|
|
|
|
ওয়াংখেড়ে বুঝিয়ে দিল, সচিন-শোয়ের মঞ্চ তৈরি |
সুমিত ঘোষ • মুম্বই |
ড্রেসিংরুমের ঠিক ডান দিকের গ্যালারিতে পোস্টারটা তুলে ধরেছিল এক কিশোর। ‘10-ডুলকার, আই উইশ ইউ অল দ্য বেস্ট ফর দ্য সাক্সেস অব হান্ড্রেড্থ সেঞ্চুরি’। মোদ্দা কথা হল, তোমার শততম সেঞ্চুরির জন্য শুভেচ্ছা জানাই। সচিন বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডিং করতে করতে পোস্টারটা এক সময় দেখলেন। তার পর কিশোরকে আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে হাত নাড়লেন। সঙ্গে সঙ্গে গ্যালারি গর্জন করে উঠল।
স্যা-চি-ন স্যা-চি-ন!
তা প্রথম দিনের শেষে সচিন ভক্তদের সবথেকে বেশি আশ্বস্ত করছে ওয়াংখেড়ের পিচ। সঞ্জয় মঞ্জরেকর এত বছর ধরে এখানকার পিচ দেখছেন। তিনি এ দিন টুইট করেছেন, ‘বহু কালের মধ্যে ওয়াংখেড়েতে আমার দেখা সেরা ব্যাটিং পিচ’। শেষ দশটা টেস্টের মধ্যে এখানে আটটার ফয়সালা হয়েছে। মাত্র দু’টো ড্র। তার মধ্যে ভারত জিতেছে পাঁচটায়। কিন্তু এই হিসেবটা পুরনো ওয়াংখেড়ের। যেখানে শেষ টেস্ট ম্যাচ হয়েছিল ২০০৬-এর মার্চে আর তাতে এখনকার এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতোই আনকোরা ইংল্যান্ড ২১২ রানে হারিয়ে দিয়ে গিয়েছিল শেষ ইনিংসে দ্রাবিড়ের ভারতকে ১০০ রানে অলআউটের লজ্জা-সমেত। প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পর হওয়া টেস্ট ম্যাচের পিচ কেন ব্যাটিং-স্বর্গ করা হয়েছে, বোঝার জন্য ফেলুদা হওয়ার দরকার নেই। সিরিজের থিম সং-টাই তো সেট হয়ে গিয়েছে কবে থেকে। সচিন তেন্ডুলকরের শততম সেঞ্চুরির লটারি জিতে নাও। |
|
প্রথম দিনের শেষে টিম শুয়ে, অধিনায়কও। ছবি: উৎপল সরকার। |
এমনিতে ক্রোড়পতি বনবার ফোনলাইন ওয়াংখেড়ের আর খোলা পাওয়ারই কথা নয়। কোটলায় হয়ে যেতে পারত। ইডেনে হয়ে যেতে পারত। বরাতজোরে পাওয়া গিয়েছে যখন, তখন ঝাঁপিয়ে পড়ো। ম্যাচের ফয়সালার চেয়েও অনেক জরুরি শততম সেঞ্চুরির ফয়সালাটা হয়ে যাওয়া। ও দিকে, মুম্বইয়ের প্রাক্তন ক্রিকেটারেরাও প্রার্থনারত। শিবাজি পার্কে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একনাথ সোলকার ক্রিকেট অ্যাকাডেমির উদ্বোধন ছিল। সুনীল গাওস্কর। গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ ছিলেন। চন্দ্রশেখর ছিলেন। সেখানে অজিত ওয়াড়েকর বললেন, “সচিন মুম্বইয়ের ছেলে। আমরা সবাই চাই ও এখানে শততম সেঞ্চুরিটা করুক। সিরিজে রাহুল সেঞ্চুরি করেছে। লক্ষ্মণ করেছে। ধোনি করেছে। এ বার সচিনের পালা।”
ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসকদের জন্য যেটা চিন্তার কারণ সেটা হচ্ছে, শততম সেঞ্চুরির মনোমোহিনী আকর্ষণও মাঠে লোক টানতে ব্যর্থ। মেরেকেটে সাত-আট হাজার লোক প্রথম দিনে। হাফ সেঞ্চুরি করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রাথওয়েট বলে গেলেন, “এত কম লোক দেখে সত্যিই খুব অবাক হয়েছি। বিশেষ করে এটা যখন সচিনের ঘরের মাঠ। আর ও এমন একটা মাইলস্টোনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।” যে সাত-আট হাজার লোক মাঠে ছিলেন, তাঁদের জন্য লটারিতে প্রথম দিন ভারতের ব্যাটিং বাঁধেনি। এখন তাই নানা হিসেবনিকেশ চলছে। সচিনের শততম সেঞ্চুরির লগ্ন কখন উদয় হতে পারে? কারও কারও আশঙ্কা, যা পিচ হয়েছে, সহবাগ না ট্রিপল সেঞ্চুরি-ফেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বসেন! মোটামুটি যা দাঁড়াচ্ছে, তৃতীয় দিনটাই সবথেকে আরাধ্য দিন হতে যাচ্ছে। |
