ভাত-ডালের দিন ছিল, তার প্রতিভূরাই জ্বলজ্বল করলেন
লজ্জ না হয়েই মেনে নিচ্ছি চোখটা পরিষ্কার লেগে গিয়েছিল। রোববার দুপুরের সাড়ে তিনটে বলে কথা। তার মধ্যে এই ভাতঘুমের অনবদ্য ক্রিকেট।
কাঁচা ঘুমটা গোরস্থানগামী হল হঠাৎ প্রেস বক্সের চিৎকারে। কী, না দিনের একমাত্র সেঞ্চুরি পার্টনারশিপটা এখুনি ভাঙল। টিভি রিপ্লে যা দেখাল, থার্ড আম্পায়ারের মঞ্চে প্রবেশ না ঘটলেও চলত! ধোনি যখন বেল সরিয়ে নিয়েছেন ক্রেইগ ব্রাথওয়েট পপিং ক্রিজের অনেক বাইরে। ভারত অধিনায়কের সম্ভাব্য সঙ্কটের বিপন্মুক্তি ঘটলেও চলতি সিরিজে যাঁরা বাংলা ভাষায় ম্যাচ লিখবেন, তাঁদের বিপত্তির এই সূত্রপাত। ব্রাথওয়েটকে এ বার থেকে তুমি লেখা হবে? না আপনি?
এ দিনের কোটলায় যিনি নিজের তেইশতম আন্তর্জাতিক মরসুম শুরু করলেন। সেই সচিন তেন্ডুলকর যখন ইডেনে হিরো কাপ জেতাচ্ছেন, তখন বার্বেডোজের সেন্ট মাইকেলে জন্ম এই নতুন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ওপেনারের। বয়সটা ধরা গেল? আঠারো! যত দূর আবছা মনে পড়ছে আনন্দবাজারে ঠিক এই বয়সে সচিন ‘তুমি’ থেকে ‘আপনি’-তে স্থানান্তরিত হন। ব্রাথওয়েটও ধরা যাক আপনি। যদিও স্কুলবয় সদৃশ মুখ আর শীর্ণকায় চেহারার সঙ্গে সম্বোধনটা একেবারেই যাচ্ছে না। যাক গে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুটো হাফসেঞ্চুরি হয়ে গেল ব্রাথওয়েটের। আঠারো বছরে দুটো টেস্ট হাফসেঞ্চুরি এমন রেকর্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট ইতিহাসে আর মাত্র একটা আছে। কার আছে জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেলাম। প্রথম দিনের শেষে বরঞ্চ মনে হচ্ছিল করার মতো প্রশ্ন রয়েছে সচিনকে। ব্রাথওয়েটকে টুকটুক করে খেলতে দেখে কি নিজের টেস্ট শৈশব মনে পড়ছিল? প্রশ্ন নম্বর দুই, শিবনারায়ণ চন্দ্রপলের সেঞ্চুরি পূর্ণ হতে কি একবারও মনে হল, ঠিক এই জিনিসটাই তো গত ক’মাস ধরে নিজের জন্য অর্ডার দিয়ে রেখেছি। কিছুতেই কাছে আসছে না।
কোটলায় চন্দ্রপল: পুরনো ঘরানার টেস্ট ব্যাটিংয়ের বিজ্ঞাপন।
দিনশেষে টিভি কভারেজে একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ করা গেল। যেন তিনি ভারত অধিনায়ক এবং অবসাদগ্রস্ত হয়ে রয়েছেন এমন মেজাজে স্টুডিওয় বসা সঞ্জয় মঞ্জরেকর প্রশ্ন করলেন মাঠে দাঁড়ানো ভাষ্যকার রবি শাস্ত্রীকে।
“আরে রবি, একটা কথা বল। এই চন্দ্রপলকে আউট করা হবে কী করে!”
ছোট এই প্রশ্নটার ক্যাপসুলেই ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ উদ্বোধনী দিনের ক্রিকেট জমা রয়েছে। আর সিরিজটা ঠিক কোন দুটো দেশের মধ্যে হচ্ছে সেটাও পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। দু’টো দেশ ভুলে যান। ওটা আইসিসি-র খাতায়। আমাদের কোনও প্রয়োজন নেই। সিরিজের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হল ভারতীয় স্পিনার বনাম চন্দ্রপল।
কা’কে তুলনা হিসেবে ধরব? আশির মিয়াঁদাদ। যাঁর সামনে পড়লেই ভারত কাঁপত! চন্দ্রপল অবশ্য আরও আনঅর্থডক্স। স্টান্স, দাঁড়ানো, স্ট্রোকপ্লে কোনওটাতে পুঁজিবাদ নেই। কমিউনিজমও নেই। বাহবা দেওয়া উচিত তাঁর কোচকে। যিনি বিকৃত ওই স্টান্স দেখেও শিক্ষার্থীকে ছাঁচে ফেলার চেষ্টা করেননি। বুঝেছেন, যে স্টান্সে সাফল্যের সুযোগ সবচেয়ে বেশি সেটাই আদর্শ। আর সেই বিচারটা যার যার নিজের। আজ নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ৭টা সেঞ্চুরি হয়ে গেল তাঁর। ভিভ এবং সোবার্স বাদ দিয়ে ভারতের বিপক্ষে এত সফল আর কেউ নন। তাঁদেরও ঘাড়ে কিনা চন্দ্রপল নিঃশ্বাস ফেলছেন। তফাত মাত্র একটা সেঞ্চুরির।
