ভিড়ের ঠেলায় নন্দনে গাড়ি থেকে নামতেই পারছিলেন না প্রসেনজিৎ। ‘আমরা-ওরা’-র ব্যবধান ঘুচিয়ে মৃণাল সেন এসেছিলেন নন্দন-চত্বরে সত্যজিৎ রায়ের তোলা স্থির চিত্রের প্রদর্শনী উদ্বোধনে। সেখানেও ধস্তাধস্তি অবস্থা। অধিকাংশের মতে, শুক্রবার কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের দ্বিতীয় দিনের এইসব খণ্ডচিত্রই বুঝিয়ে দিল, তাঁর সরকারের প্রথম চলচ্চিত্র উৎসবকে কার্যত ‘জনতার উৎসব’ করে তোলার যে লক্ষ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছিল, তা অনেকটাই সফল।
নন্দনের ঘেরাটোপ থেকে বার করে উৎসবকে সাধারণের নাগালের মধ্যে আনার এই কাজ অবশ্য শুরু হয়েছিল সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরের উদ্বোধনী আসর থেকে। ‘আমরা-ওরা’র দেওয়াল যে ভেঙেছে, সেটাও স্পষ্ট হয়েছে ওই সন্ধ্যায়।
কিন্তু আমন্ত্রণ পেয়েও বৃহস্পতিবার কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে যাননি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। বরং শুক্রবার মেট্রো সিনেমায় সিনে সেন্ট্রালের চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধন করতে গিয়ে ‘কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব’কে কার্যত খোঁচাও দিলেন। বললেন, “গতকাল যে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয়েছে, তার ভবিষ্যৎ শেষ অবধি কী হবে সেটা এখন যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের বিবেচ্য। আসুন, আমরা দেশবিদেশের সুস্থ রুচির, ভাল সিনেমা দেখার জন্য এই উৎসবকে এগিয়ে নিয়ে যাই”। গত ১৪ বছর ধরে সিনে সেন্ট্রালের এই উৎসব ‘ফোরাম ফর নিউ সিনেমা’ নামে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের অন্যতম অংশ। এ বারেও কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব থেকে তাদের ৬ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। |
সিনে সেন্ট্রালের উৎসব উদ্বোধনে রঞ্জিত মল্লিক ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার। ছবি: রাজীব বসু |
অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে হাজির ছিলেন কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান রঞ্জিত মল্লিক। দিন কয়েক আগেই তিনি ফোন করে সৌমিত্রকে চলচ্চিত্র উৎসবে যেতে অনুরোধ জানিয়েছেন। সৌমিত্রকে উদ্বোধনী মঞ্চে সংবর্ধনা নেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে ফোন করেছিলেন উৎসব কমিটির ডিরেক্টর জেনারেল এবং রাজ্য তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের বিশেষ সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী। তাঁর বাড়িতে উৎসবের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে যান কমিটির সদস্য হরনাথ চক্রবর্তী। তবু নিমন্ত্রণের ধরনটি সৌমিত্রের ‘পছন্দ হয়নি’। আর তাই তিনি যাননি। তাঁর কথা: “এটা তো সরকারি উৎসব। আমন্ত্রণ আসবে সরকারের থেকে। ফেস্টিভ্যাল কমিটির চেয়ারম্যান কেন?” তিনি নিজেও কমিটির চেয়ারম্যান থাকাকালীন কাউকে এ জাতীয় অনুরোধ করেননি বলে জানান সৌমিত্রবাবু।
কিন্তু বিভাগীয় সচিবের ফোন, উৎসব কমিটির চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত অনুরোধ ইত্যাদির পরেও আমন্ত্রণের রীতি আর কী হতে পারে, সেই বিস্মিত প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। ঘনিষ্ঠ মহলে সৌমিত্রবাবুর ক্ষোভ, তাঁকে উৎসবের একটিমাত্র কার্ড পাঠানো হয়েছে। যেটা তাঁর পক্ষে ‘অসম্মানজনক’। যদিও রঞ্জিতবাবু শুক্রবার সিনে সেন্ট্রালের অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফের সৌমিত্রবাবুকে অনুরোধ জানান, যাতে তিনি সময় করে এক বার চলচ্চিত্র উৎসবে আসেন।
এ দিকে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তৃণমূলের দুই সাংসদ তাপস পাল ও শতাব্দী রায়ের অনুপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তাঁরা দু’জনেই শু্যটিং থাকার কথা বলেছেন। দল কি এ জন্য ব্যবস্থা নিতে পারে? তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “এটা তো দলের কর্মসূচি নয়। দলের হুইপও ছিল না।”
উৎসব কমিটি জানিয়েছে, শিশির মঞ্চের নির্ধারিত ছবিগুলি দেখানো হবে প্রিয়া সিনেমায়।
অন্য দিকে, চলচ্চিত্র উৎসব নিয়ে ‘আমরা-ওরা’ ঘুচল বিধাননগরেও। শুক্রবার ১৭তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের ‘সল্টলেক চ্যাপ্টার’-এর আনুষ্ঠানিক সূচনা পর্বে তৃণমূল পরিচালিত বিধাননগর পুর-কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে বিধাননগর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিপিএমের বিশ্বজীবন মজুমদার প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। ছিলেন বর্তমান বিরোধী দলনেত্রী ইলা নন্দীও। বিশ্বজীবনবাবু পরে বলেন, “উৎসব কমিটি পর্যাপ্ত সম্মান দিয়েছে। রাজনৈতিক অবস্থান আলাদা হলেও এই ধরনের উৎসবে ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকে না।” চেয়ারপার্সন তৃণমূলের কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “উৎসব সকলের। সিপিএমের অনেকেই এসেছেন। উৎসবের দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছেন। এটাই আমাদের নেত্রীর শিক্ষা।” |