মুম্বই টেস্টের স্কোর |
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস |
বারাথ ক ধোনি বো অশ্বিন ৬২,
ব্রাথওয়েট ক কোহলি বো অশ্বিন ৬৮,
কার্ক এডওয়ার্ডস ব্যাটিং ৬৫,
ব্র্যাভো ব্যাটিং ৫৭,
অতিরিক্ত ১৫,
মোট ২৬৭-২।
পতন: ১৩৭, ১৫০।
বোলিং: ইশান্ত ১৭-৬-৩৩-০, অ্যারন ১৬-৩-৪৭-০, প্রজ্ঞান ২৬-৭-৫৫-০,
অশ্বিন ২৭-২-৮৬-২, সহবাগ ৩-০-২৩-০, কোহলি ২-০-৯-০। |
|
চন্দ্রপলহীন এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিমের প্রথম সাত ব্যাটসম্যান মিলিয়ে যা টেস্ট খেলেছেন, সহবাগ একা খেলেছেন তার চেয়ে বেশি। সেই টিমই প্রথম দিনের শেষে তুলেছে ২৬৭-২। দু’টো উইকেটই তুললেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ক্রমশ হরভজন সিংহের অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনাকে তিনি আরও মেঘাচ্ছন্ন করে তুলছেন। যে চার ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান ক্রিজে এসেছেন, প্রত্যেকে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। দুই ওপেনার আদ্রিয়ান বারাথ এবং ব্রাথওয়েট প্রথম উইকেটে তুলে দিয়ে গেলেন ১৩৭। ডারেন ব্র্যাভো যখন ব্যাট করছেন, তখন আবার কেউ কেউ মনে করিয়ে দিলেন, ব্রায়ান লারার মতো শুধু ভাবভঙ্গি বা ব্যাটিং স্টাইল নয়। ব্র্যাভোর পরিসংখ্যানটাও লারার মতো। প্রথম বারো টেস্ট থেকে একই রকমের রান আর গড়। তেরোতম টেস্টে লারা বড় সেঞ্চুরি করেছিলেন। এখানে ব্র্যাভো ৫৭ নট আউট। ৩৩ রানের মাথায় যদিও তাঁর সহজ ক্যাচ স্লিপে ছাড়লেন দ্রাবিড়। ব্যাটিংয়ের মতোই স্লিপ ফিল্ডিংয়ের জীবন কত মহান অনিশ্চয়তায় ভরা। সে দিন ইডেনে দুর্দান্ত ক্যাচ নিলেন। আজ ওয়াংখেড়েতে সহজ ক্যাচ ফেললেন।
বরুণ অ্যারনের দুর্ভাগ্য, সচিন-শোয়ের মঞ্চে তাঁর অভিষেক ঘটল। সকালে মাঠে নামার আগে তাঁর হাতে টেস্ট ক্যাপ তুলে দিলেন ভিভিএস লক্ষ্মণ। আর সারা দিন ধরে চলল উমেশ যাদবকে বসিয়ে তাঁকে খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে কাটাছেঁড়া। ভারতীয় দল সূত্রে খবর, অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজের জন্য গতিসম্পন্ন পেসার খোঁজা হচ্ছে। উমেশ যাদব মোটামুটি টিকিট বুকিং করে ফেলেছেন। এ বার অ্যারনকে দেখে নিতে চায় টিম। তাই তাঁকে এখানে খেলানো হল। অ্যারন এ রকম ব্যাটিং পিচেও ঘণ্টায় ১৪৩-১৪৪ কিলোমিটার গতিবেগ তুললেন। বললেন, “আমার কাজ হচ্ছে, ভাল বোলিং করে যাওয়া। ঠিক জায়গায় বল রাখা। আর পিচ সাহায্য করছে না দেখে মোটেও উদ্যম হারিয়ে ফেলি না। এটাও তো একটা বোলারের জীবনের মধ্যেই পড়ে।” টেস্ট ক্রিকেটে মাত্র এক দিন বয়স। সেই তুলনায় ভীষণ পরিণত শোনাল তাঁকে। অ্যারন এবং উমেশ যাদব ভারতীয় পেস বোলিংয়ের নকশাটাই পাল্টে দিয়ে যেতে পারেন বলে অনেকে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। কপিলের ছিল সুইং। এখনকার সেরা পেসার জাহির খানেরও তাই। কিন্তু অ্যারনদের মূলধন গতি।
শততম সেঞ্চুরির জন্য সাজানো মণ্ডপে প্রথম দিন শুধু ফিল্ডিং করেই কাটল তেন্ডুলকরের। কিন্তু তারই মাঝে ভারতীয় পেস বোলিংয়ের নিঃশব্দ বিবর্তন ঘটে চলল। এই ওয়াংখেড়ে খুঁড়েই প্রাচীন টেস্ট ম্যাচের কঙ্কাল বের করলে দেখা যাবে টেস্ট ম্যাচের প্রথম সকাল। ভারত টস হেরে ফিল্ডিং করছে। এক দিক থেকে নতুন বলে শুরু করছেন সুনীল গাওস্কর। অন্য দিক থেকে আবিদ আলি! |
|
|
|
|
|