টেস্ট ক্রিকেটে সাধারণ ভাবে এক-একটা দিন এক-এক রকম ভাবে যায়। কোনও দিন স্ট্র্যাটেজির। কোনও দিন স্ট্রোক প্লে-র পোলাও-বিরিয়ানির। কোনও দিন আবার শান্তিপূর্ণ অথচ উপকারী ডাল-ভাতের। রবিবার যেমন ডাল-ভাত আর তার প্রবক্তাদের দিন ছিল। দুপুরে একটা সময় রান হচ্ছিল ওভার পিছু দুই করে। টি-টোয়েন্টি আর স্টিভ জোবসের আবাহন করে আনা উন্নত প্রযুক্তির যুগে কার রুচি আছে বসে বসে এই ডাল-ভাতের সংগ্রাম দেখবে!
কিন্তু চন্দ্রপলদের দিক থেকে নিরুপায় মনোভাব। প্রথম ইনিংসটা অন্তত সাড়ে তিনশো পর্যন্ত টানতে না পারলে ভারত অবশ্যাম্ভাবী ম্যাচ ধরে ফেলবে। পুরনো ঘরানার টেস্ট ব্যাটিংয়ের সতর্ক ‘মোড’ তাই আজ টস জিতে ব্যবহার করতেই হত।
ব্রাথওয়েটকে স্টাম্পড করে কিরমানির রেকর্ড ভাঙলেন ধোনি।
কোটলা পিচ খুব প্রত্যাশা মতোই নিরাশ করতে পেরেছে। দ্বিতীয় ওভার থেকেই হাঁটুর সমান উচ্চতায় কিপারের কাছে বল যাচ্ছে। প্রায় নিচু হচ্ছে। পেসারকেও মাঝেমধ্যে নিল-ডাউন হয়ে প্রায় খেলতে হচ্ছে। কেন কোটলা পিচে বাউন্সের ব্যবস্থা করা হল না। বিশেষ করে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যেই ভারত যেখানে বাউন্সের দেশে টেস্ট সিরিজ খেলতে যাচ্ছে। উত্তরে ডিডিসিএ-র কর্তা প্রাক্তন কিপার সুরিন্দর খন্না বললেন, “বেঙ্কট সুন্দরমের শর্ট বোলিং খেলা মনে আছে? একদম ম্যানেজ করতে পারত না। সে যখন পিচের দায়িত্ব পেয়েছে, কী করে পিচে বাউন্স থাকে!”
জনশ্রুতি অবশ্য ধোনির নির্দেশে ঘাস-টাস ছেঁটে পিচকে এমন ন্যাড়া আর ভিতু ভিতু করে ফেলা হয়েছে। সকালে মাঠে ঢোকার সময় যখন প্রত্যেকের ওয়ালেট থেকে নিরাপত্তারক্ষীরা যাবতীয় খুচরো পয়সা বাজেয়াপ্ত করে নিলেন (ওটাকে নাকি প্লেয়ারদের দিকে ছোড়ার সম্ভাব্য অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে), তখন মনে হল টসের কয়েনটা কি তা হলে বিশেষ অনুমতি নিয়ে মাঠে ঢুকল?
সে নাহয় জানা গেল দিল্লির বড় খেলার মাঠে খুচরে পয়সা নিয়ে মাঠে ঢোকা নিষিদ্ধ হয়েছে। ভবিষ্যতেও মানিব্যাগে রাখা যাবে না। কিন্তু টস না জেতায় ধোনির চিরাচরিত প্রিয় ছক বিঘ্নিত হল আরও বেশি। তাঁর বরাবরের বক্স অফিস সফল স্ক্রিপ্ট: প্রথম ব্যাট করে পাঁচশো চাপিয়ে দাও। তার পর ওদের টার্নারে ফ্যালো। সিরিজে প্রথম দিন টস হারলে ভারতীয় উইকেটে সব সময় ‘প্ল্যান বি’ কাজ করে না। তাই প্রজ্ঞান ওঝা প্রথম দিনের উইকেটে এত ভাল বল না করলে ধোনির অস্বস্তি আরও বাড়ত।
সোমবারের টিম চাহিদায় সচিনেরও আগে সহবাগ। দ্রুত পোলাও-কালিয়ার চাহিদা। প্রজ্ঞান তুলনায় একেবারেই ডাল-ভাতের মেনু। আর ধোনিতাঁর ব্যাটিং যতই মুখরোচক খাদ্য হোক কিপিং কোনও দিনই অভিজাত মহলে স্বীকৃত নয়। সংসারে নীরব উপস্থিতির মতো আছে, আছে। সেই ধোনির কিপিং শিকারসংখ্যায় এ দিন দু’শোতে পৌঁছে গেল। নিঃশব্দে একটা মাইলফলক তৈরি করে ফেললেন ভারতীয় ক্রিকেটে। কিপার হিসেবে তাঁর চেয়ে অনেক বেশি আদৃত, অনেক বেশি অভিজাত সৈয়দ কিরমানির ৮৮ টেস্টে ১৯৮ শিকার। ধোনি কিনা ২৬ টেস্ট কম খেলে তাঁকে টপকে গেলেন। মনে রাখতে হবে কিরমানির জন্য কপিল দেবের আউটসুইঙ্গারগুলো ছিল। ধোনি সে ভাবে কোনও পেস বোলারকে নাগাড়ে পাননি। তবু মাত্র ছয় বছরে দুশোতে চলে গেলেন! কেউ বুঝলই না। জানলই না।

