সম্পাদক সমীপেষু......
ঠাকুর ভাসান, আবেগ, অনুপ্রবেশ
প্রতি বছরের মতো এ বছরও বিজয়া দশমীর দিন উত্তর চব্বিশ পরগনার টাকিতে দুই বাংলার প্রতিমা নিরঞ্জন ও মিলনোৎসব দেখতে গিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হল। উপচে-পড়া ভিড়ে ট্রেনযাত্রা শেষে টাকি স্টেশনে নেমে দেখি, কাতারে কাতারে লোক ইছামতীর ঘাটের দিকে চলেছেন। পা-মিলিয়ে নদীর দিকে যেতে যেতে দেখি, উল্টো দিক থেকে বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে দলে দলে বাংলাদেশি পরিবার শহরে ঢুকছেন। রাস্তায় মাঝে মাঝেই কিছু লোক টাকা বদল করার জন্য হাঁক পাড়ছে। কোথাও কোথাও রিকশাভ্যান, প্রাইভেট কার এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে যে, জনস্রোত ধাক্কা খেয়ে এ-দিক ও-দিক ছিটকে পড়ছে। বেশ কয়েক জন ভাল রকম আহত হল, কোনও পুলিশ বা কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রাস্তায় চোখে পড়ল না। একেবারেই অরাজক অবস্থা। যাই হোক, ধাক্কা খেতে খেতে কোনও রকমে নদীর ঘাটে পৌঁছে দেখি, নদীতে নৌকার ভিড়ে নৌকাজট হওয়ার উপক্রম। তার মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে বড় বড় নৌকা এ-পারে আসছে আর সেগুলি থেকে প্রচুর লোক বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে নামছে। দেখে মনে হল, দুই বাংলার মিলনোৎসবের জন্য এই একটা দিন সীমান্ত খোলা থাকার সুযোগে পরিকল্পিত ভাবে এ দেশে অনুপ্রবেশ ঘটে চলেছে। কোনও পুলিশি নজরদারি চোখে পড়ল না। এর পর নৌকা করে ও-পারে পৌঁছালাম। ঘাট পেরিয়ে দেবহাটা গ্রামে ঢোকার মুখে দেখি, বেশ কয়েক জন বাংলাদেশি পুলিশ দাঁড়িয়ে। এক জন পুলিশ অফিসারকেও দেখলাম না, কাউকে কিছু বলছে। কিন্তু চোখ দিয়েই ভাল রকম পর্যবেক্ষণ করছে। আরও একটু এগিয়ে দেখি, বি ডি আর-এর কয়েক জন ফৌজি রাস্তায় দাঁড়িয়ে। তাঁদের আচরণও একই রকম। তবে প্রচুর বাংলাদেশি মানুষ এ-পার থেকে আসা লোকজনদের স্বাগত জানাচ্ছেন এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। আমার সঙ্গেও কয়েক জন বাংলাদেশির আলাপ হল। শুভেচ্ছা বিনিময় হল। তাঁদের আন্তরিকতায় মনটা ভরে গেল। ঘাটের দিকে ফেরার সময় সাহস করে কয়েক জন বাংলাদেশি পুলিশের সঙ্গে আলাপ করলাম। তাঁদের আন্তরিক কথাবার্তা খুব ভাল লাগল। ঘাটের কাছে এসে দেখি, শামিয়ানা খাটিয়ে দুই বাংলার মিলনোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে টাকির পুরপিতা এবং সাতক্ষীরার পুরপিতা-সহ বাংলাদেশের বেশ কয়েক জন প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি উপস্থিত। এ-পার থেকে নৌকা করে প্রচুর মানুষ ওই মিলনোৎসবে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখছেন। তাঁদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হচ্ছে। অবর্ণনীয় অভিজ্ঞতা।
এই সময় মাইকে ঘোষণা হল যে, একটি নৌকা উল্টে গেছে। উদ্ধারকারী দল যেন তাড়াতাড়ি সেখানে যায়। কিন্তু নদীতে এত নৌকা যে, উদ্ধারকারী দলের ঘটনাস্থলে পৌছানোই অসম্ভব। বেলা পড়ে আসছে। ফিরতি নৌকায় উঠে টাকির দিকে রওনা হলাম। নৌকা এগোতে থাকে। একটু দূরে একটা বাংলাদেশের পতাকা লাগানো নৌকা থেকে আমাদের নৌকায় একমুঠো লজেন্স ছুড়ে দেওয়া হল। মাঝনদীতে একটা বাংলাদেশি স্পিডবোট পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার ভিতরে থাকা সৈনিকরা হাত নাড়িয়ে শুভেচ্ছা জানালেন। নৌকা টাকির পাড়ে ভিড়লে ঘাটে নেমে স্টেশনের রাস্তা ধরলাম। ফেরার সময়ও সেই একই চিত্র। দলে দলে বাংলাদেশি মানুষ বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে শহরে ঢুকছেন। কোনও পুলিশি টহলদারি নেই, পুরো রাস্তাটাই অরক্ষিত। স্টেশনে দেখি, কাতারে কাতারে মানুষ। কোনও রকমে ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরলাম।
এখন কোনও কোনও মহল থেকে যখন বিজয়া দশমীর দিন এই মিলনোৎসব বন্ধ করে দেওয়ার আওয়াজ উঠছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আমার অভিমত হল, দুই বাংলার প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা একজোট হয়ে কিছু ব্যবস্থা নিলে এই মিলনোৎসব অনায়াসেই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। এগুলো হল:
১) অবাধ অনুপ্রবেশ রুখতে নদীর দুই পাড়েই পর্যাপ্ত পুলিশি প্রহরা রাখতে হবে।
২) নদীতে নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি নৌকা নামবে না।
৩) নৌকাগুলিতে যাত্রী তোলার সময় অতিরিক্ত লোক যাতে না-ওঠে এবং অনুপ্রবেশের উদ্দেশ্যে যাতে মালপত্র নিয়ে না-ওঠে, তার জন্য পর্যাপ্ত নজরদারি রাখতে হবে।
৪) টাকি চৌমাথা থেকে নদীর ঘাট পর্যন্ত দুপুরের পর থেকে যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে।
৫) টাকি চৌমাথা থেকে নদীর ঘাট পর্যন্ত যাওয়া ও ফেরার রাস্তা একমুখী করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নদীর ঘাট থেকে টাকির সরকারি মহাবিদ্যালয়ের পিছন দিয়ে যে রাস্তাটি চৌমাথার একটু আগে এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের আগে মূল রাস্তায় মিশেছে, সেই রাস্তাটি ফেরার রাস্তা হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬) স্টেশন থেকে নদীর ঘাট পর্যন্ত রাস্তায় বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল ক্যাম্প রাখতে হবে।
৭) বিজয়া দশমীর দিন শিয়ালদহ-হাসনাবাদ শাখায় অতিরিক্ত ট্রেন চালাতে হবে।
পরিশেষে অনুরোধ, ঠাকুর বিসর্জনকে কেন্দ্র করে দুই বাংলার সাধারণ মানুষ-সহ প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে যে উদ্দীপনা লক্ষ করেছি, অনুপ্রবেশের নামে তা যেন বন্ধ না হয়ে যায়।
স্মৃতিভ্রম!
