সম্পাদকীয় ১...
ভবিষ্যমুখী উদ্যোগ
ভারত ও পাকিস্তানের মতো দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পক্ষে অতীতকে বিস্মৃত হইয়া কিংবা পিছনে ফেলিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটানো বড় সহজ কাজ নয়। উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদী বিভেদপন্থা, সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও রক্তস্নানের মধ্য দিয়া খণ্ডিত স্বাধীনতা প্রাপ্তির মধ্যে যে সাম্প্রতিক ইতিহাস নিহিত রহিয়াছে, তাহার জের সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা কোনও মতেই সম্ভব নয়। বিশেষত সেই ইতিহাস যদি আবার তিন-তিনটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ ও নিরন্তর ছোট-বড় সংঘর্ষের দ্বারাও জর্জরিত হইয়া থাকে। তথাপি যখন দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা গোষ্ঠীর মঞ্চে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী অতীতকে পিছনে রাখিয়া সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক গড়ার দিকে তাকাইতে চাহেন, সেই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাইতেই হয়। মনমোহন সিংহ ও ইউসুফ রাজা গিলানির মধ্যে শীর্ষবৈঠকের নির্ঘণ্ট সার্ক সম্মেলনে নির্ধারিত ছিল না। কিন্তু মৈত্রীর, নিদেনপক্ষে শত্রুতামুক্তির তাগিদ দুই রাষ্ট্রনায়ককেই মুখোমুখি বসিবার সুযোগ করিয়া দেয়। সেই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করিয়া উভয়েই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আস্থা ও ভরসার উপর স্থাপন করিতে চাহিয়াছেন।
এই সম্পর্কে সর্বাপেক্ষা ধারালো কাঁটাটি ছিল ২৬/১১-র মুম্বই হামলায় অভিযুক্তদের বিচার। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিক যখন ভারতীয় জেলে বন্দি পাক সন্ত্রাসবাদী আজমল কাসভের একমাত্র শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ডকেই শনাক্ত করিলেন ও পাক আদালতে বিচারাধীন অভিযুক্তদেরও দ্রুত বিচারের আশ্বাস দিলেন, বুঝা গেল, পাকিস্তান ভারতের সহিত সম্পর্কের উন্নতির সংকেত দিতে চাহিতেছে। ইতিমধ্যে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থাবর্ধক নানা পদক্ষেপ করার প্রক্রিয়াও চালু। ভারতের বিরোধী দল বিজেপি কিন্তু এই প্রক্রিয়াটিকে ঠিক দৃষ্টিভঙ্গি হইতে দেখিতে ব্যর্থ। ওই দলের নেতারা পাক প্রধানমন্ত্রী গিলানিকে ‘শান্তিকামী’ আখ্যা দেওয়ায় মনমোহন সিংহের সমালোচনা করিয়াছেন। তাঁহারা কি চাহেন, দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠক হইতে বাহির হইয়া মনমোহন পাক প্রধানমন্ত্রীকে ‘যুদ্ধবাজ’ আখ্যা দিবেন? সেটাই কি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সহিত কূটনীতির যথাযথ পরিভাষা হইত? জাতীয় বিরোধী দলের নেতৃত্বের কাছ হইতে দেশবাসী কিন্তু আরও দায়িত্বশীলতা, পরিণতবুদ্ধি ও সৌজন্য প্রত্যাশা করিয়া থাকেন। বিশেষত কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন থাকা কালে সেই দলের প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণীই যখন পাকিস্তানের সহিত সম্পর্কের উন্নতি ঘটাইতে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাইয়াছিলেন।
পাকিস্তান ভারতের মতো পরিণত গণতন্ত্র নয়। সেখানে সামরিক বাহিনী এবং তাহার গোয়েন্দা বিভাগ আই-এস-আই প্রায় সমান্তরাল কর্তৃত্ব চালাইয়া থাকে। জেহাদি জঙ্গিদের সহিত আই-এস-আই-র নিবিড় ঘনিষ্ঠতার কথা সুবিদিত। আবার ওই জঙ্গিদের একাংশই উপর্যুপরি সন্ত্রাসবাদী হানায় পাক জনজীবনকে জর্জরিত করিয়া মারিতেছে। এমনকী পাকিস্তানের শীর্ষ অসামরিক রাজনৈতিক কর্তারাও জেহাদি জঙ্গিদের লক্ষ্যবস্তু। পাক সরকার ও তাহার কণর্ধারদের পক্ষে ভারতের সহিত সুসম্পর্ক স্থাপনের মূল বাধাও আই-এস-আই পুষ্ট ওই সন্ত্রাসবাদীদের তরফেই আসিতেছে। এই চাপ উপেক্ষা করিয়া ভারতের সহিত সম্পর্কে শান্তির বাণী উচ্চারণ করা বড় সহজ কাজ নয়। বিশেষত যখন কাশ্মীরকে লইয়া সমগ্র পাক জনমতের আবেগ এত দিনের সযত্ন লালনে বৈধতা পাইয়া গিয়াছে। পাকিস্তানের সহিত সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক জন ভারতীয় রাজনীতিকের পক্ষে শান্তিকামী হওয়া যতটা সহজ, ভারতের সহিত সম্পর্কের ক্ষেত্রে পাক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শান্তিকামী ভাবমূর্তি ফেরি করা ততটাই কঠিন। বিজেপি নেতৃত্ব এই বৃহত্তর প্রেক্ষিতটি উপলব্ধি না করিয়া উগ্র জাত্যভিমানের সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতি অনুশীলন করিতেছে। তাহাদের উপেক্ষা করাই শ্রেয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.