মাওবাদী হামলার আশঙ্কায় এ বার বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে ছ’জন তৃণমূল নেতাকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী দিল প্রশাসন। যে ছ’জন দেহরক্ষী পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের সারেঙ্গা ব্লক সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ ঘোষ, রাইপুর ব্লক সভাপতি জগবন্ধু মাহাতো, রানিবাঁধ ব্লক সভাপতি সুনীল মণ্ডল। এ ছাড়াও রানিবাঁধের বাসিন্দা তথা তৃণমূলের তফসিলি জাতি-উপজাতি-ওবিসি সেলের জেলা সভাপতি গৌর টুডু ও তাঁর স্ত্রী বিভাবতী দেবীকে নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষী পেয়েছেন জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি শ্যামল সরকারও।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি মাওবাদীদের গতিবিধি জঙ্গলমহলে ফের বেড়েছে। এ বার তাঁদের ‘নিশানায়’ সিপিএমের পাশাপাসি তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও। রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়ায় ইতিমধ্যেই তিন জন তৃণমূলকর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠেছে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে। এই অবস্থায় বাঁকুড়ার মাওবাদী উপদ্রুত তিনটি ব্লকের তৃণমূল সভাপতি-সহ ৬ জনকে নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়েছে পুলিশের তরফে। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার এ প্রসঙ্গে অবশ্য বিশদে কিছু বলতে চাননি। তাঁর মন্তব্য, “নিরাপত্তার স্বার্থেই ওই তৃণমূল নেতাদের রক্ষী দেওয়া হয়েছে।”
জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, এই নিরাপত্তারক্ষী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে ‘উপরতলার’ নির্দেশে। এর বেশি কিছু তিনি বলতে চাননি। প্রথম পর্যায়ে শনিবার থেকে ছ’জনকে নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় রানিবাঁধ, সারেঙ্গা ও রাইপুরের আরও ছয় তৃণমূল নেতার নাম রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। পরে তাঁরাও নিরাপত্তারক্ষী পাবেন।
তবে এই নিরাপত্তারক্ষী দেওয়ার প্রেক্ষাপট অবশ্য রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বারবারই মাওবাদীদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি হিংসা বন্ধ না করলে ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেওয়ার বার্তা দিচ্ছেন। বলরামপুরে দলীয় কর্মী খুনের পরে তিনি যৌথ বাহিনীর অভিযান নতুন করে শুরু করার ব্যাপারেও স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন। সব মিলিয়ে মাওবাদী-তৃণমূল সংঘাত ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে। দলের এক জেলা নেতার দাবি, “মাওবাদীরা এখন নিশানা করছে জঙ্গলমহলে আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের। সেই জন্যই পুলিশ ঝুঁকি না নিয়ে কয়েক জন নেতাকে দেহরক্ষী দিয়েছে।” বাঁকুড়া জেলা গোয়েন্দা দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, মাওবাদীরা বর্তমান শাসক দলের নেতা-কর্মী ও প্রতিরোধ কমিটির (শান্তি কমিটি) নেতৃ স্থানীয়দের উপরে যে কোনও মুহূর্তে হামলা চালাতে পারে। সে কারণেই এই নিরাপত্তারক্ষী দেওয়ার সিদ্ধান্ত।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ১৯ মার্চ তৃণমূল নেতা ধীরেন্দ্রনাথ ঘোষের উপরে হামলা চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। একই ভাবে ওই বছর ২৩ জানুয়ারি দুষ্কৃতী হামলার শিকার হয়ে কোনও রকমে প্রাণে বেঁচেছিলেন তৃণমূল নেতা শ্যামল সরকার। বাকি যে চার জন নিরাপত্তারক্ষী পেয়েছেন, তাঁদের উপরে এর আগে কোনও হামলা হয়নি। শ্যামলবাবুর তাঁর উপরে হামলার পরে পরেই নিরাপত্তারক্ষী চেয়ে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদন অবশ্য তখন মঞ্জুর হয়নি। তার এতদিন পরে খাতড়ার বাসিন্দা শ্যামলবাবুর জন্য এক জন্য এক জন দেহরক্ষী দেওয়া হয়েছে। সুনীলবাবু, গৌরবাবু ও বিভাবতীদেবীও এক জন করে নিরাপত্তারক্ষী পেয়েছেন। তবে ধীরেন্দ্রনাথবাবু ও জগবন্ধুবাবুকে দু’জন করে দেহরক্ষী দিয়েছে পুলিশ।
এই তৃণমূল নেতারা জানিয়েছেন, তাঁরা কেউই ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী দেওয়ার জন্য পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেননি। শ্যামলবাবু বলেন, “প্রশাসন নিশ্চয় কিছু বুঝেছে। তাই আমাদের ছ’জনকে নিরাপত্তারক্ষী দিয়েছে। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।” রানিবাঁধের শিক্ষক-দম্পতি গৌরবাবু ও বিভাবতীদেবীর বক্তব্য, “কারা হামলার নিশানা আর কারা নয়, সেটা বলা মুশকিল। প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তারক্ষী দিয়েছে। আমরা নিয়েছি।” ধীরেন্দ্রনাথবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, “দুষ্কৃতীরা এর আগে আমাকে খুনের চেষ্টা করেছিল। এটা সবাই জানেন। তাই আমাকে দু’জন দেহরক্ষী দেওয়া হয়েছে।” |