মাওবাদী এলাকায় লগ্নির বাড়তি ঝুঁকি ‘পুষিয়ে দিতে’ রাজ্যের কাছে অতিরিক্ত সুবিধা চায় শিল্পমহল। তাদের দাবি, জঙ্গলমহলের মতো মাওবাদী অঞ্চলে শিল্প গড়ায় পরিকাঠামোর অভাবই একমাত্র সমস্যা নয়। তার সঙ্গে রয়েছে ওই ধরনের অশান্ত এলাকায় লগ্নির অতিরিক্ত ঝুঁকিও। তাই সেখানে লগ্নি টানতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে বাড়তি আর্থিক বা অন্যান্য সুবিধা দেওয়া জরুরি বলে মনে করছে তারা।
রাজ্যে আর্থিক বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশের উপরে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে বণিকসভা অ্যাসোচ্যাম। সোমবার সেই সুপারিশ সম্বলিত রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানেই এই অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব আনেন বণিকসভাটির সেক্রেটারি জেনারেল ডি এস রাওয়াত। তাঁর কথায়, “মাওবাদী এলাকায় লগ্নি টানতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। কারণ, একমাত্র অতিরিক্ত সুবিধা পেলে, তবেই এ ধরনের এলাকায় লগ্নির বাড়তি ঝুঁকি নিতে রাজি হবেন লগ্নিকারী।”
এ প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, “শিল্পের জন্য রাজ্যের যে আর্থিক সুবিধা নীতি রয়েছে, তাতে জঙ্গলমহলের মতো অনুন্নত এলাকায় (‘ডি’ তালিকাভুক্ত) করা লগ্নিতে এমনিতেই বাড়তি সুবিধা মেলে। তবে এর বাইরে আরও কোনও প্রস্তাব তাঁরা দিলে তা খতিয়ে দেখা হবে।” তবে সরকারি সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে কোষাগারের যা বেহাল দশা, তাতে নতুন করে আর্থিক সুবিধা দেওয়া রাজ্যের পক্ষে কার্যত অসম্ভব। বিশেষত যেখানে জঙ্গলমহলকে ‘ডি’ তালিকাভুক্ত করে ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। তাই এখন সেখানে কোনও লগ্নি প্রস্তাব এলে, আরও আর্থিক সুবিধার পরিবর্তে অন্যান্য সুযোগ দেওয়ারই পক্ষপাতী শিল্প দফতর।
বন্দুকের বদলে বিনিয়োগ। পিছিয়ে পড়া জঙ্গলমহলের ক্ষোভ প্রশমনে এই লগ্নি-দাওয়াই প্রয়োগের পরিকল্পনা শুরুতেই ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এর সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই শিল্প নীতিতে একেবারে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের তালিকায় (‘ডি’) জঙ্গলমহলকে অন্তর্ভুক্ত করেছে রাজ্য। যাতে সেখানে বিনিয়োগ করলে, বেশি ‘ইনসেনটিভ’ বা আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি।
সম্প্রতি পানাগড়ে নয়া কারখানা গড়তে প্রায় ৩,৫০০ কোটি টাকা লগ্নির প্রস্তাব দিয়েছে হিন্দুস্তান ন্যাশনাল গ্লাস। কিন্তু ওই কারখানা জঙ্গলমহলে তৈরির জন্য কাচ ও কাচের বোতল নির্মাতা সংস্থাটিকে অনুরোধ করেছে রাজ্য। লক্ষ্য লগ্নি টেনে সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি। কিন্তু তার জন্য আরও অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা দেওয়া কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে বলেই সরকারি সূত্রে দাবি। তবে সেখানে লগ্নি করলে, নিরাপত্তার যে অভাব হবে না, তা অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন পার্থবাবু।
অন্য দিকে, শিল্পের জন্য সরাসরি জমি কেনা নিয়ে আপত্তি না-থাকলেও, খুব দ্রুত জমি নীতি তৈরি করা জরুরি বলে মত অ্যাসোচ্যামের। বণিকসভার প্রেসিডেন্ট দিলীপ মোদী বলেন, “অধিগ্রহণ না-করলেও, জমি কেনার ক্ষেত্রে জট কাটিয়ে আলোচনার পথ সুগম করতে অবশ্যই উদ্যোগী হতে পারে রাজ্য।” এ দিন ছোট-মাঝারি শিল্প ও বস্ত্রমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার সঙ্গেও বৈঠক করে অ্যাসোচ্যামের পূর্বাঞ্চলের সহকারী চেয়ারম্যান সূর্য নন্দী জানান, ছোট-মাঝারি শিল্পের পাশাপাশি বস্ত্রশিল্পের পুনরুজ্জীবনে বণিকসভাকেও উদ্যোগী হতে বলেছেন মানসবাবু। মাস কয়েকের মধ্যে এ নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করবে অ্যাসোচ্যাম। |