ফের চা বাগান থেকে চিতা বাঘ উদ্ধার করলেন বনকর্মীরা। টানা ৪ দিন ধরে খাঁচার ভেতর ছাগলকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করে ৬ বছর বয়সী ওই বাঘিনীকে বন্দি করা হয়। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে ডুয়ার্সের বানারহাট থানার লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানে। জলপাইগুড়ির ডিএফও সুমিতা ঘটক বলেন, “খাঁচা বন্দি চিতাবাঘটিকে গরুমারার গভীর জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি চা বাগানে চিতাবাঘ আশ্রয় নিয়েছে বলে আমাদের কাছে খবর রয়েছে।” চার দিন আগে বাগানে কাজ করার সময় চা গাছের ঝোপের পাশে নালায় লুকিয়ে থাকা একটি চিতাবাঘ এক শ্রমিককে আক্রমণ করে। ওই ঘটনার পর বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ৯ নম্বর সেকশনে খাঁচা বসান বনকর্মীরা। খাঁচার চারিদিকে পাতা ও জংলী লতা দিয়ে মুড়ে তার ভেতর টোপ হিসাবে বেধে রাখা হয়েছিল একটি ছাগল। প্রথম তিন দিন খাঁচার পাশে বাঘের পায়ের ছাপ থাকলেও ভেতরে ঢুকে ছাগলটিকে আক্রমণ করেনি চিতাবাঘটি। রবিবার শেষ রাতে খিদে মেটাতে বাঘটি খাঁচার ভেতর ঢুকতেই দরজা বন্ধ হয়ে যায়। এদিন সকালে কাজে যাবার সময় কয়েকজন শ্রমিক লক্ষ্য করেন খাঁচার ভেতর জন্তুটি পায়চারি করছে। খবর যায় বনব দফতরে। ডুয়ার্সের অন্তত ২০টি চা বাগানে বর্তমানে চিতাবাঘের আনাগোনা রয়েছে। বন থেকে বেরিয়ে ধারে কাছে চা বাগানে আশ্রয় নিতে বেশি পছন্দ করে চিতাবাঘ। বন কর্তাদের মতে, চা বাগানের শ্রমিক লাইনে ঢুকে মুরগি, ছাগল ও শুয়োর সহজে মেলে। চা বাগানের নালায় প্রসব করে সন্তানদের লালন পালন করা সুবিধেজনক বলে চিতাবাঘ সেখানে আশ্রয় নেয়। |
মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন রাজকুমার মোদক। |
জলপাইগুড়ির বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও সুমিতা ঘটক বলেন, “চা বাগানের ঝোপ, নালা চিতাবাঘের স্বাভাবিক আশ্রয়। যে ভাবে উত্তরবঙ্গে নতুন চা বাগান গড়ে উঠছে তাতে চিতাবাঘের চা বাগানে আনাগোনা বাড়বেই। সকলে মিলে নজরদারি বাড়িয়ে উপদ্রব কমাতে হবে।” বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ডুয়ার্সের ২০টি বাগানে চিতাবাঘের আনাগোনা থাকলেও ৮টি বাগানের মানুষ অতিষ্ঠ। বন দফতর থেকে রেডব্যাঙ্ক, নাথুয়া, গয়েরকাটা, দেবপাড়া, ডায়না, গেরগেন্দা, মরাঘাট ও লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানে খাঁচা বসানো হয়েছে। বিন্নাগুড়ি এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের রেঞ্জ অফিসার সুভাষ বসু বলেন, “আশা করি খুব শীঘ্র ওই খাঁচাগুলিতে বাঘ বন্দি হবে।” চা বাগান মালিকদের সংগঠন ‘টাই’-এর উত্তরবঙ্গের সচিব রণজিৎ দত্ত বলেন, “যেভাবে বাগানগুলিতে চিতাবাঘের অত্যাচার বেড়েছে তাতে শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পাতা তুলতে যেতে শ্রমিকরা ভয় পাচ্ছেন। এতে বাগানগুলি আর্থিক ভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বন দফতরকে দেখা উচিত।” |