প্রচারে রাগী মুখ
জাতের রাজনীতি ভাঙতে রাহুলের অস্ত্র নেহরু
ক দিকে তিনি মায়াবতী-মুলায়মদের জাতপাতের রাজনীতি ভাঙতে আগ্রাসী আক্রমণ শানালেন। অন্য দিকে, এরই পরিবর্ত হিসেবে তুলে ধরলেন উন্নয়ন ও বহুত্ববাদের ‘নেহরু মডেল’। উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের ছ’মাস আগে এই দ্বিমুখী কৌশল নিয়েই পুরোদস্তুর প্রচার শুরু করলেন রাহুল গাঁধী।
এবং সেই প্রচার শুরু করলেন ইলাহাবাদের সামান্য দূরে ফুলপুর থেকে, যে অঞ্চল তিন-তিন বার জওহরলাল নেহরুকে লোকসভায় পাঠিয়েছিল (পরে বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত এবং বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহও কংগ্রেসের টিকিটে এখান থেকে জয়ী হয়েছিলেন)। গঙ্গা-যমুনার তীরবর্তী ফুলপুর কিন্তু আবার উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের পতনেরও প্রতীক। গত ২৭ বছর ধরে এই এলাকায় খরা চলছে কংগ্রেসের। এখান থেকে রাহুলের প্রচার যাত্রা শুরু করাটা তাই তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। যেমন মনে করা হচ্ছে ‘রাগী’ রাহুলের কার্যত একক ভাবে উত্তরপ্রদেশে দলীয় প্রচারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়াটাও।
কেন একক ভাবে? জনসভায় সনিয়া-পুত্রের একটি মন্তব্য থেকেই এই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এসেছে কংগ্রেসের ব্যাখ্যাও। আগ্রাসী বক্তৃতায় রাহুল রাজ্য তথা রাজ্যবাসীর দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে এক সময় মন্তব্য করেন, “কখনও কখনও খুব রাগ হয়। মনে হয়, লখনউ গিয়ে আপনাদের লড়াইটা লড়ি।” তার পরেই ভিড়ের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, “তা হলে কবে থেকে আমার সঙ্গে যাত্রা শুরু করবেন?” একই সঙ্গে যুব সম্প্রদায়ের প্রতি তাঁর বার্তা, “আপনারা যে দিন এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন, সে দিনই এ রাজ্যে পরিবর্তন আসবে।”
রাহুলের এই মন্তব্য নিয়ে জল্পনা শুরু হতে দেরি হয়নি। পরে কংগ্রেস সূত্রে ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, এমন নয় যে রাহুল উত্তরপ্রদেশে দলের মুখমন্ত্রী পদ প্রার্থী হতে চলেছেন। আসলে গত লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশ থেকে কংগ্রেসের ২১ জন সাংসদ জয়ী হলেও কোনও সর্বজনগ্রাহ্য নেতা সেখানে নেই। নেতৃত্বের সেই সঙ্কটে রাহুল রাজ্যে দলের পুনরুত্থানের দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে তুলে নিলেন। উত্তরপ্রদেশের মানুষের প্রতি তাঁর স্পষ্ট বার্তা, তাঁর ওপর ভরসা রেখেই তাঁরা কংগ্রেসকে ভোট দিতে পারেন।
অন্য একটি ব্যাখ্যাও অবশ্য রয়েছে। নেহরু, লালবাহাদুর শাস্ত্রী, ইন্দিরা গাঁধী, রাজীব গাঁধী, অটলবিহারী বাজপেয়ী সকলেই উত্তরপ্রদেশ থেকে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। দিল্লিতে একটা কথা চালু রয়েছে, লখনউ হয়ে দিল্লি তখতে যেতে হয়। অনেকেই মনে করছেন, রাহুল আজ সেই রাস্তায় চলার ইঙ্গিতটা দিয়ে রাখলেন।
কিন্তু উত্তরপ্রদেশ জয় কী ভাবে আসবে? সেখানেও কিন্তু ফুলপুরের একদা সাংসদকে প্রতীক হিসেবে ধরেছেন রাহুল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেহরুর উন্নয়ন আর বহুত্ববাদই এ দিন ছিল মায়া-মুলায়ম-বিজেপির জাতপাতের রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রচারে রাহুলের অস্ত্র। জনসভায় স্লোগান তুললেন, সবার জন্য ন্যায় ও সুরক্ষার। জনসভায় হাজির জনতাকে প্রশ্ন করলেন, “কী চাই আপনাদের? এক জাতের সরকার, নাকি আমআদমির সরকার?” উত্তরপ্রদেশের মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে আজ ফুলপুরকে সাজিয়েও তোলা হয়েছিল সেই ‘থিমেই’। সর্বত্রই শুধু নেহরু ও রাহুলের যৌথ ছবি।
আর সঙ্গে স্লোগান,
নেহরুজিকো ইয়াদ করেঙ্গে
রাহুলজিকা সাথ চলেঙ্গে।

আজ নেহরুকে সামনে রেখে উন্নয়নের বিকল্প মডেল যেমন তুলে ধরলেন রাহুল, তেমনই কঠোর ভাষায় আক্রমণ করলেন মায়াবতীর সরকারকে। আজ ফুলপুরের সভায় উগরে দিলেন নিজের ‘গুস্সা’। বললেন, “উত্তরপ্রদেশের মানুষের দুর্গতি দেখলে রাগ হওয়া স্বাভাবিক। এক সময় মায়া-মুলায়মেরও এই রাগ হত। এখন ওঁদের রাগ মরে গিয়েছে। ওঁরা ক্ষমতালোভী হয়ে পড়েছেন। রাজ্য জুড়ে চলছে মাফিয়ারাজ। গুন্ডারা থানা চালাচ্ছে।” বললেন, “বুন্দেলখণ্ড উন্নয়ন, ১০০ দিনের কাজ, দলিত ও সংখ্যালঘু উন্নয়নে কেন্দ্রের পাঠানো হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে। পেট ভরছে মন্ত্রীদের।” পাশাপাশি কংগ্রেসের সামাজিক উন্নয়নের কথাও তুলে ধরলেন রাহুল। জানালেন, দ্রুত জমি অধিগ্রহণ বিল সংসদে পাশ করাবে সরকার (ভাট্টা-পারসলের ঘটনার পর থেকে যে বিষয়টি নিয়ে মায়াবতী সরকার সব থেকে খোঁচাচ্ছে কেন্দ্রকে)। আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনেই খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশ হবে সংসদে। কিন্তু পরক্ষণেই প্রশ্ন তোলেন, “খাদ্য সুরক্ষা বিল রূপায়ণ হলেও কি সেই খাবার উত্তরপ্রদেশের মানুষ পাবে? নাকি বিএসপি নেতারা তা-ও লুটেপুটে নেবেন?”
রাহুলের এই আগ্রাসী আক্রমণ, এই ভাবে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেওয়া নিয়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংশয় নেই বড় ধরনের ঝুঁকি নিলেন রাহুল। দল ভাল করলে যেমন তাঁর কৃতিত্ব, তেমনই মন্দ হলে দায় নিতে হবে তাঁকেই।
আজকের ছবি অবশ্য, ফুলপুরের সভায় ভিড় কম হয়নি। তবে রাহুলের জন্য উত্তরপ্রদেশের জনগণ কী তুলে রেখেছে, সেটা জানা যাবে ছ’মাস বাদেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.