|
|
|
|
সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন |
সুব্রত গুহ • কাঁথি |
যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে কাঁথি-৩ ব্লকের প্রাচীন জনপদ বাহিরির পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি নষ্ট হতে বসেছে। অথচ, এক সময়ে সমৃদ্ধ এই জনপদের ধ্বংসাবশেষের গুরুত্ব অসীম। পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসাবে পরিত্যক্ত দেবদেউলের গুরুত্বও কম নয়। স্থানীয় উদ্যোগে একটি সংগ্রহশালা রয়েছে গ্রামে। কিন্তু প্রশাসনিক কোনও উদ্যোগ নেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি ঠিক ভাবে সংরক্ষণের জন্য বহু বার প্রশাসনে আবেদন জানালেও লাভ হয়নি।
দিঘা-কলকাতা সড়কে মারিশদা বাসস্টপেজ থেকে পূর্ব দিকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে বিস্মৃত জনপদ বাহিরি। কাঁথি-৩ ব্লকের এই গ্রাম এক সময়ে জলাভূমি পরিবেষ্টিত ছিল বলে প্রাচীন রচনা থেকে জানা যায়। ইতিহাসবিদদের মতে, এক সময়ে দণ্ডভুক্তি প্রদেশের অংশবিশেষ ছিল এই বাহিরি। সমুদ্রের উপকূলে অবস্থিত না হলেও কোন এক নদীর কূলেই গড়ে উঠেছিল এই জনপদ। প্রাচীন একটি তেঁতুল গাছ যা এলাকায় ‘জাহাজ বাঁধা তেঁতুলগাছ’ নামে পরিচিত, তা এক সময়ের নদীপথের স্মৃতি বহন করে আসছে আজও। |
|
জগন্নাথদেবের পরিত্যক্ত দেউল। —নিজস্ব চিত্র। |
বাহিরি গ্রামে আজও রয়েছে জগন্নাথদেবের পরিত্যক্ত দেউল। মন্দিরটির দু’টি ভাগমূল দেউল ও জগমোহন। দু’টি ভাগের মধ্যে যাতায়াতের জন্যে একটি ছোট ঘর রয়েছে। ইটের তৈরি মূল দেউলটির উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট, চওড়ায় প্রায় ২৪ ফুট। জগমোহন-এর উচ্চতা প্রায় ৪০ ফুট, চওড়ায় ১৭ ফুট। ভীমসাগর, লোহিতসাগর ও হেমসাগর নামে তিনটি বড় দিঘি ছিল। বর্তমানে একমাত্র ভীমসাগর দিঘির অস্তিত্ব রয়েছে। দেউলের মধ্যে পাওয়া শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৫৮৪ খ্রিষ্ঠাব্দে পদ্মনাভ দাসের পুত্র বিভীষণ দাস এই দেউল তৈরি করেন। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ইতিহাসবিদদের মতে, রসিকমঙ্গল কাব্যে উল্লিখিত হিজলি মণ্ডলের বিভীষণ মহাপাত্রই শিলালিপিতে লেখা বিভীষণ দাস মহাপাত্র।
বাহিরি জগন্নাথ সেবাইত সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক ও সদস্য রাজদুলাল নন্দের কথায়, ‘‘দেউল আর তিনটি দিঘি নিয়ে নানা লোককথার প্রচলন আছে এলাকায়।” বাহিরিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে একটি সংগ্রহশালা রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন সময় মাটি খুঁড়ে পাওয়া নানা মূর্তি, পোড়ামাটির খেলনা, হাতি, চাকার গাড়ি, মাটির পাত্র সংরক্ষিত আছে। ইতিহাসবিদদের মতে, কুষাণ, গুপ্ত ও পাল বংশের রাজত্বকালে শিল্পসৃষ্টিতে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল বাহিরি। এখান থেকেই পাওয়া প্রাচীন একটি পাথরের মূর্তি আজও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালায় রয়েছে। তবে প্রাচীন গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনগুলির অধিকাংশই, যা বাহিরির অতীত কৌলীন্যের পরিচয় বহন করে, তা সংরক্ষণে উদাসীন প্রশাসন। রাজদুলাল নন্দের অভিযোগ, “বাহিরি জগন্নাথ সেবায়েত সমিতি ও গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে দেউল ও প্রাচীন নিদর্শনগুলি সংরক্ষণের জন্য বহু বার সরকারি দফতরে আবেদন জানালেও কাজ হয়নি।” কাঁথির মহকুমাশাসক সুমিত গুপ্ত’র অবশ্য আশ্বাস, “আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি ভাল ভাবে জানতাম না। বিডিও-র সঙ্গে আলোচনা করব। নিজে বাহিরি গ্রাম পরিদর্শনেও যাব। মন্দির ও অন্য পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণে আমার পক্ষে যতটা যা করা সম্ভব, করব।” |
|
|
|
|
|