|
|
|
|
রবিনা টন্ডন নেমে যাওয়ায় মঞ্চে আগুন দিলেন দর্শকেরা |
যাত্রাপালায় তাণ্ডব, চাপান-উতোর শুরু |
নিজস্ব সংবাদদাতা • চাঁচল |
মালদহের চাঁচলের গৌড়িয়ায় রবিনা টন্ডন অভিনীত যাত্রাপালার আসরে ভাঙচুর, লুঠপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায় কার তা নিয়ে উদ্যোক্তা ও পুলিশের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় কর্মী অপ্রতুল হওয়ায় পুলিশ গোলমাল ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন উদ্যোক্তারা। যদিও যে মাঠে ওই যাত্রাপালার আসর বসেছিল সেখানে আসন সংখ্যার অনুপাতে বহু বেশি টিকিট বিক্রি করায় সমস্যার সূত্রপাত বলে পুলিশের তরফে পাল্টা দাবি করা হয়েছে। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে পুলিশ ও উদ্যোক্তা দু’তরফে ত্রুটি ছিল বলে জানানো হয়েছে। চাঁচলের মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত বলেছেন, “ঘটনাটি বেশি রাতের দিকে ঘটেছে। উদ্যোক্তা বা পুলিশের কোনও ত্রুটি ছিল কি না সবই খতিয়ে দেখা হবে।” স্থানীয় মকদমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ওবাইদুল্লা আহমেদ চৌধুরি বলেন, “ওই যাত্রাপালার আসরে আমি ছিলাম না। তবে ঘটনার পর জেনেছি যে পুলিশের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদেরও কিছু ত্রুটি ছিল। পুলিশ কর্মী কম থাকার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকও যথেষ্ঠ কম ছিল। এ ছাড়া পুলিশ যাদের ধরেছে তাদের অনেকেই নিরীহ।” মালদহের চাঁচলের গৌড়িয়া ফুটবল মাঠে শুক্রবার রাতে ওই গোলমালের ঘটনা ঘটে। ‘রূপসাগরের রূপসী’ নামে একটি যাত্রাপালার আয়োজন করেছিলেন এএনজিএইচএইচ ইয়ং স্টার নামে একটি ক্লাব। টিকিটের দাম ছিল গড়ে ৬০ টাকা। |
|
চাঁচলের গৌড়িয়ায় যাত্রাপালার এই আসরে ভাঙচুর, লুঠপাট হয়। লাগানো হয় আগুনও। ছবিটি তুলেছেন বাপি মজুমদার। |
৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা বাজেটের ওই যাত্রাপালার মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন বলিউড অভিনেত্রী রবিনা টন্ডন। রাতে নির্দিষ্ট সময়ে পালা শুরুও হয়। কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় হট্টগোল। দর্শকদের শান্ত করতে মঞ্চে উঠে পালা বহির্ভূত একটি হিন্দি গানও গেয়ে শোনান বলিউডের ওই অভিনেত্রী। ওই সময় কাছ থেকে দেখতে পেছনে থাকা দর্শকরা সামনে আসার চেষ্টা করতেই পরিস্থিতি আয়ত্বের বাইরে চলে যায়। শুরু হয়ে যায় হুড়োহুড়ি। মঞ্চের একেবারে সামনে এসে পড়ায় পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রবিনা টন্ডন মঞ্চ ছেড়ে নেমে যান। পরিস্থিতি তখন এতটাই উত্তপ্ত যে আর সেখানে থাকতে রাজি হননি। মঞ্চের পেছন দিক দিয়ে পুলিশি নিরাপত্তায় তিনি মালদহ চলে যান। বলিউড অভিনেত্রী চলে যাওয়ার কথা চাউর হতেই শুরু হয় যথেচ্ছ ভাঙচুর, ইটবৃষ্টি। জখম হন ৮ পুলিশ কর্মী-সহ বহু দর্শক। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় প্যান্ডেলে। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের দুটি গাড়িও। ওই সুযোগে বাসিন্দাদের একাংশ প্যান্ডলের টিন, মাইক, আলো খুলে যে যার মতো বাড়িতে নিয়ে পালান বলে অভিযোগ। উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, গন্ডগোলের শুরুতে পুলিশ নিষ্ক্রিয় হয়ে ছিল। এমনকী পুলিশ কর্মীদের একাংশ আশেপাশের বাড়িতে লুকিয়েও পড়েন। তাছাড়া কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের অনেকেই তাঁদের আত্মীয়, বন্ধুদের নিয়ে এসেছিলেন। গোলমালের সময়ে পুলিশ কর্মীরা আত্মীয়দের নিরাপত্তা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পুলিশ না থাকায় স্বেচ্ছাসেবকেরাও এগিয়ে যেতে ভরসা পাননি। পরে বিরাট বাহিনী গিয়ে বেধড়ক লাঠি চালায়। শূন্যে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালানো হয় বলেও অভিযাগ। শেষে গ্রেফতার করা হয় ২৪ জনকে। গুলি চালানোর কথা অবশ্য মানতে রাজি হননি জেলা পুলিশের কর্তারা! জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, “ওখানে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেনি। যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশও ছিল। উদ্যোক্তারা আসনের তুলনায় বেশি টিকিট বিক্রি করায় বসার জায়গা না পেয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়।” উদ্যোক্তাদের তরফে আব্দুল মান্নান, আব্দুল মাজেদদের অবশ্য দাবি, মিয়ম মেনে ১৬০ জন পুলিশ কর্মী চাওয়া হয়েছিল। ২৫ জনের বেশি পুলিশ কর্মী ছিলেন না। |
|
|
|
|
|