সম্পাদক সমীপেষু ...
ত্রিস্তর পঞ্চায়েতকে বরং শক্তিশালী করা দরকার
ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তুলনায় প্রশাসনিক আধিকারিক (ডি এম, এস ডি ও, বি ডি ও)-দের হাতে অধিক ক্ষমতা দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার নিয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আপনাদের সম্পাদকীয় (৫-১১) মন্তব্য নিয়ে এই চিঠি। মনে হচ্ছে, ১৯৭৮ সাল থেকে চলে আসা পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার সব দিক বিবেচনা না-করেই এ ভাবে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফল উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর হবে।
স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকেই ভারতবাসীর স্বপ্ন ছিল গ্রাম-স্বরাজ ও পঞ্চায়েতের মাধ্যমে উন্নয়ন। ১৯৯৩ সালে ৭৩তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে একাদশ তফসিলে ২৯টি বিষয়কে পঞ্চায়েতের হাতে ন্যস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, পশ্চিমবঙ্গ-সহ কোনও রাজ্যই সংবিধান নির্দেশিত এই ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পূর্ণত করেনি। এ রাজ্যে পঞ্চায়েতকে যেটুকু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল তাতে গোড়ার দিকে বেশ কিছু সদর্থক ফল দেখা গিয়েছিল। স্তর-বিন্যস্ত সমাজে যুগ যুগ ধরে অবদমিত নিম্নবর্ণ, আদিবাসী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অন্যান্য প্রান্তিক মানুষেরা উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নিজেদের মতো করে অংশগ্রহণ করতে পেরেছিলেন।
এটা করার সময়, অভিজ্ঞতার অভাবে দলবাজি, দুর্নীতি, প্রভৃতি ব্যাধি দেখা দেয়। যাতে উন্নয়ন ও গণতন্ত্র বিকাশের প্রক্রিয়া কাম্য মাত্রায় পৌঁছনোর ক্ষেত্রে বাধা পায়। ভারতের মতো দেশে, যেখানে হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ গণতন্ত্রের স্বাদ থেকে বঞ্চিত ছিলেন, সেখানে গণতন্ত্রকে দৈনন্দিন জীবনের অভ্যাসে পরিণত করার কাজে অভিজ্ঞতা ও সময় লাগবে। তার যে সীমিত অভিজ্ঞতা কিছু মানুষ অর্জন করেছেন তাকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা সমাজ পরিবর্তনের নানা পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছেন।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে উন্নয়নের দায়িত্ব তুলে দেওয়ায় বিষয়টি বিধানসভা অর্থাৎ রাজ্যস্তর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখার সুপারিশটি বোধগম্য নয়। পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে দলবাজির যে অভিযোগ ওঠে, তা তো রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার সম্পর্কেও ওঠে। আর, দুর্নীতির কথা বলতে গেলে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরের দুর্নীতির কাছে পঞ্চায়েতের দুর্নীতি কণামাত্র। কিন্তু দুর্নীতির কারণ দেখিয়ে আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রকে বাতিল করার দাবি করতে পারি না। কেননা, সেটা অনেক বেশি জনবিরোধী এবং সভ্যতার জন্য আত্মঘাতী হবে। বরং কী ভাবে এই ব্যবস্থার উপরে জনগণের নজরদারি বাড়িয়ে একে আরও শক্তিশালী করা যায় মানুষ তার পথ খুঁজছে। প্রকৃতপক্ষে গ্রাম সংসদ-সহ সব স্তরের পঞ্চায়েতকে আরও ক্ষমতা দান (যেমন, প্রকল্প রচনা ও তার রূপায়ণ, বি পি এল তালিকা তৈরি ও তার দারিদ্র দূরীকরণ, জল-জঙ্গল-জমির উপর অধিকার ইত্যাদি)-র মাধ্যমে গণতন্ত্রকে আরও প্রসারিত করলে দুর্নীতি ও দলবাজির মতো ব্যাধিগুলিকে দূর করা যাবে। এর ফলে, জনসাধারণ উন্নয়নের প্রাপক না হয়ে কারক হয়ে উঠবেন। বিপরীতে পঞ্চায়েতকে ক্ষমতাহীন করার ফলে, উন্নয়নের যাবতীয় বিকাশ সমাজের উঁচুতলার মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে আটকে থাকবে, সমাজের পক্ষে এর ফল হবে মারাত্মক।
আজ বিশ্ব জুড়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের প্রশ্নে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। আমাদের দেশেও এ সম্পর্কিত কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। এ সব নিয়ে রাজ্যের মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক হওয়া উচিত। খণ্ডিত অভিজ্ঞতার আংশিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে আমরা পিছনে হাঁটতে পারি না। বরং যেটা দরকার তা হল, একটা ব্যাপক অংশগ্রহণের ভিত্তিতে এবং নৈর্ব্যক্তিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে গণতন্ত্রের এই ভিত্তিমূলটিকে শক্তিশালী করা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.