ট্রেনে কাটা পড়ে হাতির মৃত্যু বন্ধ হচ্ছে না ডুয়ার্সে। এ ধরনের দুর্ঘটনার পরে বন দফতর ও রেলের চাপান-উতোরের ‘ঐতিহ্য’ও অব্যাহত।
ডুয়ার্সের জলদাপাড়া বনাঞ্চল লাগোয়া মাদারিহাটে শনিবার সন্ধ্যায় গুয়াহাটি থেকে রাঁচিগামী এক্সপ্রেসের ধাক্কায় প্রায় ১৫ বছর বয়সী একটি হাতি মারা যায়। ২০০৪ সালে শিলিগুড়ি জংশন-আলিপুরদুয়ার লাইনটি ব্রডগেজ হওয়ার পরে এই নিয়ে ৩৩টি হাতির মৃত্যু হল ট্রেনের ধাক্কায়। রবিবার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পরে বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন দাবি করেন, “লাইনের উপরে হাতি রয়েছে বলে শনিবার রাতে রেলকে সতর্ক করা হয়েছিল। বন-কর্তারা আমাকে তেমনই জানিয়েছেন। শুক্রবার থেকে এই রুটে প্রচুর ট্রেন চলছে। কখন ট্রেন আসবে তা জানাতে পারছেন না কেউ। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করব। কারও গাফিলতি থাকলে, মেনে নেওয়া হবে না।” |
এনজেপি-নিউ কোচবিহার মেন লাইনে সিগনালিং ব্যবস্থার মেরামতির চলায় ৩ নভেম্বর থেকে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল বহু ট্রেন শিলিগুড়ি জংশন-আলিপুরদুয়ার রুটে চালাচ্ছে। দিনে গড়ে ১০ জোড়া ট্রেন চলার কথা, চলছে ২৫ জোড়া। বন দফতরের অনুমান, ট্রেন চলাচলে সময়ের ফারাক ও অতিরিক্ত ট্রেন চলার কারণেই মূলত শনিবার দুর্ঘটনা ঘটেছে। যদিও উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের এক কর্তা দাবি করেন, যে এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটি হাতির ‘করিডর’ বলে চিহ্নিত নয়। সেই জন্য ট্রেন স্বাভাবিক গতিতে যাচ্ছিল। হঠাৎ চালক ইঞ্জিনের পাশে হাতি দেখে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি।
স্থানীয় সূত্রের খবর, মাদারিহাটে জঙ্গলের পাশে গ্রামের জমিতে ধান পেকেছে। শনিবার জলদাপাড়ার ১৫টি হাতি ধান খেতে ঢুকলে গ্রামবাসীরা তাড়া করেন। হাতিরা রেললাইন পেরিয়ে জঙ্গলে ঢুকছিল। সেই সময়েই ট্রেন আসে। দুর্ঘটনার পরে প্রায় আধ ঘণ্টা মৃত হাতিটিকে ঘিরে চিৎকার করে বুনো হাতির পাল। বনকর্মীরা তাদের তাড়িয়ে দেহটি লাইন থেকে সরান ।ময়না-তদন্তের পরে রবিবার সন্ধ্যায় রাজাভাতখাওয়ায় হাতিটিকে দাহ করেন বনকর্মীরা। বনমন্ত্রী এ দিন দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর পরে স্থানীয় বাসিন্দারা বনকর্মী ও অফিসারদের উপরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। স্থানীয় বাসিন্দা বিমল শর্মা, সুশীল দাসদের অভিযোগ, হাতি তাড়ানোর জন্য বনকর্মীরা ঠিক সময়ে পৌঁছননি। বনকর্মীদের নজরদারি না থাকায় এ ধরনের ‘অনভিপ্রেত’ ঘটনা ঘটেছে। এ প্রসঙ্গে মুখ্য বনপাল (উত্তরবঙ্গ) রবীন্দ্র কৃষ্ণমূর্তি বলেন, “সেই সময়ে বনকর্মীরা সাপ উদ্ধারে গিয়েছিলেন। এখন বনাঞ্চলে ৬০০ হাতি রয়েছে। হাতি তাড়তে ৯টি এলিফ্যান্ট স্কোয়াড কাজ করছে। কয়েক মাস আগে সংখ্যাটি ১৬ করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।” বনমন্ত্রীর আশ্বাস, এক সপ্তাহের মধ্যে কোচবিহারে নতুন ডিএফও নিয়োগ-সহ দিল্লিতে রেল ও বন দফতরের বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রেল লাইন সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর ওয়াচ টাওয়ার ও আলোর ব্যবস্থা করা হবে। সে কাজ দু’-তিন মাসেই হয়ে যাবে। |