অধিনায়কের প্রতি অনাস্থা, রণদেবের প্রতি অনাগ্রহের
বাতাবরণে আজ বাংলার নির্বাচনী বৈঠক
বনমনের হালকা ছায়াকে আস্তরণ করে বুধবার বসতে যাচ্ছে বাংলা ক্রিকেটের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী বৈঠক। সুদূরপ্রসারী হতে পারে যার প্রভাব।
এই বৈঠকের মূল বিষয় হওয়া উচিত গুজরাত এবং মধ্যপ্রদেশের মতো দুর্বল দুই প্রতিপক্ষকে পেয়ে বাংলা ১০ পয়েন্টের পরিবর্তে মাত্র ৪ পয়েন্ট পেল কেন? কে বা কারা এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী? কী শুদ্ধিমূলক ব্যবস্থা দোষীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে? কেন এত ভাল সূচি পেয়েও গত বছরের মতো বাংলা দ্রুত লড়াই থেকে হারিয়ে যাচ্ছে?
আপাতত যা পরিস্থিতি, টিম ম্যানেজমেন্ট এবং সিএবি-র একাংশ সম্ভাব্য খলনায়ক চিহ্নিত করে ফেলেছেন। তাঁর নাম রণদেব বসু। প্রথম দু’ম্যাচে মাত্র দু’উইকেট পাওয়া রণদেব যাতে নিজেই নির্বাচনী বৈঠকের আগে সরে যান তার জন্য এ দিন তাঁকে হালকা অনুরোধ করেও দেখা হয়েছিল। ছকটা ছিল, রণদেব নিজেই যদি সরে যান, তাঁকে বাদ দেওয়া নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ওঠার সম্ভাবনা নেই। রণদেব অবশ্য প্রস্তাবে রাজি হননি। ফলে ছককারীদের সমস্যা বেড়েছে।
স্থানীয় ক্রিকেটমহলের একটা বড় অংশ অবশ্য আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছেন টিম ম্যানেজমেন্টের একাংশ যে ভাবে রণদেব-সহ কিছু সিনিয়রের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। এঁদের একজন সহ-খেলোয়াড়দের বলেছেন, “ড্রেসিংরুমে আর আসতেই ইচ্ছে করে না রে।” অন্দরমহলের পরিস্থিতির কথা শুনে মনে হতে পারে, দু’ম্যাচে খেলেই আকাশ থমথমে আর মেঘলা হয়ে যাওয়া এই দলের স্বাভাবিক পরিণতি হওয়া উচিত।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কি তাঁর ক্রিকেটজীবনের পরিচিত কোনও ড্রেসিংরুমের সঙ্গে বাংলার হালফিলের ড্রেসিংরুমের মিল পাচ্ছেন? টিভি অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকায় রাতে ফোনে তাঁকে ধরা গেল না। ধরা গেলে জিজ্ঞেস করা যেত এটা কি মিনি গ্রেগ চ্যাপেলের ড্রেসিংরুম?
রণদেব: কোচ-ক্যাপ্টেনের কোপে।
চ্যাপেলের কালো তালিকায় ছিলেন সৌরভ, জাহির, হরভজন, সহবাগ এবং সচিন। ডব্লিউ ভি রামন অবশ্যই এত উদগ্র ভাবে ক্রিকেটারদের প্রতি তাঁর অপছন্দ প্রকাশ করছেন না। সত্যি বলতে কী, বাংলা কোচ হিসাবে দ্বিতীয় দফায় তাঁর ফেরত আসায় সিনিয়ররা কেউ কেউ উচ্ছ্বসিতই ছিলেন। কিন্তু অধুনা বারবারই তাঁদের মনে হচ্ছে এই রামন অন্য রামন। যিনি যেন তেন প্রকারেণ চেষ্টা করছেন সিনিয়র হঠিয়ে নতুন টিম তৈরি করার। আর তাঁকে অন্যায় মদত জোগাচ্ছেন অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি।
এমনিতে ক্যাপ্টেন-কোচের নতুনত্বে দলকে সমৃদ্ধ করতে চাওয়ার মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। পেশাদার স্পোর্টে বরং এটাই স্বাভাবিক। অস্বাভাবিকত্ব আমদানি হয়, যখন একটা টিম চাপে থাকার সময় পোড়খাওয়া সিনিয়র, যারা এত বছর পারফর্ম করে এসেছে, যারা এই সময় আরও বেশি কাজে আসতে পারে, তাদের সম্পর্কে দৃশ্যত অবিশ্বাসী হয়ে এদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করা।
রণদেব বসু। লক্ষ্মীরতন শুক্ল। সৌরাশিস লাহিড়ী। কালো তালিকায় এই তিনজন।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে মনোভাব যা-ই হোক, প্রকাশ্যে অবিশ্বাসী হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। তাঁকে তাঁর মতো থাকতে দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে মধ্যপ্রদেশ ম্যাচে যখন টিম বিপন্ন অবস্থায়, একবারও তাঁর পরামর্শ চাওয়া হয়নি। অন্য রাজ্যের ক্রিকেটারদের বেশ মজাদারই মনে হতে পারে, ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক, যাঁকে পুণে ওয়ারিয়র্স কার্যত টিম-মস্তিষ্ক হিসেবে নতুন মরসুমের জন্য নিয়োগ করছে, এই বাংলা দলে অন্তত প্রথম দু’ম্যাচে তাঁর পরামর্শ গুরুত্বহীন থেকেছে।