কিংবদন্তি। সলিল চৌধুরী এবং (ডান দিকে) আশা ভোঁসলে
বড়চর্চা’ (রবিবাসরীয় ১৬-১০) অসীমকুমার বসু জানিয়েছেন, ১৯৯২ সালে নাগপুরে সলিল চৌধুরীর সঙ্গে এক আলাপচারিতায় তিনি জানতে চেয়েছিলেন, সলিল চৌধুরী আশা ভোঁসলেকে দিয়ে কোনও গান করাননি কেন? উত্তরে সলিল চৌধুরী কিছুক্ষণ ভেবে মৃদু হেসে বলেছিলেন, আপনি বোধহয় ঠিকই বলেছেন। আশাকে দিয়ে কোনও গান করিয়েছি কি না, মনে পড়ছে না।
সলিল চৌধুরীর এমন স্মৃতিবিভ্রমের কথা জেনে অবাক হতে হচ্ছে। ভাবছি, সে দিন তিনি কি মজা করে এমন উত্তর দিয়েছিলেন।
সলিল চৌধুরী সুরারোপিত প্রায় ৭৫টি হিন্দি ছবিতে মহিলা কণ্ঠের সিংহভাগ গানই গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। তবে বেশ কিছু ছবিতে তিনি আশা ভোঁসলেকে দিয়েও গান করিয়েছেন। আমানত (১৯৫৫), পরিবার (১৯৫৬), জাগতে রহো (১৯৫৬), অপরাধী কৌন (১৯৫৭), এক গাঁও কী কাহানি (১৯৫৭), জমানা (১৯৫৭), মায়া (১৯৬১), পুনম কী রাত (১৯৬৫), চন্দা ঔর সুরজ (১৯৬৫), পিঞ্জরে কী পঞ্ছি (১৯৬৬), ছোটি সি বাত (১৯৭৫), জীবন জ্যোতি (১৯৭৬), মিনু (১৯৭৭), রুম নম্বর ২০৩ (১৯৮০), অগ্নিপরীক্ষা (১৯৮১), তৃষাগ্নি (১৯৮৮), আখরি বদলা (১৯৮৯) প্রভৃতি ছবিতে সলিল চৌধুরীর সুরে আশা ভোঁসলে অন্তত তিরিশটি গান গেয়েছেন।
‘অপরাধী কৌন’ ছবিতে আশার গাওয়া ‘মেরা দিল দিল দিল...’ গানটি ‘ক্যাবারে সং’ হিসেবে খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। ‘চন্দা ঔর সুরজ’ ছবির ‘বাগ মেঁ কলি খিলি বাগিয়াঁ মহকি’ গানটি সলিল চৌধুরীর অত্যন্ত প্রিয় কম্পোজিশন (বাংলা ভার্সান ‘যা রে যা আমার আশার ফুল ভেসে যা’, শিল্পী সবিতা চৌধুরী)। ‘ছোটি সি বাত’ ছবিতে আশা ও যেসুদাসের কণ্ঠে ‘জানে মন জানে মন তেরে দো নয়ন’ গানটি খুবই হিট হয়েছিল। (বাংলা ভার্সান, প্রজাপতি প্রজাপতি আমার ইচ্ছে...’, শিল্পী-সবিতা চৌধুরী)।
তুলনায় সলিল চৌধুরীর সুরে আশার গাওয়া বাংলা গানের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকটি। যে ৪০টি বাংলা ছবিতে সলিল চৌধুরী সংগীত পরিচালনা করেছেন, তার মধ্যে মাত্র চারটি ‘পাড়ি’ (১৯৬৬), ‘পরবেশ’ (১৯৮০), ‘স্বর্ণতৃষ্ণা’ (১৯৯০) ও ‘সেই সময়’ (১৯৯৪) ছবিতে আশার মোট পাঁচটি গান আছে। তবে সলিল চৌধুরীর সুরে আশা ভোঁসলের কোনও ‘বেসিক’ (নন-ফিল্ম) গান নেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.