বিনোদন টিনটিনের হাত ধরেই এ দেশে
নয়া রেকর্ড গড়তে চায় হলিউড

গোলমুখো খুদে সাংবাদিকের মার নেই! প্রথম দিন থেকেই টিনটিন জাঁকিয়ে বসে গেল বাজারে!
তিব্বতে টিনটিন এবং ফারাওয়ের চুরুট কাহিনির সুবাদে এর আগে দু’বার ভারতের মাটিতে পা দিয়েছে টিনটিন। সেটা ছিল বইয়ের পাতায়। এ বার টিনটিনের আগমন স্টিভেন স্পিলবার্গের ছবিতে। স্পিলবার্গের নিজের দেশে আলো দেখার আগেই এ দেশে পা রাখল সে। আমেরিকায় টিনটিন রিলিজ করতে এখনও ছ’সপ্তাহ দেরি।
সোনি পিকচার্স ইন্ডিয়া সারা দেশে টুডি আর থ্রিডি মিলিয়ে ৩৮০টি হলে টিনটিন এনেছে। পশ্চিমবঙ্গে ছবিটি পরিবেশনা করেছে ওম মুভিজ। পরিবেশকদের পক্ষে দেবাশিস দে জানাচ্ছেন, কলকাতা ও শিলিগুড়িতে ১৪টি হলে মুক্তি পেয়েছে টিনটিন। তার মধ্যে পাঁচটিতে থ্রিডি। ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞদের মতে ‘‘অবতারে’র পর থ্রিডি-তে টিনটিনই শ্রেষ্ঠ ছবি।’’ এবং থ্রিডি-র এই জাদুই হলে টেনে নিয়ে এসেছে ষাটোর্দ্ধ কমলা সেনগুপ্ত, আইনজীবী অরুণাভ রায়দের। মেয়ে আরিয়াকে নিয়ে টিনটিনের ছবি দেখতে এসেছিলেন জ্যোতিন্দ্র সিংহ। তিনি বললেন, থ্রিডিতে টিনটিনের অ্যাডভেঞ্চারের মজাটাই যেন বেড়ে গিয়েছে কয়েকশো গুণ।
থ্রিডি-তে টিনটিন দেখা যদি আকর্ষণ মিটারে এক নম্বর হয়, তা হলে দু’নম্বরে আছে পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গের নাম। মুম্বই থেকে পরিচালক মধুর ভান্ডারকর বললেন, “আমি টিনটিন দেখব স্পিলবার্গের জন্য। ওঁর হাত থেকে কী সব ছবি বেরিয়েছে! ‘জস’, ‘ইটি’, ‘জুরাসিক পার্ক’, ‘শিন্ডলার্স লিস্ট’। এমন মানুষ যখন টিনটিন বানান, তখন সারা বিশ্ব অপেক্ষায় থাকে ছবিটার জন্য।” এলগিন রোডের মাল্টিপ্লেক্সে ছবি দেখতে আসা ভিড়টাও তো তাই-ই বলেছে। শগুনা অগ্রবাল, তিথি চট্টোপাধ্যায়, অর্ণব চৌধুরীরা সপ্তাহান্তের সন্ধ্যায় এই ছবিটা বেছেছেন স্পিলবার্গ-টিনটিনের যুগলবন্দির জন্যই তো!
