জগদীশপুর |
নিত্য কষ্ট |
শান্তনু ঘোষ |
সমস্যা দীর্ঘ দিনের। কিন্তু সেই সমস্যা মেটানোর জন্য বহু আবেদন-নিবেদনেও ফল হয়নি। ফলে এখনও প্রতিনিয়ত জলকষ্টে ভোগেন জগদীশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েক হাজার বাসিন্দা। এলাকায় জল সরবরাহের জন্য কয়েকটি গভীর নলকূপ থাকলেও বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেই জল ব্যবহারের অযোগ্য। কয়েক দিন আগেই জগদীশপুরের বাইগাছিতে যে জলপ্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছে সেটি তৈরি হয়ে গেলেও গোটা জগদীশপুরের জলসমস্যা মিটবে না বলেই মনে করেন এলাকার বাসিন্দা থেকে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় বিধায়কও।
পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের গোবিন্দ হাজরার কথায়, “প্রকল্পটি চালু হলেও গোটা এলাকার সমস্যা থেকেই যাবে। তা মেটাতে আরও একটি বড় জলপ্রকল্প তৈরির জন্য বিধায়ক ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।” |
|
বাইগাছিতে জল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। |
বালি জগাছা ব্লকের জগদীশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে তিনটি মৌজা জগদীশপুর, বাইগাছি ও দেবীরপাড়া। পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, গোটা জগদীশপুর এলাকার জন্য এখন চারটি গভীর নলকূপ চালু রয়েছে। দেবীরপাড়া ও বাইগাছিতে একটি করে, দু’টি জগদীশপুরে। ১৯৯৩-এ প্রথম হাওড়া জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অর্থে জগদীশপুরে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তখনই জগদীশপুর এলাকায় বসানো হয়েছিল দু’টি গভীর নলকূপ, যার মাধ্যমে রাস্তার ধারের নলকূপে জল দেওয়া চালু হয়।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, ২০০৩-এ বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়ার জন্য জগদীশপুর বালিকা বিদ্যালয়ের পাশে প্রায় ৫৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি জলপ্রকল্প তৈরি হয়। ওই বছরের ১৩ অগস্ট প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন জনস্বাস্থ্য কারিগরিমন্ত্রী গৌতম দেব। কিন্তু কয়েক দিন পরেই সেটি অকেজো হয়ে দীর্ঘ দিন বন্ধ পড়ে রয়েছে। পঞ্চায়েত সদস্য তাপস মাইতি বলেন, “রাজ্যে প্রথম বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়ার যে প্রকল্প জগদীশপুরেই শুরু হয় তা কয়েক দিন চলার পরে খারাপ হয়ে গেল। মেরামতির জন্য পঞ্চায়েতের তরফে বহু বার জেলা পরিষদ ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে জানানো হলেও কাজ হয়নি।” যদিও সেই সময় অধিকাংশ বাসিন্দাই দু’হাজার টাকা জমা রেখে মাসিক ৩০ টাকার বিনিময়ে জলের সংযোগ নেন। |
|
দীর্ঘ দিন বন্ধ জগদীশপুরের গভীর নলকূপটি। |
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভূস্তরে জলের সমস্যা থাকায় গভীর নলকূপটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তবে আরও একটি গভীর নলকূপ বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
গোবিন্দবাবু জানান, বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বাইগাছি ও দেবীরপাড়ায় দু’টি গভীর নলকূপ বসানো হয়। কিন্তু বাইগাছির নলকূপটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে বাসিন্দারা সেই জল ব্যবহার করেন না। ফলে গোটা জগদীশপুর পঞ্চায়েতে এই মুহূর্তে পানীয় জলের ভরসা রাস্তার ধারের নলকূপ ও ১৪৫টি হ্যান্ড টিউবওয়েল। কিন্তু নোনতা ভাব ও আয়রনের জন্য সে জলও ব্যবহারের অযোগ্য।
স্থানীয় সমীর বসুরায়চৌধুরী বলেন, “জগদীশপুরে পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হলে হাওড়ায় পদ্মপুকুর জলপ্রকল্পের মতো গঙ্গার জলের জলাধার চাই।” |
|
সম্প্রতি বাইগাছি এলাকায় প্রায় ১ কোটি ১৬ লক্ষ টাকার একটি জলপ্রকল্পের কাজ শুরু করেছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন: “বাইগাছি জলপ্রকল্প চালু হলে সমস্যা কিছুটা মিটবে।”
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের হাওড়া ডিভিশনের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সন্দীপ চৌধুরী বলেন, “জগদীশপুর এলাকায় নোনতা ভাব ও আয়রনের সমস্যা থাকায় সাবধানে বাইগাছিতে কাজ শুরু হয়েছে। আরও গভীর নলকূপের প্রস্তাব এলে ভেবে দেখা হবে।”
|
ছবি: রণজিৎ নন্দী |
|