, তার একটি ছবিও রবীন্দ্রনাথের আঁকা নয়। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টকে দেওয়া ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’-র দুই বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টে এমনটাই উল্লেখ রয়েছে। প্রদর্শিত ছবিগুলির বেশির ভাগই দিয়েছিলেন আসানসোলের বাসিন্দা জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি। একটি ছবি ছিল চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরীর নিজস্ব সংগ্রহের। সব জাল।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ সরকারি আর্ট কলেজ আয়োজিত ওই প্রদর্শনী দেখে তাপস সরকার নামে এক ব্যক্তির সন্দেহ হয়, ছবিগুলি জাল। হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন তিনি। হাইকোর্ট সব ছবিই জাদুঘরের হেফাজতে পাঠিয়ে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াকে সেগুলি যাচাইয়ের দায়িত্ব দেয়। ছবি পরীক্ষার জন্য তৈরি হয় দু’টি বিশেষজ্ঞ কমিটি একটি ভিস্যুয়াল, অন্যটি সায়েন্টিফিক। দুই কমিটির সাত সদস্য ছবিগুলি পরীক্ষা করেন। এর জন্য জাদুঘরে একটি ল্যাবরেটরি গড়ে কেন্দ্র। আগামী শুক্রবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল ও বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলায় চূড়ান্ত রায় দেবে। ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, রায়ের পরে এই চক্রের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা চালু করা যাবে।
আবেদনকারীর আইনজীবী কৌশিক চন্দ হাইকোর্টকে জানান, জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮টি ছবি প্রদর্শনীতে দেন। জয়ন্তবাবু বলেছেন, তিনি ছবিগুলি রানি মহলানবিশের কাছ থেকে পান। আদালতে কৌশিকবাবুর অভিযোগ, এই প্রদর্শনী করে ছবিগুলি রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি বলে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল একটি চক্র। পরে জাদুঘরেও তাদের আর একটি প্রদর্শনী করার দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু তার আগেই হাইকোর্ট সব ছবি পরীক্ষার জন্য জাদুঘরে পাঠিয়ে দেয়।
অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এম ফারুক বলেন, সায়েন্টিফিক কমিটিতে ছিলেন লখনউয়ের এনআরএলসি-র ডিরেক্টর বি ভি খারবাদে, দেরাদুনের এএসআই-এর ডিরেক্টর কে এস রানা এবং নয়াদিল্লির এনএমআই-এর ডিরেক্টর এম ভি নায়ার। তাঁরা কালারোমেট্রিক অ্যানালিসিস, স্টিরিও মাইক্রোস্কোপিক এগ্জামিনেশন, ইনফ্রা-রেড স্পেকটোমেট্রি এবং এক্সআরএফ অ্যানালিসিস পদ্ধতিতে ছবি পরীক্ষা করেন। ভিস্যুয়াল কমিটিতে জাতীয় আর্ট গ্যালারির প্রধান রতন পারিমুর নেতৃত্বে এম ভি নায়ার, বি ভি খারবাদে এবং ডি কে বর্মা ছবি পরীক্ষা করেন। কমিটি জানায়, হিস্টোরিক্যাল মেথডোলজি ও রবীন্দ্রনাথের প্রকৃত ছবির সঙ্গে মিলিয়ে বেশ কিছু মাপকাঠিতে প্রমাণিত, ছবিগুলি জাল।
|
জাল ছবির একটি।
—নিজস্ব চিত্র |
•• বিবেচনায় ভুল হয়েছিল। তবে স্বস্তিও পেলাম। কারণ চেয়েছিলাম এর একটা বিচার হোক, সত্য বেরিয়ে আসুক।
ছবিগুলিও তো আমাদের
নিজস্ব সংগ্রহের
নয়, জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছিলেন।
দীপালি ভট্টাচার্য, আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ
•• রবীন্দ্রনাথের ছবি নিয়ে জালিয়াতি ধরা পড়ল, এতেই আমি খুশি। ব্যক্তিগত
লাভ-ক্ষতি এখানে গৌণ।
যোগেন চৌধুরী, চিত্রশিল্পী
•• ছবিগুলি দেখেই সন্দেহ হয়েছিল। এমন কাজ ছবির ইতিহাসের পক্ষে বিপজ্জনক। আর্ট কলেজের উচিত ছিল, সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে তবেই প্রদর্শনী করা।
আর শিবকুমার, বিশ্বভারতীর কলাভবনের অধ্যাপক
•• বুঝেছিলাম ছবিগুলি নকল। কিন্তু এই রকম অসাধু কাজ ঠেকানোর যোগ্য পরিকাঠামো এ দেশে নেই। এমনকী, যে
ভাবে শিল্পকর্মের প্রামাণ্যতা যাচাই হয়, তাতেও অসাধুরা
সুযোগ পেতে পারে। ভূতটা সর্ষের মধ্যেই।
অরুণ ঘোষ, শিল্প বিশেষজ্ঞ
•• তখন দেখে বুঝতে পারিনি। ভেবেছিলাম বুঝি রবীন্দ্রনাথের নতুন কাজ। এখন দেখছি সবই ভুয়ো। খুব দুঃখের কথা।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সাহিত্যিক
|
|