প্রয়াত অজিত পাঁজার পরিবারের প্রতিষ্ঠিত স্কুলে পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনে ছ’টি আসনেই তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীদের হারিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেসের প্রার্থীরা।
রবিবার মঙ্গলকোটের মাজিগ্রামে বিশ্বেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ে ওই নির্বাচনে কংগ্রেস ও তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীদের জোট গড়ার জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েছিলেন অজিতবাবুর পুত্রবধূ, কলকাতার শ্যামপুকুরের তৃণমূল বিধায়ক শশী পাঁজা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস ‘একলা চলো’ নীতি নেয়। বিপর্যয়ের পরে তৃণমূলের একাংশ দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে দায়ী করেছেন।
বস্তুত, দীর্ঘদিন ধরেই ওলই স্কুলটিতে কংগ্রেসের একচ্ছত্র প্রভাব ছিল। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজিতবাবু নিজে দীর্ঘদিন ওই পরিচালন সমিতির সম্পাদক ছিলেন। ২০০৫ সালে সিপিএমের লোকজন পরিচালন সমিতির দখল নেন। কিন্তু ২০০৮ সালেই কংগ্রেস-তৃণমূল জোট তাঁদের ক্ষমতাচ্যুত করে। সেই জোট এ বার ভেঙে গেল।
আসন ভাগাভাগি নিয়ে মতপার্থক্য থাকায় স্কুল নির্বাচন ঘোষণার পরেই শশী পাঁজার কাছে গিয়েছিলেন স্থানীয় কংগ্রেস এবং তৃণমূল নেতারা। শশীদেবী তাঁদের তিনটি করে আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরামর্শ দেন। বর্ধমান জেলা কংগ্রেস নেতা জগদীশ দত্তের অভিযোগ, “তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব শশীদেবীর কথায় গুরুত্ব দেননি। আমাদের দু’টির বেশি আসন ছাড়তে তাঁরা রাজি ছিলেন না।” তৃণমূল অবশ্য তা মানতে চায়নি।
সিপিএম লড়াইয়ে ছিল না। কিন্তু কংগ্রেস এবং তৃণমূল উভয় পক্ষই প্রার্থী দেওয়ায় পরিস্থিতি টানটান হয়ে ওঠে। তৃণমূলের তরফে শশী পাঁজার নাম করে ভোটারদের প্রচারপত্র ও কার্ড দেওয়া হয়। অন্য দিকে, কংগ্রেস সমর্থিত ছয় প্রার্থীও শশীদেবীকে পরিচালন সমিতির সম্পাদক করার কথা বলে প্রচার চালান। জগদীশবাবুর মতে, “স্থানীয় মানুষ জানেন, পাঁজা পরিবারের সঙ্গে আমাদের আত্মিক সম্পর্ক। তৃণমূলের চেয়ে তাঁরা আমাদের বেশি বিশ্বাস করেন বলেই জিতিয়েছেন।” শশী পাঁজা সম্পাদক হতে রাজি হননি বলেও তাঁর দাবি। তৃণমূল একাংশ অবশ্য পরাজয়ের দলে গোষ্ঠীবাজি এবং কিছু নেতা-কর্মীর ‘বিশ্বাসঘাতকতা’কে দায়ী করছে। দলের তরফে এই নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা, জেলা কমিটির অন্যতম সম্পাদক বিকাশ চৌধুরীর মতে, “পঞ্চায়েতে ক্ষমতাসীন একটি গোষ্ঠী কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। সেই কারণেই এই হার।” স্থানীয় মাজিগ্রাম পঞ্চায়েত সম্প্রতি সিপিএমের থেকে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের হাতে এসেছে। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা দলের অঞ্চল সভাপতি রামপ্রসাদ ঘোষের পাল্টা দাবি, “সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বাচন করার কারণেই বামবিরোধী মানুষেরা কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকেছেন।” |