সংস্কারে অটল কেন্দ্র বোঝাবে মমতাকে
রাজ্যের রক্ষাকবচ রেখেই
সায় বিদেশি লগ্নিতে
লিখিত আপত্তি জানিয়েছিল তৃণমূল, ডিএমকে। প্রশ্ন তুলেছিলেন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ এবং এ কে অ্যান্টনির মতো কংগ্রেস নেতারা। মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে কাল ‘ওয়াক আউট’-ও করেন রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদী। তবু সেই বিরোধিতা অগ্রাহ্য করেই কাল এক ছাদের তলায় একাধিক ব্র্যান্ডের পণ্যের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির অনুমোদন আদায় করে নিয়েছে মনমোহন-মন্ত্রিসভা। বেশ কিছু আর্থিক ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার কারণেই মন্ত্রিসভাকে শরিকদের মতও উপেক্ষা করতে হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রধান কারণটি অবশ্যই সরকারের ‘সামগ্রিক ভাবমূর্তি’ বদলানো। দুর্নীতির মোকাবিলা করতে গিয়ে সরকার সংস্কারের পথ থেকে সরে এসেছেন, এই ধারণা বদলানোরও দায় ছিল প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। দায় ছিল বিনিয়োগকারী ও শিল্পমহলের আস্থা ফেরানোরও। এক দিকে যখন টাকার দাম হু হু করে নেমে আসছে এবং শেয়ার মার্কেটে ধস নামছে, তখন সেই দায় আরও বড় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গত কালের সেই সিদ্ধান্তের ফল আজই দেখা গিয়েছে শেয়ার বাজারে। সামগ্রিক ভাবে সেনসেক্স পড়েছে এ দিনও। তবে এক ছাদের তলায় একাধিক ব্র্যান্ডের পণ্যের খুচরো ব্যবসায় যে সব সংস্থা জড়িত, সেই শপার্স স্টপ, প্যান্টালুনস, বিশাল, ট্রেন্টের মতো রিটেল সংস্থাগুলির শেয়ারের দাম বেড়েছে।
মনমোহন সরকার মনে করছে, ইউরোপের সঙ্কটের ফলে বিদেশি লগ্নির প্রায় সবটাই যে ভাবে আমেরিকায় চলে যাচ্ছে, তার কিছু অংশ এ বার ভারতেও আসবে। যে সব বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতের বাজার থেকে পুঁজি তুলে নিচ্ছিলেন, তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ইতিবাচক মনোভাব’ দেখে ফের আস্থা ফিরে পাবেন। অর্থ মন্ত্রক মনে করছে, এর ফলে ‘রিয়েল এস্টেট’ ক্ষেত্রও চাঙ্গা হয়ে উঠবে। কারণ মন্দার কথা ভেবে যে সব সংস্থা মল বা শপিং কমপ্লেক্স তৈরির পরিকল্পনা শিকেয় তুলে রেখেছিল, তারা ফের মাঠে নামবে।
সরকারি সূত্রের খবর, রেলমন্ত্রী কাল বৈঠক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে প্রণববাবু তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, এতে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষতির আশঙ্কা নেই। কারণ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা কৃষকদের স্বার্থের কথা ভেবে রাজ্যে রিটেল সংস্থাগুলির উপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। সেই শর্তও রাখা হয়েছে। কিন্তু অন্য রাজ্য এতে সুফল মিলবে বলে মনে করলে, তৃণমূল তাতে বাধা দিতে পারে না। কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, জমি বিল বা পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ানো নিয়ে তৃণমূল তাদের বিরোধিতাকে যে পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল, এ বারে তা করেনি। পুরোপুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণের রাস্তা আটকে দাঁড়াননি।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাও আজ আশা প্রকাশ করেছেন, মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আসবে। কারণ, কৃষিজাত পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় উন্নতি হবে। কৃষক ও ক্রেতাদের মধ্যে দালাল-ফড়েরাই এত দিন লাভের গুড় খেয়ে যেত। কৃষকরা ফসলের কম দাম পেতেন, আবার ক্রেতাদেরও বেশি দাম দিতে হত। সংগঠিত খুচরো ব্যবসায় কৃষকরাও আগের তুলনায় বেশি দাম পাবেন, ক্রেতাও পণ্য পাবেন কম দামে। তাঁরা বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে বাছাই করারও সুযোগ পাবেন। সব থেকে বড় কথা, এর ফলে দেশে সঠিক ভাবে বিনিয়োগ আসবে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার হিসেবে, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ এলে তিন বছরে এক কোটি কর্মসংস্থান তৈরি হবে (সরকারি হিসেবে, খুচরো ব্যবসা কেন্দ্রগুলিতে ৪০ লক্ষ, বাকিটা জোগান ও পরিবহণ ক্ষেত্রে।
গত কালের বৈঠকে জয়রাম রমেশ এবং এ কে অ্যান্টনির মতো কংগ্রেসের মন্ত্রীদের বক্তব্য ছিল, আরও সময় নিয়ে সমীক্ষা করে তবেই এটা করা উচিত। আপত্তি তোলেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহও। আজ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কংগ্রেসের কোর গ্রুপেও এ নিয়ে আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত হয় বিরোধীদের অপপ্রচার ও শরিকদের আশঙ্কা দূর করতে কংগ্রেস সংসদের ভিতরে-বাইরে প্রচার চালাবে। বোঝাবে, মানুষের এতে কী লাভ হবে। স্পষ্ট ভাবে জানাবে, কেন্দ্র আদৌ রাজ্যগুলির উপর এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে না। তৃণমূল, বিজেপি বা বাম-শাসিত সরকারগুলি নিজেদের মতো করে এটি রূপায়ণ করতে বা প্রয়োজনে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। শিল্প-বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা এ দিনই সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, যে কোনও রাজ্যই চাইলে বহুজাতিক সংস্থাগুলিকে খুচরো ব্যবসার অনুমতি আটকে দিতে পারে। তাঁর যুক্তি, বিদেশি খুচরো ব্যবসায়ী সংস্থা প্রথমে কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব দেবে। কেন্দ্র তা অনুমোদন করলেও তাকে শপিং মল খোলার সময় রাজ্য সরকারের থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। এর জন্য জমি, জল ও বিদ্যুতের ব্যবস্থাও করবে রাজ্যই। সে ক্ষেত্রেও রাজ্য বাধা তৈরি করতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্য রাজ্যগুলির আপত্তির কথা ভেবেই একে কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ তালিকায় রাখা হয়েছে। তবে যে কোনও ‘প্রগতিশীল’ রাজ্য সরকারই নিজের রাজ্যে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি চাইবে বলে মন্তব্য করেন আনন্দ। এর আগে কলকাতায় গিয়ে ও গত কাল বাণিজ্য মেলায় আনন্দ শর্মা এ বিষয়ে মমতার সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। আজ আনন্দ জানান, প্রয়োজনে তিনি আবার মমতার সঙ্গে কথা বলবেন। মনমোহন সরকারের শীর্ষ স্তরের বক্তব্য, আগামী দিনে অসামরিক বিমান চলাচল ক্ষেত্রেও বিদেশি লগ্নির অনুমোদন দেওয়ার পথে হাঁটতে চাইছে সরকার। তার আগে দ্বিতীয় দফার সংস্কার কর্মসূচিতে মনমোহন-সরকার যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সেই বার্তা দেওয়াটা জরুরি ছিল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.