পদ্মার লাগাতার ভাঙনে তলিয়েছে মিঠিপুর আর ময়াগ্রামের বেশ খানিকটা অংশ। সর্বস্ব হারানো গ্রামবাসীরা প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন অনেক তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বহু দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও লালগোলার ময়ায় ভাঙন রোধের কাজ সেভাবে এগোয়নি। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, জরুরি ভিত্তিতে শুরু হওয়া ভাঙন রোধের কাজ গত দশ দিনেও পাঁচ শতাংশ সম্পূর্ণ করতে পারেনি রাজ্যের সেচ দফতর। তবে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত জঙ্গিপুরের মিঠিপুরের ছবিটা একেবারেই আলাদা। গত ছয় দিনেই ভাঙন রোধে চল্লিশ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে সেখানে। আর দিন ছয়েকের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা।
পদ্মাপারের গ্রাম মিঠিপুর ও ময়ার মধ্যে দূরত্ব প্রায় দশ কিমি। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে একই সঙ্গে ভাঙন শুরু হয় ওই দুই গ্রামে। |
ময়ায় গত জুলাই মাসে রাজ্য সেচ দফতরের ভাঙন প্রতিরোধ বিভাগের তরফে সাড়ে তিন কোটি টাকা খরচ করে ৪১৮ মিটার স্পার বাঁধা হয়। ৩০ অক্টোবর রাত ভর ভাঙনে সেই স্পারের প্রায় ৮৮ মিটার ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়। পদ্মা গর্ভে ধসে পড়ে ২৫ টি বাড়ি। ৩০ টি বাড়ি আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকায় বাসিন্দাদের ঘর ছাড়তে হয়। এর পরেই রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার হস্তক্ষেপে লালগোলা ব্লক প্রশাসন ও রাজ্য সেচ দফতর যৌথ ভাবে ভাঙন রোধের জরুরী কাজ শুরু করে ৫ নভেম্বর থেকে। কিন্তু দশ দিন কেটে গেলেও সেভাবে কাজ এগোতেই পারেনি রাজ্য সেচ দফতর। স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য আবু তালহা বলেন, ‘‘একাধিক দফতরকে দিয়ে এই কাজ করানোর ফলেই কাজে কোনও গতি নেই। নেই সমন্বয়ও। ব্লক প্রশাসনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কর্মনিশ্চিত প্রকল্পের মাধ্যমে পদ্মার চর থেকে বালি কাটার। রাজ্য সেচ দফতরের ভাঙন প্রতিরোধ বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেই বস্তাবন্দী বালি নৌকা করে চর থেকে বয়ে এনে খাঁচায় ভরে ভাঙনের এলাকা বরাবর দেওয়াল গড়ে তোলার। যাতে নদীর জলের ধাক্কা থেকে পাড়কে বাঁচানো যায়। কিন্তু দশ দিনে পাঁচ শতাংশ কাজও করতে পারেনি রাজ্য সেচ দফতর। ফলে ভাঙন নিয়ে আশঙ্কা কাটছে না মানুষের।
লালগোলার বিডিও প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘ওই এলাকায় মজুর পাওয়াটাই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মনিশ্চিত প্রকল্পে ১৩০ টাকা মজুরিতে কেউই কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। বহু চেষ্টা করে মাত্র ৬০ জন মজুরকে দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। ফলে মাস দেড়েকের আগে ময়ায় ভাঙন রোধের এই কাজ শেষ হওয়ার আশা নেই। তবে ভাঙন এখন থমকে রয়েছে এটাই যা আশার কথা।’’ |
মিঠিপুরে অবশ্য কাজ চলেছে। তদারকিতে ব্যস্ত ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তারা। |
ভাঙন প্রতিরোধ বিভাগের অবর সহকারী বাস্তুকার দীপক দেবনাথ বলেন, ‘‘প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৬ লক্ষ বালির বস্তা লাগবে ময়ায় ভাঙন ঠেকাতে। দৈনিক এক থেকে দেড় হাজারের বেশি বস্তা বালি পাওয়া যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে ময়ায় কাজ কবে শেষ হবে তা বলা এখনই সম্ভব নয়। তবে আরও সময় লাগবে।’’
মিঠিপুরে অবশ্য ছবিটা একেবারে আলাদা। সেখানে ভাঙন রোধের জরুরি কাজ শুরু করেছে ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। ফরাক্কা ব্যারাজের জেনারেল ম্যানেজার অরুণ কুমার সিংহ বলেন, ‘‘৭৬০ মিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন ঠেকাতে চারটি ভাগে কাজ শুরু হয়েছে। এর জন্য ৮০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ১৮ নভেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।’’ মিঠিপুরের পঞ্চায়েত প্রধান সমিরুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘‘জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু হওয়ায় মিঠিপুরকে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচানো গিয়েছে। এ বার দরকার স্থায়ী ভাঙন রোধের কাজ।’’
ফরাক্কা ব্যারাজের জেনারেল ম্যানেজার বলেন, ‘‘২১ নভেম্বর কারিগরী পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠক রয়েছে। থাকবেন দিল্লির জলসম্পদ মন্ত্রকের কর্তারা। সেখানেই মিঠিপুর ও ময়ায় ভাঙন রোধে স্থায়ী স্পার তৈরির কাজের চুড়ান্ত অনুমোদন মিলবে। ব্যারাজ কতৃপক্ষ জানুয়ারি মাস নাগাদ কাজ শুরু করবে দু’টি গ্রামেই।’’
|
ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়। |