রাজ্যে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটে টানাপোড়েন যখন বাড়ছে, তখন দিল্লি কিন্তু দুই শরিকের সম্পর্কে উষ্ণতারই সাক্ষী হয়ে রইল সোমবার।
রাজধানীর প্রগতি ময়দানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার প্রথম দিনে কেন্দ্রের কাছে হস্ত ও ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য লগ্নি চাইলেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সাহায্যের আশ্বাসও পেলেন। ধনেখালি ও সমুদ্রগড়ে দু’টি টেক্সটাইল হাব গড়ার বিষয়ে আজ কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার সঙ্গে আলোচনা করেন পার্থবাবু। পরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আনন্দ শর্মা নীতিগত সম্মতি জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে ভারতের শিল্প মানচিত্রে পশ্চিমবঙ্গকে তুলে আনার লড়াইয়ে জোটসঙ্গী তৃণমূলের পাশে দাঁড়ানোরই ইঙ্গিত দিলেন দিল্লির কংগ্রেস নেতারা।
রাজ্যে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে বাণিজ্য মেলাতেও। নিছক কয়েকটি ছবি লাগানো ম্যাড়ম্যাড়ে মণ্ডপ নয়, দিল্লির মাঠে বিশ্বের সামনে আস্ত রাজ্যটাকেই তুলে আনল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। রীতিমতো জাঁকজমকের সঙ্গেই।
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের চলচ্চিত্র উৎসবই হোক বা নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দান, ‘মলিনতা’ ছেড়ে ঝকঝকে উপস্থাপনাই আলাদা করে চিনিয়ে দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গকে। যে ভাবে নিখুঁত পেশাদারিত্বের ছোঁয়া লাগিয়েছেন চলচ্চিত্র উৎসবে, তেমন ভাবেই বাণিজ্য মেলা নিয়ে নিজের ভাবনা আধিকারিকদের বুঝিয়েছিলেন মমতা। সেই মতোই হস্তশিল্প-পর্যটনের মিশেলে প্রগতি ময়দানে রাজ্যের প্যাভিলিয়নকে আকর্ষণের কেন্দ্র বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা।
আর সেই ঝকঝকে চকচকে ছবিটা সামনে রেখে প্রথম দিনেই কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের হস্ত ও ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য লগ্নি চাইলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রাজ্যের পক্ষ থেকে ‘সবুজ’ কার্পেট অভ্যর্থনার ভরসাও দিলেন বিনিয়োগকারীদের। উদ্দেশ্য দুটো, কেন্দ্রের সামনে রাজ্যের শিল্পবান্ধব মনোভাব স্পষ্ট করা আর মেলায় আসা লগ্নিকারীদের রাজ্যমুখী করার সুযোগটা ষোল আনা কাজে লাগানো। জয়া আম্মাময় তামিলনাডু কিংবা মায়াবতীর কাটআউটে মুখ লুকনো উত্তরপ্রদেশের থেকে এ বার এই জায়গাতেই অনেকটা এগিয়ে মমতার পশ্চিমবঙ্গ। |
প্রগতি ময়দানে পশ্চিমবঙ্গের স্টল। ছবি: রমাকান্ত কুশওয়াহা |
বিনিয়োগকারীদের সবুজ কার্পেট অভ্যর্থনার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পার্থবাবু বলেন, “লাল মানে বন্ধের প্রতীক। মলিনতারও। ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসানে রাজ্যকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। সবুজ তারুণ্যের প্রতীক। তাই প্রতীক হিসেবে সবুজ কার্পেট অভ্যর্থনার কথা বলেছি।”
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা এ বছর পশ্চিমবঙ্গ হল ‘পার্টনার স্টেট’। বাণিজ্য মেলার থিম ‘ভারতীয় হস্তশিল্প ঈশ্বরপ্রদত্ত হাতের জাদু’। কিন্তু প্রথম থেকেই মুখ্যমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের জানিয়ে দেন--হস্তশিল্প থাকুক। কিন্তু রাজ্যে পর্যটনের বিকাশের যে সম্ভাবনা রয়েছে তাকেও তুলে ধরতে হবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে। আর ঠিক তারই প্রতিফলন ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের প্যাভিলিয়নে। সেখানে তুষার-শুভ্র হিমালয়ের হাতছানি। প্রবেশপথের মুখে সুন্দরী গাছের ছায়ায় সদর্প উপস্থিতি দক্ষিণরায়েরও। দর্শকদের স্বাগত জানাচ্ছে প্রায় ১০ ফুট উচ্চতার বাঁকুড়ার পোড়া মাটির দু’ঘোড়া। মাটি, শোলা, ডোকরার সামগ্রী আর ছবির পসরা সাজিয়েছেন রাজ্যের প্রতিনিধিরা। তারই ফাঁকে এক কোণায় ‘টেক-স্যাভি’দের জন্য বসেছে ইন্টার-অ্যাকটিভ টাচ স্ক্রিন কিয়স্ক। দোতলা জুড়ে জলদাপাড়া থেকে দার্জিলিং। এ ভাবেই পাহাড়-ডুয়ার্সের সঙ্গে মিশে গিয়েছে দিঘার দিগন্তরেখা। রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ও শিল্পের নতুন পীঠস্থান হিসেবে রাজ্যকে গড়ে তুলতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বান। রবীন্দ্র সার্ধশতবর্ষে রয়েছেন কবিগুরুও। গ্যালারির একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে রবীন্দ্র কাব্য, গল্প আর তাঁর চিত্রনাট্যের নির্বাচিত অংশের সম্ভার।
আগামী ২৪ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গ দিবস। শিল্পমন্ত্রী জানিয়েছেন, সব কিছু ঠিক থাকলে ওই দিন মমতা দিল্লি আসছেন। অন্য বার পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কতিক অনুষ্ঠানগুলি খোলা আকাশের নিচে লালচক মঞ্চে হত। কিন্তু এ বার রাজ্য পার্টনার স্টেট বলে তাদের শকুন্তলম প্রেক্ষাগৃহ দিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই সেখানে মঞ্চস্থ হতে চলেছে বাল্মীকি প্রতিভা। তাতে অংশ নিচ্ছেন প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার, আলিপুর মহিলা সংশোধনাগার, মেদিনীপুর সংশোধনাগারের বন্দি ও কারা কর্মীরা।
|
২১শে দিল্লি যাচ্ছেন মমতা
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
চার দিনের সফরে ২১ নভেম্বর রাতে দিল্লি যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৪ তারিখে তাঁর ফেরার কথা। সোমবার মহাকরণ সূত্রে মুখ্যমন্ত্রীর এই সম্ভাব্য সফরসূচির কথা জানা গিয়েছে। দিল্লিতে এখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা চলছে। সেখানে রাজ্য সরকারের প্যাভিলিয়ন রয়েছে। ২৪ নভেম্বর বাণিজ্যমেলায় ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালিত হবে। মূলত সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি সফর। তবে রাজ্যের বিভিন্ন দাবি নিয়ে তার আগের দু’দিন প্রধানমন্ত্রী-সহ কেন্দ্রীয় সরকারের কয়েক জন মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক হতে পারে। |