মোহনবাগান তিনে, ইস্টবেঙ্গল পাঁচে
পাহাড়ি ছেলে দিয়েই পাহাড় জয় ইস্টবেঙ্গলের
পাহাড়ি ‘বিষ’ দিয়েই পাহাড়ি বিছে মারলেন ট্রেভর মর্গ্যান।
আঠাশ গজ দূর থেকে সঞ্জু প্রধানের বিশ্বমানের তীব্র শটটা যখন আছড়ে পড়ল, তখন বিপক্ষ দশ জনে খেলছে। কেউটে বা গোখরো যে ভাবে ফণা তুলে ছোবলটা মারে, সে ভাবেই বলটা নিচু থেকে উঁচু হয়ে লাজং-পোস্ট ছুঁয়ে গোলে ঢুকে বিষ উগরে দিল যেন।
কোনও বড় ফর্মুলার অঙ্ক নয়। গাও-প্রীতিও দেখাননি। পাহাড়ি লাজংয়ের দৌড় থামাতে নিজের দলের পাহাড়ি ছেলেদেরই ঠেলে দিয়েছিলেন মর্গ্যান। সঞ্জু, নওবা, ভাসুম, নির্মল, রবার্টদলের পাঁচ ফুটবলারকে নামিয়ে দিলেন একসঙ্গে। লড়াইটা তখন যেন লাজংয়ের আট বনাম ইস্টবেঙ্গলের পাঁচের। পঁচিশ মিনিটে লাজংয়ের রালতে লালকার্ড দেখে বেরিয়ে যাওয়ার পর যা দাঁড়াল পাঁচ বনাম সাতে।
যুবভারতীতে সন্ধ্যা সাতটায় খেলা। কুয়াশা ঘন হচ্ছে। শীত শীত আমেজ। মেঘালয়ে বেশিরভাগ সময় অনেকটা এ রকম আবহাওয়া পান প্রদ্যুম রেড্ডির ছেলেরা। ভাবা গিয়েছিল, লাজংয়ের বিখ্যাত গতি যুবভারতীতে মশালের আলো জ্বালানোর পথে বাধা সৃষ্টি করবে। সেটা যে তারা করেনি তা নয়, বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের পাল্টা গতির ঝাপ্টা তাদের দমিয়ে দিয়েছে মাঝেমধ্যেই। টোলগে বা পেনরা ফাঁকা গোলে বল ঠেলতে ব্যর্থ না হলে, খাবরা-বলজিৎরা সহজ সুযোগগুলো নষ্ট না করলে হাজার পনেরোর গ্যালারির টেনশনের হৃদকম্পন অনেক আগে থেমে যেত। মর্গ্যান অবশ্য ম্যাচের শেষে বললেন, “গোল সংখ্যাটা বড় নয়। তিন পয়েন্ট আর জেতাটাই বড় ব্যাপার।”
দুই গোলদাতার নাচ। যুবভারতীতে ওপারা ও সঞ্জু। ছবি: উৎপল সরকার
পাল্টা গতির হাউইতে চড়ে মর্গ্যান ফিরতে চেয়েছিলেন তাঁর লাল-হলুদ জমানার শুরুর দিকে। যে সময় দু’টো উইংয়ে সরে যেতেন টোলগে, রবিন বা বলজিৎরা। মাঝখানে গতি বাড়িয়ে ঝটকা দিতেন পেন। গোল আসত সহজেই। কিন্তু সেই রামও নেই, সেই অযোধ্যাও নেই। টোলগের সেই ঝাঁকুনিটা তো এ মরসুমে শুরু থেকেই উধাও। বলজিৎ-ও অফ ফর্মে। রবিনের কথা যত কম বলা যায় ততই ভাল। বোহেমিয়ান জীবনে অভ্যস্ত রবিন ফটোগ্রাফারদের ছবির পোজ দিতে যত আগ্রহী, তার সামান্যতম যদি মাঠে নিজের খেলায় দেখাতেন! আর মর্গ্যানের প্রিয় অ্যালান গাওয়ের সঙ্গে টিমে ঢোকার মানসিক যুদ্ধ করতে করতে পেনও যেন কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছেন। এক বার তাঁর পা থেকে সোনার পাস বেরোচ্ছে তো পরক্ষণেই ভুল পাস করছেন। নওবা-ভাসুমের সেই বিখ্যাত জোটেও কেমন যেন ফাটল। উজ্জ্বল দেখাল সঞ্জু, ওপারা-সহ নামমাত্র কয়েক জনকে। আর মর্গ্যানের টিমের সেট পিস? এ দিন মাঠে থাকলে অমল দত্ত নিশ্চয়ই মন্তব্য করতেন, “ধুস, এদের মনে হয় প্র্যাক্টিসই হয় না।”
লাজং কোচের ভয়ানক রাগ কলকাতার ক্লাবগুলোর উপর। শনিবার থেকেই তিনি নানা ঝামেলা শুরু করেছিলেন। সংগঠকদের গালাগালি থেকে লোকাল ম্যানেজারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার কিছুই বাদ রাখেননি। এ দিন ড্রেসিংরুমে ঢুকে টিমকে স্ট্র্যাটেজি বোঝানোর জন্য ‘সাদা বোর্ড’ না পেয়ে তিনি ধাক্কাধাক্কি করেন আইএফএ-র লোকেদের। মাঠেও বেশ ক’বার চতুর্থ রেফারির দিকে তেড়ে গেলেন। জলের বোতলেও লাথি মারেন। কোচের বিশৃঙ্খল আচরণের প্রভাব পড়েছিল হয়তো শিলংয়ের টিমটার উপর। পুরো ম্যাচে লাজং সেই অর্থে তাই কখনও ম্যাচের রাশ ধরতে পারেনি। জনি, ক্রিস্টোফার-জেনিথদের কৃতিত্ব একটাইপঁয়ষট্টি মিনিট দশজনে খেলেও তাঁরা লড়ে গেছেন সমান তালে। ইস্টবেঙ্গল যেখানে তাদের গোলের মালা পরিয়ে দিতে পারত, ফিটনেস আর অকুতোভয় মনোভাবের জন্য সেটাই আটকে থাকল ২-০-তে। তা-ও ওপারা ইনজুরি টাইমে গোলটা করলেন বলে।

ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, নওবা, ওপারা, নির্মল, রবার্ট, সঞ্জু (পাইতে), পেন, খাবরা, ভাসুম, বলজিৎ (রবিন), টোলগে (গাও)।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.