কলকাতার একটি মাল্টিপ্লেক্সে পোস্টারের সামনে দুই টিনটিন-ভক্ত। ছবি: সুমন বল্লভ
ভারতীয় দর্শকের কাছে টিনটিন-স্পিলবার্গ জুটির আকর্ষণ কতটা হতে পারে, সে আন্দাজ পরিবেশকদেরও ছিল। হলিউডের কোনও অ্যানিমেটেড ছবি এর আগে এতগুলো প্রিন্ট নিয়ে ভারতে মুক্তি পায়নি। সোনি পিকচার্স ইন্ডিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর কারসি দারুওয়ালা বলেন, “আমরা চাই অ্যানিমেটেড ছবির মধ্যে টিনটিনই এ দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করুক।” এর আগে যে অ্যানিমেশন ছবিটি ভারতে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করেছিল, তার নাম ‘কুংফু পান্ডা ২’। ইন্ডাস্ট্রির মতে ২৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল সে। সেই রেকর্ডটাই ভাঙতে চাইছে টিনটিন।
ভারতে টিনটিনের ব্যবসা নিয়ে সোনি পিকচার্সের এই স্বপ্ন কিন্তু আকাশকুসুম নয়। প্রথমে বই। তার পর কার্টুন সিরিজে টিনটিনের তুমুল জনপ্রিয়তা। সারা বিশ্বে টিনটিনের অন্যতম বড় বাজার এ দেশে। সেই কারণে ইউরোপের পর ভারত ও এশিয়ার দেশগুলির উপরেই বাজি ধরছেন পরিবেশকরা। এক কর্তা বললেন, “টিনটিন নিয়ে মার্কিনদের তেমন আগ্রহ নেই। আমেরিকায় টিনটিনের বই ছাপাও হয় না। কার্টুন ছবি যা পাওয়া যায়, তার খুব একটা দর্শক নেই। সেই কারণেই আমেরিকায় ছবিটা দেরি করে মুক্তি পাচ্ছে।” বক্স-অফিস বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোনি এবং প্যারামাউন্ট পিকচার্স আসলে অন্যত্র ছবিটা রিলিজ করিয়ে আগেভাগে জল মাপতে চাইছে। কোথায় দর্শক কী রকম সাড়া দেন, সেটা দেখে নিয়ে আমেরিকায় প্রচারকৌশল ঠিক করা হবে। পরিবেশকরা নিজেরাই বলছেন, “ছবিটা আমেরিকায় স্পিলবার্গের ছবি হিসেবেই বাজারে নামবে। টিনটিনের ছবি বলে নয়। জানেন তো, স্পিলবার্গ নিজেই বলেছেন, এই ছবিটা দেখে তবে যদি আমেরিকায় টিনটিন ছাপা শুরু হয়!”
২২ অক্টোবর ইউরোপে মুক্তি পায় টিনটিন। বিশ্ব-প্রিমিয়ার হয় টিনটিনের পিতৃভূমি বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে। এখনও পর্যন্ত বেলজিয়াম, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনে খুবই ভাল ব্যবসা করেছে ছবিটি। কলকাতার প্রথম দিনের রিপোর্টও বলছে, টিনটিন-স্পিলবার্গ জুটির টানে দর্শক আপাতত সদলবলে হলমুখো! আনোয়ার শাহ রোডের একটি মাল্টিপ্লেক্সে বিকেল পর্যন্ত টিনটিনের ভাঁড়ারে প্রায় আশি শতাংশ ভরা হল। শনি-রবি হাউসফুল। সেখানকার মুখপাত্র বলছেন, “আগামী দু’-তিন সপ্তাহ এ রকমই থাকবে মনে হয়।”
কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও হলমালিক আর ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞরা একটা সাবধানবাণী দিচ্ছেন। এক মাল্টিপ্লেক্স কর্তার কথায়, “প্রথম দিন টিনটিন দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের বেশির ভাগই ৩০ বছরের ওপরে। অর্থাৎ যাঁরা ছোটবেলায় টিনটিন পড়ে বড় হয়েছেন। নতুন প্রজন্ম, কলেজ পড়ুয়ারা কিন্তু টিনটিন নিয়ে তেমন উৎসাহিত নয়। এ ব্যাপারটা বক্স অফিসে ছবির ভবিষ্যতকে খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত করবে!” আইনক্সের পঙ্কজ লাডিয়া জানালেন, টিনটিনের চেয়ে অনেক এগিয়েছিল হ্যারি পটার। আরও একটা কথা দিনভরই ঘুরেফিরে এসেছে ছবি দেখে বেরোনো ভিড়টার আনাচে-কানাচে। সৌরভ সান্যাল, জয়িতা কুণ্ডুরা বলেছেন, “তিনটে গল্প মিলিয়েমিশিয়ে ছবি তৈরি না করে একটা গল্পই যদি থাকত, মজাটা যেন আরও বেশি জমত!”
তবে টিনটিনকে ঘিরে সামগ্রিক ভাবে প্রথম দিনে যা চাঞ্চল্য, ক্যাপ্টেন হ্যাডক কলকাতায় থাকলে হয়তো বলেই ফেলতেন, “বিলিয়নস অফ ব্লু ব্লিস্টারিং বারনাকল্স!’’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.