এবার আর বিচ্ছিন্ন ভাবে নয়। চয়নপাড়া থেকে শিলিগুড়ি পুরসভার ভাগাড় হঠাতে ‘সচেতনতা জাগরণ কমিটি’ গড়ে জোট বাঁধলেন বাসিন্দারা। সাধারণ গ্রামবাসীরা তো বটেই, জোটে সামিল হয়েছেন স্কুল-কলেজের ছাত্র শিক্ষকরাও। রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভাগাড়ের সামনে ক্যাম্প করে পথসভা করে ওই কমিটির তরফে প্রতিবাদ জানানো হয়। ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন নিয়ে কয়েক কিলোমিটার র্যালিও করেন বাসিন্দারা। সেখানে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা যোগ দেন। র্যালিটি চয়নপাড়া থেকে শুরু হয়ে ইস্টার্ন বাইপাস হয়ে সেবক রোড, ডন বসকো রোড হয়ে ফের চয়নপাড়াতে গিয়ে শেষ হয়। কমিটির সম্পাদক সুজিত বিশ্বাস বলেন, “আমাদের এই এলাকার মানুষদের বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। বার বার অভিযোগ জানিয়ে কোনও লাভ হয়নি। এবারে সবাই মিলে আন্দোলনে নেমেছি। ভাগাড় না সরানো পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন চলবে।” |
এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, ওই এলাকায় চয়নপাড়া ছাড়াও জ্যোতিনগর, বৈকুন্ঠপল্লি, ফাঁপড়ি এলাকা রয়েছে। প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ সেখানে বসবাস করেন। এ ছাড়া ১৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিদিন কয়েক হাজার ছেলেমেয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যান। উন্মুক্ত আকাশের নিচে প্রায় ২৮ একর জমির উপরের ওই ভাগাড় সবার জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। দুর্গন্ধ এবং আবর্জনা থেকে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে প্রত্যেকটি এলাকায়। বাসিন্দারা দাবি করেন, এলাকায় শিশুরা ভাগাড়ের জন্য অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গরুর দুধও দুর্গন্ধ হচ্ছে। মশা ও মাছির উপদ্রব বেড়ে চলার পাশাপাশি পাখির সংখ্যা ক্রমশ কমছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। সেখানকার একমাত্র নদীতে সাহু দূষিত হয়ে পড়েছে বলেও অভিযোগ। সাহু নদীতে মলমূত্রে সঙ্গে চিকিৎসা বর্জ্য ফেলা হয় বলেও অভিযোগ। বৈকুন্ঠপল্লির বাসিন্দা সহদেব সরকার বলেন, “বাড়িতে দুর্গন্ধে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘরের ভেতর আমরা ধূপকাঠি জ্বালিয়ে থাকি। আর মশা ও মাছির সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। এই অবস্থার জেরে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আগে যে পরিমান পাখি আমরা দেখতাম তা এখনও দেখা যায় না।” জ্যোতিনগরের বাসিন্দা শান্তনু পাল জানান, তাঁর ছেলে ভাগাড় সংলগ্ন একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করেন। |
তিনি বলেন, “স্কুলের ভেতরেও দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। স্কুলের ছাত্ররা প্রচণ্ড অসুবিধের মধ্যে পড়েছে। ছেলে স্কুল থেকে এসে সে সব জানায়। আমরা বাড়িতেও তা কিছুটা অনুভব করি। কুকুর-পাখি পচা মাছ, মাংসের হাড় নিয়ে গিয়ে বাড়িতে ফেলে রাখে।” প্রধাননগরের সোমা মিত্রও আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। তিনি জানান, তাঁর ছেলে ওই এলাকায় একটি ইংরেজি মাধাম স্কুলের ছাত্র। প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে দুর্গন্ধ আর মশা, মাছির কথা জানায়। তিনি বলেন, “ছেলের জন্য টিফিনবক্সে খাবার দিই। ছেলে যখন বাড়িতে ফেরে সেই বক্সে মাছি মরে পড়ে থাকতে দেখি। এরকম বহুবার দেখেছি। ছেলের মুখে দূর্গন্ধের কথা শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। বড়সড় কোনও রোগ ওই জীবাণু থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কেউ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না দেখে আন্দোলনে সামিল হয়েছি।” জ্যোতিনগরের আরেক বাসিন্দা দেবী মংরাঠী বলেন, “বাম আমল থেকেই নেতারা আসেন আশ্বাস দেন চলে যান। কিন্তু ভাগাড় সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। শুধু মানুষ নয়, পাখিরাও নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। খাবারের খোঁজে ভাগাড়ে বসছে পাখির দল। সেখান থেকেই জীবীণু নিয়ে ফিরছে তারা।” শিলিগুড়ি পুরসভার তরফে মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত জানিয়েছেন, ভাগাড় সমস্যার স্থায়ী সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। |