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

কোটলার স্কোর

ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস
ব্রাথওয়েট স্টাঃ ধোনি বো প্রজ্ঞান ৬৩
পাওয়েল এলবিডব্লিউ প্রজ্ঞান ১৪
এডওয়ার্ডস ক ও বো প্রজ্ঞান ১৫
ব্রাভো বো অশ্বিন ১২, চন্দ্রপল ব্যাটিং ১১১
স্যামুয়েলস ক ধোনি বো অশ্বিন ১৫
বাও ব্যাটিং ১৯
অতিরিক্ত
মোট ২৫৬-৫।
পতন: ২৫, ৪৫, ৭২, ১৮০, ২০০।
বোলিং: ইশান্ত ১৮-৪-৫৮-০, উমেশ ১৬-৫-৪৮-০, প্রজ্ঞান ২৯-৮-৫৮-৩,
অশ্বিন ২৫-৩-৭৯-২, সহবাগ ২-০-৫-০, যুবরাজ ১-০-২-০।

এক নম্বরে ধোনি
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রাথওয়েটকে স্টাম্পড করে কিরমানিকে
টপকে ভারতের এক নম্বর কিপার হয়ে গেলেন ধোনি।
নাম টেস্ট শিকার
ধোনি ৬২ ২০০
কিরমানি ৮৮ ১৯৮
মোরে ৪৯ ১৩০




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.