বাইশ বছর পিছনে ফিরে মনে পড়ছে, বাংলার যে দল রঞ্জি জিতেছিল ড্রেসিংরুমের বাইরে তাদের স্পিরিট মনোজের টিমের চেয়েও খারাপ ছিল। রঞ্জি ফাইনালের আগে টিমের শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যানকে হাতে কালো তাগা পরিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী। পাছে টিমমেটদের কারও কারও কুনজর স্বামীর অনিষ্ট না করে। অথচ সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সেই দলের ড্রেসিংরুম স্পিরিট ছিল অসাধারণ। টিমে এমন তিনটে ভাগ ছিল যার পাশে মনোজদের একে অপরের প্রতি বৈরিতাকে শিশুসাহিত্য মনে হবে। কিন্তু টিমটা একটা কমন মোটিভেশনে কাজ করত। বাংলাকে জিতিয়ে ফেরা। এমন এককাট্টা ছিল সেই স্পিরিট যে, মাঠে মনে হত এঁদের সকলের অধিনায়কের প্রতি প্রশ্নাতীত আনুগত্য। মাঠ দেখে বোঝার উপায় ছিল না, ড্রেসিংরুমের বাইরের আসল ছবিটা কী?
মনোজ তিওয়ারির দলের সমস্যা হল, ক্যাপ্টেন সম্পর্কে দলের একাংশের সেই পেশাদারি বিশ্বাস-ই নেই। মনোজ দলের সেরা ব্যাটসম্যান হতে পারেন। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে তাঁর আচরণ অত্যন্ত বিতর্কিত। মাঠে ট্যাকটিক্যাল নানা পরিবর্তন নিয়েও বারবার প্রশ্ন উঠছে। দীপ দাশগুপ্ত-র নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটির বুধবার তাঁকে প্রথম জিজ্ঞেস করা উচিত, টিমে তিন জন পেস বোলার নিয়ে তুমি আবার ঘাস কাটিয়ে দিলে কেন? তোমার বোলিং অ্যাটাক যদি পেস নির্ভর হয়, তুমি বারবার করে তাদের জন্য ঘাসহীন পিচের ব্যবস্থা করছ কেন? সৌরভ আর তুমি যেখানে টিমে, সেখানে গুজরাত-মধ্যপ্রদেশের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘাসে ফেলে সরাসরি ১০ পয়েন্ট নেওয়ার চেষ্টা করবে না কেন? না কি টিমে যে ধারণা ছড়াচ্ছে সেটাই ঠিক যে, ব্যাটসম্যান মনোজ ম্যাচ জিততে চাওয়া অধিনায়কের চেয়ে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। মন্থর পিচে প্রতি ম্যাচে রান করে তুমি ইন্ডিয়া খেলতে চাইছ?
রঞ্জির গ্রুপ ‘বি’-তে বাংলা যেখানে
বরোদা ৩ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট
তামিলনাড়ু ৩ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট
গুজরাত ২ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট
হরিয়ানা ৩ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট
বাংলা ২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট
দিল্লি ৩ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট
মধ্যপ্রদেশ ২ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট
ডব্লিউ ভি রামনকে জিজ্ঞেস করা উচিত, এই টিমকে আপনি আগেও সামলেছেন। তখন এত বিতর্ক হয়নি। ক্যাপ্টেন এবং আপনি কিছু সিনিয়রকে ছেঁটে ফেলতে চাইছেন। অনুগ্রহ করে বলুন এর বদলে কে খেলবে? বাংলার হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়া পেস বোলারকে (৩১৪ উইকেট) ছেঁটে ফেলতে চান ভাল কথা। হরিয়ানা আর বডোদরায় অ্যাওয়ে ম্যাচে যদি ঘাস থাকে, আপনার তৃতীয় পেস বোলার কে? এমন কেউ, যে খেললে বিপক্ষ সমীহ করবে, এমন একটা নাম বলুন।
বাংলার যা অবস্থা, চার ম্যাচে অন্তত ৯ পয়েন্ট পেলে অবনমন বাঁচবে। ১৫/১৬ পেলে গ্রুপ থেকে ওঠার আকাশ দেখতে পাবে। কিন্তু এমনই খেয়োখেয়ির বাতাবরণ তৈরি যে, আকাশের চেয়ে গতিপথ যেন পাতালপ্রবেশের দিকে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.