তিন পয়েন্ট এনে দিলেন দিন্দা-ইরেশ
ক পেসারের পুনর্জন্ম। এক স্পিনারের আবির্ভাব। রঞ্জি ট্রফির প্রথম ম্যাচের শেষে রবিবার স্কোরকার্ড দেখাচ্ছে বাংলার ঘরে তিন পয়েন্ট। কিন্তু তার পাশাপাশি এই দুটোও ঢুকে পড়ছে বাংলার প্রাপ্তির তালিকায়।
পেসার অবশ্যই অশোক দিন্দা। গত মরসুমে তাঁর নামের পাশে ছিল মাত্র ১৩টা উইকেট। সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিল কালীঘাটে সতীর্থদের ঘিরে জোরালো বিতর্ক। যার জন্য সিএবি-র পক্ষ থেকে দিন্দার সঙ্গে আলাদা করে কথাও বলা হয়েছিল। তাঁকে বোঝানো হয়েছিল মাথা ঠান্ডা রেখে খেলতে। সব মিলিয়ে এমন একটা মরসুম যেটাকে নিশ্চয়ই খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যেতে চাইবেন নৈছনপুরের পেসার। আর সেই ভুলে যাওয়ার চেষ্টায় তাঁকে অনেকটাই সাহায্য করবে রবিবারের ইডেনে তাঁর আগুনে বোলিং। গুজরাতের তিন নম্বরে নামা রিকিন চৌহান-কে ফিরিয়ে দিনের শুরুতে প্রথম ব্রেক থ্রু রণদেব বসু দিলেন ঠিকই। কিন্তু তার পরের ওভারেই নীরজ পটেল-কে বোল্ড করে দিনের ‘মুড’টা সেট করে দেন দিন্দা-ই।
এ দিনও অবশ্য একটা সময় উইকেট আসছিল না। ইরেশ সাক্সেনাকে দিয়ে টানা ‘রাউন্ড দ্য উইকেট’ বল করাচ্ছিলেন অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি। সেই সময় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কিছু বলে আসেন অধিনায়ককে। সম্ভবত তিনি ‘নেগেটিভ’ বোলিং করাতে বারণ করেন। পরে শোনা যায়, বাংলা কোচ রামনও ড্রেসিংরুম থেকে ‘নেগেটিভ’ বোলিং না করানোর নির্দেশ পাঠান বাংলা অধিনায়ককে। তার পর ঠিক বোঝা না গেলেও সৌরভকে দেখা গেল মোটামুটি প্রায় পুরো সময়টা বাউন্ডারির ধারে ফিল্ডিং করে কাটিয়ে দিতে।
অধিনায়ক মনোজের অভিনন্দন দিন্দাকে। পাশে আর এক নায়ক ইরেশ। রবিবার ইডেনে। ছবি: উৎপল সরকার
ম্যাচের টার্নিং পয়েন্টটা এল দিন্দার ওভারে। লাঞ্চের একটু পরে। দ্বিতীয় স্পেলে একই ওভারে এক বলের ব্যবধানে প্রথরেশ পারমার এবং সানি পটেলের উইকেট তুলে নিলেন দিন্দা। ততক্ষণে বাংলার তিন পয়েন্ট পাওয়ার মেঘাচ্ছন্ন আকাশেও ঝলমলে রোদ উঠে গিয়েছে। বিপক্ষের এগারো নম্বর ব্যাটসম্যানের স্টাম্প ছিটকে দিয়ে বাংলাকে শেষ বাধাটাও পার করিয়ে দিলেন দিন্দা। এক-একটা উইকেট নেওয়ার পরে শোয়েব আখতারের কথা মনে পড়িয়ে দেওয়া এরোপ্লেনের ভঙ্গিতে দু’হাত ছড়িয়ে দিন্দার দৌড় দেখে মনে হচ্ছিল, গত মরসুমের সব হতাশা ঝেড়ে ফেলে নতুন শুরুর জন্য তৈরি তিনি। ৩৫.২ ওভারের মধ্যে সাতটা মেডেন। ৮৭ রান দিয়ে চার উইকেট। বাংলার বোলিংকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন দিন্দা। যে গুজরাত আগের দিন হেসেখেলে তিনশোর উপর রান তুলে দিয়েছিল, তারাই আজ গুটিয়ে গেল মাত্র ১৮০ রান যোগ করে।
ম্যাচ শেষে দিন্দার কথা আলাদা করে বলে গেলেন বাংলার কোচ থেকে গুজরাত অধিনায়ক। নিজের রিপোর্ট কার্ডে দিন্দাকে একশোয় একশো দিয়ে গেলেন ডব্লিউ ভি রামন। “এই পাটা উইকেটে দিন্দা যে ভাবে বল করল, অসাধারণ। ওকে ফুল মার্কস দেব।” আর পার্থিব পটেল বললেন, এক ওভারে দিন্দার দুটো উইকেটই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিল। “উইকেটে বোলারদের জন্য কিছুই ছিল না। সেখানে দিন্দা নিজেকে নিংড়ে দিয়ে বল করছিল। ওর এক ওভারে দু’টো উইকেটের জন্যই ম্যাচের শেষে আমরা এই অবস্থায়!”
দিন্দা যদি রবিবারের সফল সেনাপতি হন, তবে এ দিন বাংলা বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে লড়াকু যোদ্ধা ইরেশ সাক্সেনা। কালীঘাট ক্লাবে দিন্দার সতীর্থ বাঁ-হাতি স্পিনার বুঝিয়ে দিলেন, বাংলার স্পিন আক্রমণের নেতা হওয়ার মশলা তাঁর মধ্যে আছে। এগারোটা মেডেন-সহ ৫৩ ওভার বল করে ১৪২ রান দিয়ে তিনটে উইকেট নিলেন ইরেশ। শনিবার বিকেলে ক্রিজে জমে যাওয়া প্রিয়াঙ্ক পাঞ্চালকে ফিরিয়ে তৃতীয় দিনের শেষে বাংলা শিবিরকে খানিকটা স্বস্তি দিয়েছিলেন তিনি। এ দিন পরপর দু’ওভারে গুজরাতের আট এবং ন’নম্বর ব্যাটসম্যানের স্টাম্প উড়িয়ে দিয়ে দিন্দার উপর চাপটা অনেক কমিয়ে দিলেন ইরেশ-ই। দিন্দার মতোই অসাধারণ বোলিং হিসেব হয়তো নয় ইরেশেরও। কিন্তু ম্যাচের পরিস্থিতি বিচারে দু’জনেরটাই বেশ কার্যকর।
কথায় আছে, ‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’। বাংলার রঞ্জি অভিযানের সকালটাও ভালই হল। দেখা যাক, বাকিটা কেমন যায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলা: ৫৬০-৬ ডিঃ।
গুজরাত: ৪৯৫ (পার্থিব ১৪৩, প্রিয়াঙ্ক ১৩৯, ভাবিক ঠাকের ৫৭, দিন্দা ৪-৮৭, ইরেশ ৩-১৪২, রণদেব ২-৮৪)।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.