মোহনবাগান তিনে, ইস্টবেঙ্গল পাঁচে
পাঁচ গোলের শাপমুক্তি পাঁচ গোলেই
৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে যাওয়ার আগে ভারতীয় ফুটবল দলের শিবির ছিল কলকাতায়। এক দিন অনুশীলনের শেষে কোচ রহিম একটি চিরকুট দিয়েছিলেন ফরোয়ার্ড হাবিবুল হামিদকে। যাঁর দুর্বলতা ছিল ‘অফ দ্য বল’ ফুটবলে। চিরকুটে লেখা ছিল, “গেন্দ সে খেলনা নেহি মুস্কিল/গেন্দ বিনা খেলকর জারা দেখো।”
সে রকম কোনও চিরকুট শনিবার রহিম নবির হাতে সুব্রত ভট্টাচার্য দেননি। কিন্তু বল ছাড়া নবি প্রথম যে দৌড়টা মুম্বই এফসি-র বক্সে রাখলেন তাতেই গোল। একবার নয়, এ রকম দৌড় ছিল বারবার। ডান দিক দিয়ে নবি আর বাঁ দিকে হাদসন লিমা এ মরসুমের সেরা ম্যাচটি খেললেন। হাদসনের নিখুঁত ক্রসেই হেড করলেন নবি। এই গোলটাতেই আত্মবিশ্বাস পেয়ে গেল মোহনবাগান।
অসাধারণ খেললেন জুয়েল রাজা-ও। মাঝমাঠের পুরো দায়িত্বটাই যেন ছিল তাঁর কাঁধে। সুনীলকে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ দেওয়া হল। যে পুরস্কারটা জুয়েল বা নবিকেও দেওয়া যেত। সুনীলের দু’টি গোলের মধ্যে প্রথমটি আদর্শ স্ট্রাইকারের সুযোগসন্ধানী মনোভাব বুঝিয়ে দেয়। ডাইরেক্ট ফ্রি-কিকে বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে শট নিয়েছিলেন সুনীল। মুম্বই গোলকিপার নিধিন লাল তখন একটি পোস্ট ঘেঁষে ওয়াল সাজাচ্ছেন। ২০০৪-এ আর্সেনালের হয়ে
সুনীল ছেত্রী: জোড়া গোল।
থিয়েরি অঁরিও ঠিক একই রকম গোল করেছিলেন চেলসির বিরুদ্ধে। জন টেরিদের প্রতিবাদে কান পাতেননি ইপিএলের রেফারিও। আর নিধিন গোয়ার রেফারি ফ্রান্সিসকো ফার্নান্ডেজকে যে ভাবে ধাক্কা দিলেন তাতে নিশ্চিত লাল কার্ড হয়। দু’নম্বর গোলটি দুর্দান্ত হেডে করলেও সুনীল অবশ্য বেশ কিছু সহজ শট মিস-ও করলেন। জিততে না পারলে যেগুলো মাথাব্যথা শুরু করে দিত সুব্রত-প্রশান্তর।
রাতারাতি কী হল মোহনবাগান ডিফেন্সের যাতে ৯৩ মিনিট পর্যন্ত গোল না খেয়ে থাকল? আসলে ডিফেন্সের চার পজিশনেই অলক্ষ্যে খেলছিলেন সুব্রত ভট্টাচার্য। ক্রমাগত চেঁচিয়ে যাচ্ছিলেন দলজিৎ, রাকেশ, কিংশুক, সৌরভদের উদ্দেশে। কিংশুকও এই আই লিগের সেরা ম্যাচ খেললেন রবিবার। রাকেশ, দলজিৎদের ব্লকিং বেশ ভাল হয়েছে। স্লাইডিং ট্যাকলেও পরিণতি দেখিয়েছে সবাই। এ দিনই কলকাতায় রাতে অস্ট্রেলীয় স্টপার বাগানে ট্রায়াল দিতে ঢুকে পড়াতে কি রাকেশ মাসিদের খেলায় এত পরিবর্তন! মাঝমাঠে মণীশ বেশ কয়েক বার রুখে দিয়েছেন সুকোরে, কাট্টিমণিদের।
মুম্বই এফসি তুলনায় ছিল একদমই নেতানো একটা টিম। যারা কী ভাবে খেলবে বুঝেই উঠতে পারল না। প্রথমে রিজার্ভে রাখলেও মুম্বই কোচ খালিদ জামিল বিরতির আগেই নামিয়ে দেন অভিষেক যাদবকে। বড় চেহারা নিয়ে যিনি বক্সের আশপাশে ঘুরে বেড়ালেন। সুবিধা করতে পারেননি ফ্রাইডে, সুকোরেরাও। শেষ বেলায় যে ফাউলের জন্য রেফারি পেনাল্টিটা দিলেন সেটাও সংগ্রামের দাবি, “আমার সঙ্গে টাচ-ই হয়নি।”
জনা তিরিশেক প্রবাসী বাঙালি এসেছিলেন মোহনবাগানকে সমর্থন করতে। ম্যাচের পর যাঁরা সুব্রতর ছবিও তুলছিলেন। আর আর্জি জানাচ্ছিলেন ইস্টবেঙ্গলকেও এ ভাবে হারানোর। সুব্রত অবশ্য গোলের সংখ্যাকে গুরুত্ব না দিয়ে বলে গেলেন, “তিন পয়েন্ট পাওয়াটাই বেশি দরকার ছিল।” মাঠ ছাড়ার সময় নবির মন্তব্য, “এক মন, এক প্রাণ হয়ে খেলাতেই বড় ব্যবধানে জয়। টিডি তো সেটাই করেছেন।” আর কর্তারা কী করেছেন? মোহন-সচিব কলকাতায় এ দিন ঘোষণা করেন, পুণেতে যাওয়া গোটা দলের প্রত্যেককে এক হাজার টাকা করে ইনসেনটিভ দেওয়া হবে।
ডিফেন্ডারদের তৎপর থাকা, চমৎকার প্রেসিং ফুটবল, আর কয়েক জনের ব্যক্তিগত নৈপুণ্যেই গোয়ার ‘পাপের ‘শাপমুক্তি’ ঘটল পুণের মাঠে। বাকি ২২ ম্যাচে এই পারফরম্যান্স ধরে রাখাটাই এখন সুব্রতর বাগানের চ্যালেঞ্জ।

মোহনবাগান: সংগ্রাম, সৌরভ, কিংশুক, রাকেশ, দলজিৎ, নবি, জুয়েল, মণীশ, হাদসন, অসীম, সুনীল।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.