তৃণমূলের হামলা যুব শিবিরে, ‘ক্ষুব্ধ’ কংগ্রেস
যুব কংগ্রেসের সাংগঠনিক প্রশিক্ষণ শিবির চলাকালীন হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রামে। কেন্দ্র এবং রাজ্যে একসঙ্গে জোট সরকারে থেকেও কেন তাঁদের বারবার তৃণমূলের হামলার শিকার হতে হবে, এই নিয়ে সাম্প্রতিক কালে সরব কংগ্রেস নেতৃত্ব। নয়াগ্রামে এ দিনের ঘটনায় স্বভাবতই দুই শরিকের মধ্যে ‘টানাপোড়েন’ তৈরি হয়েছে। যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভানেত্রী ও সাংসদ মৌসম বেনজির নূর জানিয়েছেন, দলের হাইকম্যান্ডের পাশাপাশি জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বিষয়টি জানানো হবে।
কংগ্রেসের অভিযোগ, তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত, ব্লক সাধারণ সম্পাদক অর্ধেন্দু পাত্র এবং ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি উৎপল সেনাপতির নেতৃত্বেই প্রশিক্ষণ শিবিরের হামলা হয়েছে। ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার গৌরব শর্মা বলেন, “এই ঘটনায় দু’জনকে আটক করা হয়েছে।” তৃণমূল নেতা উজ্জ্বলবাবু অবশ্য এই ঘটনার সঙ্গে তাঁদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা দাবি করেছেন, ‘সিপিএমের হার্মাদ’রা ওই সভায় ছিল বলে স্থানীয় মানুষই প্রতিবাদ করেছেন!
যুব কংগ্রেসের সংগঠন ঢেলে সাজতে বিধানসভা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ শিবির হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। নয়াগ্রাম থানার অদূরে কমিউনিটি হলে এ দিন শিবিরে উপস্থিত ছিলেন ব্লকের ৪২ জন যুব কংগ্রেস সদস্য। ছিলেন দিল্লি থেকে আগত সর্বভারতীয় যুব কংগ্রেসের দু’জন প্রশিক্ষকও। শিবির চলাকালীন সওয়া ১১টা নাগাদ আচমকাই কমিউনিটি হলে ঢুকে পড়েন নয়াগ্রামের কিছু তৃণমূল নেতা, সঙ্গে কয়েকশো দলীয় কর্মী। কংগ্রেসের বক্তব্য, কেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের অনুমতি না-নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবির করা হচ্ছে, তা জানতে চান উজ্জ্বলবাবুরা।
এর পরেই শুরু হয় তুমুল গণ্ডগোল। অভিযোগ, কমিউনিটি হলের জানলা-দরজা, চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করা হয়। বেধড়ক মারধর করা হয় যুব কংগ্রেস সদস্যদের। প্রহৃত হন ঝাড়গ্রাম লোকসভা যুব কংগ্রেসের সভাপতি কৌশিক মহাপাত্র, জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক তথা নয়াগ্রামের বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা বিপুল সিংহ। প্রশিক্ষণ শিবিরে আসা সর্বাণী মাইতি, প্রিয়াঙ্কা সিংহদেরও হেনস্থা করা হয়। মাত্র ১০০ মিটার দূরের নয়াগ্রাম থাকা থেকে পুলিশ আসে আধ ঘন্টা পরে। জখমদের পুলিশি পাহারায় স্থানীয় খড়িকামাথানি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার পরে যুব কংগ্রেসের তরফে তৃণমূলের ২৯ জন নেতা-কর্মীর নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি উজ্জ্বলবাবু, ব্লক সাধারণ সম্পাদক অর্ধেন্দুবাবু, তাঁর ভাই সুখেন্দু পাত্র, তৃণমূল নেতা বিজলি পাল, তাপস সরকার, ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি উৎপলবাবুর নাম। কৌশিকবাবু
বলেন, “এ দিন যেভাবে আমাদের উপরে হামলা চালানো হল, তা নজিরবিহীন। জনগণ সব দেখেছেন। বিচারের ভার জনগণের উপরেই ছাড়লাম।”
এই ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করে যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভানেত্রী মৌসম পুলিশের ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “হামলার খবর পেয়ে আমি জেলার পুলিশ সুপারকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। এর পরে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে ফোন করি। তাঁকে অনুরোধ করি, দিল্লি থেকে যে প্রশিক্ষকরা এসেছেন, তাঁদের উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য। কিন্তু পুলিশের সামনেই তৃণমূলের লোকেরা আমাদের কর্মীদের মারধর করে। এমনকী, মহিলাদেরও তারা রেহাই দেয়নি। পুলিশ নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।” মৌসম পুরো বিষয়টি কংগ্রেস হাইকম্যান্ডকে জানিয়েছেন। তাঁর আরও বক্তব্য, “আমি বিষয়টা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও জানাব। কারণ, আমরা একসঙ্গে কেন্দ্রে ও রাজ্যে জোট সরকার চালাচ্ছি। সেখানে দুই শরিকের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্মানজনক হওয়া উচিত।”
অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের উজ্জ্বলবাবু অবশ্য বলেন, “ঘটনার সঙ্গে আমাদের দলের কেউ জড়িত নন। স্থানীয় মানুষের প্রতিবাদের জেরেই এ ঘটনা ঘটেছে।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “কংগ্রেসের ওই সভায় সিপিএমের হার্মাদরা ছিল। যারা এক সময় এলাকায় অন্যায়-অত্যাচার করেছে। এর ফলেই স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। সিপিএমের নয়াগ্রাম জোনাল-সম্পাদক হিমাংশু ত্রিপাঠীর ছেলে সৌরভও ওই সভায় ছিলেন।” যুব কংগ্রেসের দাবি, সৌরভ ত্রিপাঠী যুব কংগ্রেসের সদস্য নন, তাঁর প্রশিক্ষণ শিবিরে থাকার প্রশ্নই ওঠে না। পক্ষান্তরে, তাঁর নিজের জেলায় এমন ঘটনায় রাজ্যের মন্ত্রী তথা প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি মানস ভুঁইয়াও ‘ক্ষুব্ধ’। জেলা কংগ্রেস সভাপতি স্বপন দুবের বক্তব্য, “পরিবর্তনের পরে একসঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সিপিএম আমলের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখে মানুষ আতঙ্কিত!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.