|
|
|
|
যুবভারতীর সেই আঁধারের জেরে ফুটবলই অন্ধকারে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
যুবভারতীতে আঁধারের জের। এক লাখ লোকের উত্তেজনাময় আবহের তিন দিনের মধ্যেই কলকাতা ফুটবল ফিরে যাচ্ছে পুরনো অন্ধকারে। ডামাডোল আর বেনিয়মই যেখানে নিয়ম।
বড় ম্যাচের রেশ কাটতে না কাটতেই আজ বুধবার যুবভারতীতে আবার নামছে মোহনবাগান, বেঙ্গালুরুতে ইস্টবেঙ্গল। মোহনবাগানের প্রতিপক্ষ কলকাতারই তিন নম্বর দল প্রয়াগ ইউনাইটেড। কিন্তু ম্যাচের আগের দিন ক্রীড়া দফতরের একটি সার্কুলারের নির্দেশ নিয়ে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা ভারতীয় ফুটবলে। কলকাতার ক্লাবগুলোর প্রতিবাদের সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক ছড়িয়ে গিয়েছে গোয়া, পুণে, বেঙ্গালুরু, কেরলে। যার ফলে মোহনবাগানের বুধবারের ম্যাচ আর টেলিভিশনে সরাসরি দেখতে পাবেন না সমর্থকরা। দেখা যাবে ম্যাচ শুরু হওয়ার সাড়ে চার ঘণ্টা পরে। রেকর্ডিং করা।
ক্রীড়া দফতরের ওই সার্কুলারে বলা হয়েছে, “যুবভারতীর আলোর সমস্যা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যত দিন না তার সমাধান হয়, তত দিন ফ্লাডলাইটে খেলা করা যাবে না। দিনের বেলা ম্যাচ করতে হবে।” মঙ্গলবারই রাজ্য বিদ্যুৎ কোম্পানি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, রাতে খেলা হলে নির্দিষ্ট এক ট্রান্সফর্মার থেকে শুধু ওই স্টেডিয়ামেই বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে। তার পরেও এই সার্কুলার।
সার্কুলার পেয়ে রাজ্য সংস্থার পাশাপাশি জাতীয় ফুটবল সংস্থার কর্তাদেরও মাথায় হাত। আই লিগের সূচি তৈরি হয় বহু আগে। আন্তর্জাতিক টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী তাদের সব সূচি জানানো রয়েছে। একটা ম্যাচের সময় বদলাতেই যেখানে সমস্যা হয়, সেখানে এত ম্যাচের সময় বদলালে সব কিছু নতুন করে তৈরি করতে হবে। ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র এ সব জানেন। তিনি এ দিন মহাকরণে বলেন, “আমরা এআইএফএফকে অনুরোধ করেছি, যত দিন পর্যন্ত সল্টলেক স্টেডিয়ামের বিদ্যুৎ স্তম্ভের সংস্কার হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত এখানে সব খেলা দুপুরে দিতে।” সংস্কারের জন্য তাঁরা কথা বলছেন কপিলদেবের সংস্থার সঙ্গেও।
বুধবারের মোহনবাগান-প্রয়াগ ইউনাইটেড ফ্লাডলাইট ম্যাচটা হোম ম্যাচ প্রয়াগের। তারা আইএফএ-র সাহায্যে ম্যাচ করছে। মোহন-ইস্ট হলে পাল্টা চাপ দিতে পারত প্রশাসনে, আইএফএ সেটা পারেনি। নিয়ম মতো, ম্যাচের আগের দিন ম্যানেজার্স মিটিংয়ে এসেছিলেন দু’দলের প্রতিনিধিরা। সভা শেষ হওয়ার পরেও জানা যায়নি, পরের দিন কখন খেলা। টানাপোড়েন চলতে থাকে। মোহনবাগান ম্যাচ দুপুরে হলে আবার ইস্টবেঙ্গলের খেলা টিভিতে দেখানো নিয়ে সমস্যা। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়, সাড়ে ছ’টার ম্যাচ মোহনবাগান খেলবে দুপুর দুটোয়। টিভিতে খেলা দেখানো হবে সাড়ে ছ’টায়। ইস্টবেঙ্গলের খেলা অপরিবর্তিত, দুপুর সাড়ে তিনটেয়।
পরিস্থিতি যে দিকে গড়াল, তাতে এআইএফএফের তরফে পরিত্যক্ত করে দেওয়া বারাসত স্টেডিয়ামের খোঁজ পড়েছে। দু’বছর আগে চার্চিল-মোহনবাগান ম্যাচে ঝামেলা হওয়ার পরে ফেডারেশন জানিয়ে দিয়েছিল, নিরাপত্তাজনিত কারণে সেখানে আই লিগের খেলা হবে না। বারাসত স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ স্টেডিয়ামের ফেন্সিং বাড়ালেও ফেডারেশনের কেউ আর পরীক্ষা করতে যায়নি। এত দিনে সেখানে ম্যাচ করার কথা শুরু হয়েছে। বুধবারই ফেডারেশন ম্যাচ কমিশনার যাচ্ছেন সেই মাঠ দেখতে। আই লিগের ডিরেক্টর সুনন্দ ধর বললেন, “বুধবার ও বৃহস্পতিবারে কলকাতার দুটো ম্যাচ দুপুরে হচ্ছে। তারপরে কয়েক দিন খেলা নেই। দেখি, পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়। তবে এর পরে ম্যাচের জায়গা পাল্টানো হতে পারে। সময় পাল্টানো যাবে না।”
স্পষ্ট ইঙ্গিত, যুবভারতী থেকে খেলা সরানো হতে পারে বারাসতে। ক্লাবগুলোর কী প্রতিক্রিয়া? মোহনবাগান সচিব অঞ্জন মিত্র বলেন, “ফ্লাডলাইট নিভে যাওয়ায় রবিবার ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। যুদ্ধকালীন তৎপরতা দেখিয়ে যদি আলো ঠিক হয়, তা হলে তো ভালই।” ইস্টবেঙ্গলের প্রধান কর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, “প্রশাসনের সমস্যা থাকলে তাকে মেনে নিতে হবেই। কিন্তু আমরা চাই, সমস্যা যাতে দ্রুত মেটানো যায়।”
ফুটবলারদেরই শুধু মাথায় হাত। রোদের মধ্যে যুবভারতীর অ্যাস্ট্রোটার্ফে খেলতে হবে। কৃত্রিম টার্ফ থেকে যে উত্তাপ ছড়ায়, তাতে খেলা ক্রমশ মুশকিল হয়ে পড়ে। রাত পর্যন্ত ক্লাবের তরফে ফোনে তাঁদের জানানো হচ্ছে, ম্যাচ এগিয়ে এসেছে। সমর্থকদের আর কে জানাবে? এক মোহন কর্তা আক্ষেপ করছিলেন, “আগের দিন লাখ লোক হয়েছিল। এ দিন দশ হাজারও হবে না। কাজের দিনে দুপুর দুটোয় কে আসবে খেলা দেখতে?” |
|
|
|
|
|