|
|
|
|
পশ্চিম মেদিনীপুর |
পঞ্চায়েতে অচলাবস্থা, ১০০ দিনের প্রকল্পে ভাটা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
মাওবাদী এলাকায় কাজের গতি বেড়েছে। উল্টোদিকে জেলার অন্য ব্লকে কমে গিয়েছে কাজের গতি! রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১০০ দিনের প্রকল্পের চিত্রটা এভাবেই বদলে গিয়েছে!
গত বছর এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই প্রকল্পে যেখানে ব্যয় হয়েছিল ১৫০ কোটি টাকা, চলতি বছর একই সময়ে ব্যয় কমে হয়েছে মাত্র ৮৮ কোটি টাকা।
কিন্তু কেন? প্রশাসনিক সূত্রের ব্যাখ্যা, পালাবদলের জেরেই এই অবস্থা! জেলার বেশিরভাগ গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি সিপিএমের দখলে। কিন্তু বিধানসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকেই বিভিন্ন এলাকায় পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত সিপিএম সদস্যদের অনেকেই এলাকা ছাড়া হয়েছেন। কেউ কোনও মামলায় জড়িয়ে ‘ফেরার’। আবার কেউ কেউ আতঙ্কেই গ্রাম ছাড়া। পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি-স্তরে এর ফলে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে ১০০ দিনের কাজ-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে। প্রশাসনিক কর্তারা এর বাইরেও আরও কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ করছেন। তাঁরা মনে করাচ্ছেন, বিধানসভা নির্বাচন এবং প্রশাসনিক রদবদলের জেরেও কাজের গতি প্রাথমিক ভাবে মন্থর হয়েছে।
অন্য বছরের তুলনায় এ বছর একশো দিনের প্রকল্পে ব্যয় যে অনেকটাই কম হয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) উত্তম পাত্র। তাঁর কথায়, “এ বার খরচ অনেকটাই কম হয়েছে এটা ঠিকই। তবে তার পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। তা সত্ত্বেও এই প্রকল্প কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সে জন্য শীঘ্রই বৈঠক হবে। জেলাস্তর থেকে ব্লকস্তর পর্যন্ত সমস্যা খতিয়ে দেখে তা সমাধানের চেষ্টাও করা হচ্ছে। কাজে গতি আনতে সব ধরনের পদক্ষেপ করা হবে।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় আবার ১০০ দিনের প্রকল্পে কম খরচ নিয়ে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন সিপিএমের দিকেই। তাঁর বক্তব্য, “আমরা সব সময় উন্নয়নের কাজে সাহায্য করছি। কিন্তু সিপিএম শাসিত গ্রাম-পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ ইচ্ছে করে কাজ করছে না। রাজ্য সরকারের বদনাম করতেই এই পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু আমরা ছেড়ে কথা বলব না। কেন কাজ হচ্ছে না প্রশাসনের কাছে জানতে চাইব।” অন্য দিকে সিপিএম নিয়ন্ত্রিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “সব গ্রাম পঞ্চায়েতে কাজ করার সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। তা ছাড়াও এই কাজ সরাসরি প্রশাসনই দেখে।”
২০০৯-’১০ সালে ১০০ দিনের প্রকল্পে জেলায় খরচ হয়েছিল ২৩৪ কোটি টাকা। ২০১০-’১১ সালে তা বেড়ে হয় ২৬৭ কোটি। চলতি আর্থিক বছরে (২০১১-’১২) ইতিমধ্যেই ৭ মাস কেটে গিয়েছে। আর বাকি ৫ মাস। তাতে এখনও পর্যন্ত খরচ হয়েছে মাত্র ৮৮ কোটি টাকা! আদৌ কি অন্য বছরের মতো কাজ হবে? বেশ কয়েকটি ব্লকের কাজের খতিয়ান নিলে সংশয়ই বাড়ছে। মাওবাদী-প্রভাবিত বিনপুর-১ ব্লকে গত বছরে এপ্রিল মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত খরচ হয়েছিল ১৪ কোটি টাকা। এ বার খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৭ কোটি টাকা বেশি খরচ হয়েছে। বিনপুর-২ ব্লকে গত বছর ওই সময় পর্যন্ত খরচ হয়েছিল ২২ কোটি টাকা। এ বার সেখানেও বেড়ে হয়েছে ২৯ কোটি টাকা। কিন্তু যে সব ব্লকে সিপিএমের একচেটিয়া আধিপত্য সেই কেশপুরে গত বছর অক্টোবর মাস পর্যন্ত খরচ হয়েছিল ৯৩ কোটি টাকা! এ বার সেখানে খরচ হয়েছে মাত্রই ৫৭ কোটি টাকা!
গড়বেতা-১ ব্লকে গত বছরে ওই সময় পর্যন্ত খরচ হয়েছিল ৬৫ কোটি টাকা। এ বার খরচ হয়েছে মাত্রই ২৯ কোটি টাকা! এ ভাবেই চন্দ্রকোনা-১ ব্লকে গত বার হয়েছিল ৩৭ কোটি, এ বার হয়েছে ১৬ কোটি, নারায়ণগড়ে গত বার খরচ হয়েছিল ১২৪ কোটি টাকা, এ বার হয়েছে মাত্র ৭০ কোটি টাকা, ডেবরায় গত বার খরচ হয়েছিল ৪৬ কোটি, এ বার হয়েছে মাত্র ৩৪ কোটি টাকা, সবংয়ে খরচ হয়েছিল ৯৪ কোটি টাকা, এ বার হয়েছে ৫২ কোটি! এ ভাবেই সিপিএমের দখলে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় খরচ অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উন্নয়নের কাজ। মানুষও কাজ পাচ্ছেন না।
চলতি আর্থিক বছরে ১০০ দিনের প্রকল্পে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন প্রাথমিক ভাবে ১২৭ কোটি টাকা পেয়েছিল। তার মধ্যে মাত্র ৮৮ কোটি টাকা খরচ করতে পেরেছে। আরও কিছু ক্ষেত্রে কাজ চলছে বলে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক প্রিয়াঞ্জন দাস জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “এই প্রকল্পের কাজে গতি আনতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের কাছে আরও অর্থও চেয়েছি। চেষ্টা করা হবে, বছরের শেষ দিকে অন্য বছরের মতোই যাতে কাজ করা যায়।”
প্রশাসনিক কর্তারা আশ্বাস দিলেও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তা কতটা সম্ভব, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। |
|
|
|
|
|