খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি |
বামেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই সরকার-বিরোধিতায় তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
কে বড় বামপন্থী? সিপিএম-সিপিআই, নাকি তৃণমূল কংগ্রেস? খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নিতে কেন্দ্রের অনুমোদনের প্রশ্নে যুযুধান দুই প্রতিপক্ষের তুল্যমূল্য বিরোধিতা যেন আজ এই প্রশ্নটাই তুলে দিল। পেট্রোলের পরে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগফের বিরোধীদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে সরকারের সমালোচনা করল তৃণমূল কংগ্রেস। আর তা করতে গিয়ে বামেদের সঙ্গে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমে পড়লেন তৃণমূলের সাংসদরা।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে খুচরো ব্যবসায় ৫১ শতাংশ বিদেশি প্রত্যক্ষ লগ্নিতে অনুমোদন দেওয়ার প্রতিবাদে আজ সংসদে সরব হন চার বাম দলের সাংসদরা। আর এই প্রশ্নে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয় তৃণমূল কংগ্রেসও! সাম্প্রতিক অতীতে সম্ভবত এই প্রথম সংসদে এ ধরনের ছবি দেখা গেল। তৃণমূলের সাংসদরা অবশ্য বামেদের মতো ওয়েলে নেমে হইচই করেননি। সরকারের শরিক হিসেবে সংযত থেকেই ওয়েলের কাছাকাছি এসেও থেমে যান। কিন্তু সরকার বিরোধিতার ভাষায় বামেদের সঙ্গে তাঁদের বিশেষ ফারাক ছিল না।
বাম-তৃণমূলের পাশাপাশি বিজেপি-সহ সবক’টি বিরোধী দল এমনকী সরকারের আর এক শরিক ডিএমকে-ও এ দিন সংসদে সরব হয়। সংসদের উভয় কক্ষেই বিরোধীদের সঙ্গে সরকারের দুই শরিকও তুমুল হইচই বাধিয়ে দিলে সভার কাজকর্ম থমকে যায়। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রী আনন্দ শর্মার বিবৃতি রাজ্যসভায় ছিঁড়ে ফেলেন বাম ও বিজেপির কয়েক জন সাংসদ। সংসদের উভয় কক্ষের অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়। ফলে আজ নিয়ে টানা চার দিন কার্যত অচল হয়ে রইল সংসদের উভয় কক্ষ।
তবে আজই শেষ নয়। বিষয়টি নিয়ে সোমবারও যে সংসদে অশান্তি হতে পারে, আজ তারও ইঙ্গিত দিয়েছেন বাম, তৃণমূল ও বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি ও বামেরা এ ব্যাপারে সংসদে মুলতবি প্রস্তাব আনতে চান। কিন্তু লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যে হেতু আমরা সরকারের শরিক, তাই সংসদীয় বিধিবদ্ধতার কারণে মুলতবি প্রস্তাব আনতে পারি না। তবে কৌশলগত ভাবে বিরোধিতা করব।” তিনি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে জানান, সরকারে থেকেও বিরোধিতা কোন স্তরে নিয়ে যাওয়া যায়, তা অতীতে দেখিয়েছে তৃণমূল।
বামেরা আগাগোড়াই খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করেছে। তাদের যুক্তি, এর ফলে মার খাবেন দেশের কৃষক, ক্ষেতমজুর এবং ছোট ব্যবসায়ী শ্রেণি। আজ সেই সুরেই বিরোধিতা করতে গিয়ে তৃণমূলের বক্তব্য, সরকার এমন কোনও নীতি নিতে পারে না যা কৃষক, ছোট ব্যবসায়ী, ক্ষেতমজুরদের জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আজ লোকসভাতেও প্রসঙ্গটি তুলতে সচেষ্ট হয়েছে তৃণমূল। তাদের যুক্তি, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত ছোট কৃষক ও দোকানদারদের গ্রাস করবে। তা ছাড়া, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা প্রথমে বাড়তি টাকা দিয়ে কৃষকদের থেকে পণ্য কিনবে এবং তা মজুত করবে। উৎসাহী হয়ে কৃষকরা অতি উৎপাদন করলে পরের বছর এমন পরিস্থিতি হবে যে তারা দাম পাবে না। তখন কম দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হবে কৃষক। সে ক্ষেত্রে কৃষক আত্মহত্যার নতুন পথ খুলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তৃণমূলের। আর সেই কারণেই তাদের আপত্তি। ডিএমকে-ও একই সুরে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।
সিপিএম নেতা বাসুদেব আচারিয়া বলেন, “তৃণমূল, ডিএমকে-র মতো ইউপিএ-র শরিক-সহ সব বিরোধী দলই সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে।” বাসুদেব এবং সিপিআই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, তাঁরা সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মুলতবি প্রস্তাব আনবেন। জানা গিয়েছে, এ বিষয়ে গুরুদাস আজ সুদীপের সঙ্গে কথাও বলেন। তবে সুদীপ তৃণমূলের সীমাবদ্ধতার কথা তাঁকে জানিয়ে দেন।
বিষয়টি নিয়ে মুলতবি প্রস্তাব আনার হুমকি দিয়েছে বিজেপি-ও। পরে দলের নেতা মুরলী মনোহর জোশী বলেন, “বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, তারা যেন কেন্দ্রের এই নীতি রূপায়ণ না করে। কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিরও এ পথে হাঁটা উচিত।”
তবে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী পবন বনশল বলেন, “কালো টাকা উদ্ধারের বিষয় নিয়ে বিজেপি-র আনা একটি মুলতবি প্রস্তাব ইতিমধ্যেই গৃহীত হয়েছে। সংসদের একই অধিবেশনে দু’বার মুলতবি প্রস্তাব আনা যায় না।”
তৃণমূল-ডিএমকে-র বিরোধিতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁর বক্তব্য, প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই নিজের মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। |