বর্জ্য ফেলার জায়গা বাড়ালেও জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা প্রকল্প রূপায়ণ করে তাকে সম্পদে পরিণত করার বিষয়ে এখনও তেমন উদ্যোগী নয় কলকাতা পুরসভা। রাজ্যে অন্তত এগারোটি পুরসভা এই প্রকল্প কার্যকর করলেও কলকাতা পুরসভার জঞ্জাল জমা হচ্ছে সেই ধাপাতেই। শহরের আয়তন ও জনবসতির সঙ্গে বাড়ছে জঞ্জালও। তাই পূর্ব কলকাতায় ধাপার পাশে ও বানতলায় দু’টি নতুন জায়গা নিয়েছে পুরসভা। তবে বিভিন্ন আলোচনাসভায় কলকাতা পুরসভার জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা হলেও সে বিষয়ে দেখা যায়নি ওই পুরসভার নির্দিষ্ট কোনও উদ্যোগ।
সে কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েই কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল) দেবব্রত মজুমদার বলেন, “জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে কোনও পুরসভাই তেমন সাফল্য পায়নি। তা ছাড়া, কলকাতার এই বিশাল পরিমাণ জঞ্জালের ব্যবস্থাপনা সম্ভব কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তবে আমাদের শহরে প্রতি দিন যে ৫ হাজার টন জঞ্জাল সংগ্রহ হয়, তার সামান্য একটা অংশ থেকে জৈব সার তৈরির ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু তার পরিমাণ ৫০০ টনেরও কম।”
দ্রুত নগরায়ণের এই সময়ে জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা নিয়ে কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সাধন ঘোষ। সেগুলি হল,
• কলকাতার যে সমস্ত বরো কোনও পঞ্চায়েত বা ছোট পুরসভার সংলগ্ন, তারা সংলগ্ন পঞ্চায়েত বা পুরসভার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ছোট ছোট জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা প্রকল্প গড়ে তুলুক।
• পচনশীল এবং শুকনো জঞ্জাল যন্ত্রের সাহায্যে পৃথক করতে হবে।
• রান্নাঘর, হোটেল, বা বাজারের উচ্ছিষ্ট ও বর্জ্য দিয়ে জৈব গ্যাস ও জৈব সার তৈরি করতে হবে।
• সংগৃহীত পচনশীল জঞ্জাল থেকে জৈব সার তৈরি করতে হবে এবং বর্জ্য প্লাস্টিক পুনর্নবীকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
এ ছাড়া, কলকাতা পুরসভায় ভেজা জঞ্জালের পরিমাণ বেশি হওয়ায় তা থেকে ভাল পরিমাণ বিদ্যুৎ তৈরি হতে পারে। এই প্রস্তাবগুলি কার্যকর হলে পুরসভার জঞ্জালের বোঝা ৩০% কমবে বলে মনে করেন সাধনবাবু। জঞ্জাল ব্যবস্থাপনার এই সব প্রকল্পের অনেকগুলি কার্যকর করে দেশ, বিদেশ এবং রাজ্যের বেশ কিছু পুরসভা সুফলও পাচ্ছে। এই জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা নিয়ে শহরে তিন দিনের একটা আন্তর্জাতিক সেমিনার ও প্রদর্শনী হয়ে গেল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে। ওই সেমিনারে দশটি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দিয়ে তাঁদের দেশের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তবে আশার কথা হল, পুরসভা ইতিমধ্যেই ধাপার কাছে ৫২.৫ হেক্টর জমিতে জঞ্জাল ফেলার নতুন জায়গা তৈরির জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র পেয়েছে। বানতলার কাছেও একটা জায়গা নিয়েছে পুরসভা। পূর্ব কলকাতা জলাভূমির মধ্যে এত বড় একটা জঞ্জাল ফেলার জায়গা নতুন করে তৈরি করা নিয়ে পরিবেশকর্মীদের মধ্যে বিরোধিতা ছিল। ছাড়পত্র মেলার পরে এখন কেন্দ্রের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা মিললেই পুরসভা নতুন ধাপার কাজ শুরু করবে। |