দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের মুখে দলীয় কর্মীদের যে কোনও রকম ‘দুর্নীতি’ থেকে ‘বিরত’ থাকার জন্য আরও এক বার ‘সতর্ক’ করে দিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত বক্সীর নির্বাচনী প্রচারে শুক্রবার পিকনিক গার্ডেনে মমতা দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “তৃণমূল ভিক্ষে করে ভোটের খরচ তোলে। কিন্তু কেউ যদি জোর করে পয়সা তোলে (তোলা আদায়), তা হলে তাকে একঘরে করে দেওয়া হবে।”
তৃণমূল শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যা, দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ যে তাঁর কাছে আসছে, তা প্রকারান্তরে ‘স্বীকার’’ করে নিয়েছেন দলনেত্রী এবং একই সঙ্গে বুঝিয়ে দিয়েছেন, দুর্নীতি তিনি বরদাস্ত করবেন না। তবে দলের অন্য অংশ অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাদের অভিমত, গত বিধানসভা ভোটের সময় সিপিএম তৃণমূলের বিরুদ্ধে কালো টাকার যে অভিযোগ এনেছিল, তা-ই ‘নস্যাৎ’ করতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি যে ‘নিরপেক্ষ’ ভাবে সরকার চালাচ্ছেন, তা বোঝাতে গিয়ে মমতা জানান, বিধানসভা ভোটের পর থেকে রাজ্যে ‘বদলার রাজনীতি’কে তিনি প্রশ্রয় দেননি। তাঁর কথায়, “সিপিএম কর্মীদের বুক দিয়ে আগলেছি! বরং, দু’একটা যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে আমাদের দলের কর্মীদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিয়েছি।” রাজ্যে ‘সন্ত্রাসে’র পরিবেশ নিয়ে সিপিএমের অভিযোগের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “আমরা মৃত্যুর রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। তাই এত লড়াই করতে হয়েছে। আমি হিংসা, বন্দুক, সন্ত্রাসে বিশ্বাস করি না। মানুষের ভালবাসায় বিশ্বাস করি।” |
রাতে দেখতে পাওয়া যায় এমন বিশেষ দূরবিন দিয়ে নজরদারি মমতার সুরক্ষায় নিজস্ব চিত্র । |
দিল্লিতে বাংলার উন্নয়নের কথা বলার জন্য তিনি তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ সহকর্মী’ সুব্রতবাবুকে কেন লোকসভায় পাঠাতে চাইছেন, তা বোঝাতে গিয়ে মমতা বলেন, “বক্সী থাকা মানেই এই কেন্দ্র আমার কাছেই থাকা। বক্সী থাকলে সুবিধে। আমি যা বলব, ও তা-ই করবে।” সভার শ্রোতাদের সঙ্গে সুব্রতবাবুর পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে মমতা বলেন, “ওর হৃদয়টা ভাল! খুব সৎ।” দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর ‘নিবিড়’ সম্পর্ক বোঝাতে মমতার আরও বক্তব্য, “আমি এখানে থাকতে দক্ষিণ কলকাতা কাউকে দেব না! আমি এখানেই জন্মেছি, এখানেই বড় হয়েছি, এখানেই পার্কে খেলেছি।” দক্ষিণ কলকাতা লোকসভার অন্তর্গত ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন সুব্রতবাবু। বিধায়ক পদে তিনি ইস্তফা দেওয়ায় মমতা ভবানীপুর থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। সেই প্রসঙ্গ টেনেই মমতা বলেন, “বক্সীর সঙ্গে আমার সুন্দর বোঝাপড়া রয়েছে। আমার যখন প্রয়োজন, দক্ষিণ কলকাতা বক্সী আমাকে ছেড়ে দেবে।” প্রার্থী সুব্রতবাবু মমতার ‘দুর্গ’ দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রকে ‘সুরক্ষিত’ রাখার আবেদন জানান।
সুব্রতবাবুর হয়ে এ দিন মোমিনপুর থেকে খিদিরপুর পর্যন্ত প্রচার-মিছিলে নেতৃত্ব দেন যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীও। পরে শুভেন্দু বলেন, “জঙ্গলমহল বা পাহাড় গোটা রাজ্য জুড়ে উন্নয়ন ও শান্তিপ্রক্রিয়ার উদ্যোগ কার্যকরী হচ্ছে তৃণমূল নেত্রীর নেতৃত্বেই। দক্ষিণ কলকাতায় সুব্রতবাবুকে বিপুল ভোটে জিতিয়ে নেত্রীর সেই উন্নয়নমুখী হাতকে শক্তিশালী করুন।” সুব্রতবাবুর সমর্থনে এ দিন দুপুরে হাজরার যতীন দাস পার্ক থেকে গোলপার্ক পর্যন্ত আইএনটিটিইউসি-সমর্থিত শ্রমিক সংগঠনগুলি পদযাত্রা করে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতা তথা বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। |