এসএসকেএম
চাহিদা প্রচুর, তবু পড়ে ‘বাড়তি’ ভেন্টিলেটর
রকারি হাসপাতালে ‘ভেন্টিলেটর’ নাকি খুব মহার্ঘ বস্তু! হাসপাতালের কর্তারাই স্বীকার করেন, বরাতজোর না-থাকলে ভেন্টিলেটর পাওয়া অসম্ভব। অথচ, রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি এসএসকেএম হাসপাতালে এই মুহূর্তে তিনটি ভেন্টিলেটর এবং পাঁচটি শয্যা অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে স্রেফ ‘অভিভাবক’-এর অভাবে। ‘অভিভাবক’ অর্থাৎ, যে বিভাগ ওই সরঞ্জাম এবং শয্যার দায়িত্ব নেবে। নিউরোসার্জারি এবং অ্যানাস্থেশিওলজি বিভাগের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ বারবার বৈঠকে বসছেন। আর বারবারই তা ভেস্তে যাচ্ছে। চিকিৎসকের অভাব দেখিয়ে কোনও বিভাগই আর ‘বাড়তি’ দায়িত্ব নিতে চাইছে না বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ। অসংখ্য সঙ্কটজনক রোগীকে অনিশ্চয়তায় ফেলা এই চাপান-উতোর কবে শেষ হবে, তার কোনও জবাবও নেই কারও কাছে।
এসএসকেএম তথা ‘ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ (আইপিজিএমইআর)-এর অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেছেন, “সমস্ত স্তরেই চেষ্টা চলছে। আশা করছি, অল্প কিছু দিনেই একটি সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসবে।”
কিন্তু এত বড় একটি হাসপাতালে ভেন্টিলেটর আর শয্যা ‘বাড়তি’ হল কী ভাবে? হাসপাতাল সূত্রের খবর, এই ভেন্টিলেটর এবং শয্যাগুলি আদতে পুরনো আইটিইউ-র অংশ। ৩০টি শয্যার নতুন আইটিইউ চালু হওয়ার পরে পুরনো শয্যা ও ভেন্টিলেটরগুলি আগের জায়গাতেই থেকে গিয়েছে। এই মুহূর্তে সেগুলির দায়িত্ব নেওয়ার কেউ নেই। হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, “আশ্চর্যের ব্যাপার হল, ওই শয্যাগুলির অদূরেই হেড ইনজু্যুরি কেয়ার ইউনিট (হিকু)। সেখানে এই মুহূর্তে তিনটি মাত্র শয্যা এবং কার্যত কোনও পরিকাঠামোই নেই। ফলে, মাথায় গুরুতর চোট নিয়ে কোনও রোগী যদি হাসপাতালে আসেন এবং তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখার প্রয়োজন হয়, তা হলে অন্যত্র ‘রেফার’ করা ছাড়া কর্তৃপক্ষের কাছে অন্য কোনও পথ খোলা থাকে না। তবুও সেখানকার চিকিৎসকেরা ওই ভেন্টিলেটর নিচ্ছেন না।” শুধু তা-ই নয়, নিউরোসার্জারি বিভাগে অস্ত্রোপচারের পরে ভেন্টিলেটর প্রয়োজন হলে চিকিৎসকেরা হাত তুলে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, চাহিদার তুলনায় ভেন্টিলেটর এতই কম যে, তাঁরা চেষ্টা করেও তা জোগাড় করতে পারবেন না। এর ফলে প্রায়ই এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরে রোগীর মৃত্যুর খবর আসছে।
সম্প্রতি বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে এক যুবককে ভর্তি করানোর আশায় এসএসকেএমে এসে বসেছিল তাঁর পরিবার। পথ-দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ওই যুবককে এলাকার লোকজন ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। নিম্নবিত্ত পরিবারের পক্ষে ওই বিপুল খরচ বহন করা সম্ভব না হওয়ায় তাঁরা ধর্না দেন এসএসকেএমে। ভেন্টিলেটর মেলেনি। অপেক্ষারত অবস্থাতেই মৃত্যু হয়েছিল ওই যুবকের। তার পরেও টনক নড়েনি হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের।
চিকিৎসকদের অনেকের মতে, নিউরোসার্জারি বিভাগ এ বিষয়ে একটু উদ্যোগী হলে ওই ভেন্টিলেটরগুলি রোগীদের কাজে লাগত। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই বিভাগ জানিয়েছে, তাদের এমনিতেই চিকিৎসক নেই। এই বাড়তি চাপ নিতে পারবে না তারা। কিন্তু, এটি ‘বাড়তি’ দায়িত্ব হিসেবে না দেখে কেন হেড ইনজ্যুরি বিভাগের পরিকাঠামো উন্নয়নের অংশ হিসেবে দেখছেন না? বিভাগীয় প্রধান সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।”
এ দিকে, মাসখানেক আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে যে আইটিইউ চালু হয়েছিল, এখন মাত্র ১০টি শয্যা নিয়ে তা চলছে। এসএসকেএমে বহু আগে থেকেই পাঁচ শয্যার আইটিইউ ছিল, তা হলে বেড়েছে মাত্র পাঁচটি। সে ক্ষেত্রে ৩০টি শয্যার আইটিইউ চালুর ঘোষণা হল কেন? কর্তৃপক্ষ জানান, চিকিৎসকের প্রবল ঘাটতি। ১০টি শয্যা চালাতেই নাভিশ্বাস উঠছে। এখনই আরও ন’জন চিকিৎসক, ৩৫ জন নার্স, ১৫ জন টেকনোলজিস্ট, ১৬ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী এবং ১২ জন সাফাইকর্মী পাওয়া না গেলে বেশি দিন সঠিক পরিষেবা দেওয়া যাবে না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.